নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ ফেব্রুয়ারি৷৷ রবিবার ২৯২ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে৷ রবিবাসরীয় দিনে জনাদেশ পরিবর্তন নাকি
প্রত্যাবর্তনের পক্ষে তা জানা যাবে ৩ মার্চ৷ ১৮ ফেব্রুয়ারী রবিবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ৷ তা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত৷
রাজ্যে ৫৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে আগামীকাল ভোট হবে৷ চড়িলাম কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থীর প্রয়াণে ঐ কেন্দ্রে আগামীকাল ভোট হবে না৷ আগামী ১২ মার্চ ওই কেন্দ্রে ভোট হবে৷ নির্বাচনকে ঘিরে সারা রাজ্যে উন্মাদনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এরাজ্যে প্রতিবারই মানুষ উৎসবের মেজাজে নির্বাচনে অংশ নেন৷ রেকর্ড সংখ্যক ভোটার ভোট দেন৷ অতীতে নির্বাচনগুলিতে সারা দেশের এরাজ্যেই সবচেয়ে বেশি ভোটারের ভোট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে৷ এই রেকর্ড এবারও বজায় থাকবে বলে দাবি বিভিন্ন মহলের৷
নির্বাচনকে ঘিরে সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে৷ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি নেই বলে দাবি নির্বাচন দপ্তরের৷ শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক শ্রীরাম তরনীকান্তি বলেন, প্রতিটি বুথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷ নিরাপত্তা কর্মী সব জায়গায় পেট্রোলিং করছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য৷ তিনি সব রাজনৈতিক দল, দলীয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য তারা যেন সবধরণের সহযোগিতা করেন৷ তিনি জানান, নির্বাচনের পরও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী রাজ্যে থাকবেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করার জন্য৷ তিনি জানান, সব ভোট গ্রহণ কেন্দ্রেই ওয়েবকাস্টিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এ নিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্তি না ছড়ায়৷ প্রতিটি ভোটারের ভোটাধিকার গোপন থাকবে৷
এদিন তিনি জানান, ৫৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছেন ২৫ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৮৯৷ তাতে পুরুষ ১২ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৫০ জন এবং মহিলা ১২ লক্ষ ১৫ হাজার ১২৮ জন৷ তৃতীয় লিঙ্গ ১১ জন৷ চড়িলাম বিধানসভা আসনে ভোট পিছিয়েছে৷ ওই কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ৩৬ হাজার ৮২৪৷
তিনি জানান, রাজ্যে সর্বাধিক ভোটার রয়েছেন বাধারঘাট বিধানসভা কেন্দ্রে৷ এই কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ৫৭,৩৯৪ জন৷ অন্যদিকে সবচেয়ে কম ভোটার ৪৩ করবুক বিধানসভা কেন্দ্রে৷ মোট ৩৪,৬৯৯ জন৷ বাধারঘাট বিধানসভা কেন্দ্রেই সর্বাধিক ৭০টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে৷ অন্যদিকে, ১৯ চড়িলামে সর্বনিম্ন ৪০টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে৷ তিনি আরও জানান, এবারের নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র ৩,২১৪৷ মোট প্রার্থী ২৯৭ এবং মহিলা পরিচালিত ভোটকেন্দ্র ৪৭টি৷
শনিবার সকাল থেকেই ভোট কর্মীরা নিজ নিজ ভোট কেন্দ্রে রওয়ানা দেন৷ ভোট কর্মী এবং পুলিশ কর্মীরা এদিন ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট নিয়ে নির্বিঘ্নেই ভোট কেন্দ্রে পৌছেছেন৷ তবে, গাড়ির অভাবে অনেককেই ভোট কেন্দ্রে যেতে অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছে৷
এদিকে, আজ মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক জানিয়েছেন, ওয়েবকাস্টিং রাজ্যের সমস্ত বুথে থাকবে৷ ২৩৫০টি বুথে ওয়েবকাস্টিং অনলাইন হবে, বাকি বুথে অফলাইন ওয়েবাকাস্টিং হবে৷ তিনি জানান, প্রত্যেক বুথে ফিক্সড আইপি ক্যামরা বসানো হয়েছে এবং বুথের ভিডিও কেবল রিটার্নিং অফিসার, জেলা নির্বাচন আধিকারীক এবং মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের কার্যালয়ে দেখা যাবে এবং সংশ্লিষ্টরাই দেখতে পারবেন৷
রবিবার রাজ্যের অনেক নক্ষত্রের ভাগ্য নির্ণয় হবে৷ রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য সহ একাধিক হেভিওয়েট নেতাদের জয় পরাজয় সম্পর্কে ভোটাররা ইভিএমে রায় দেবেন৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হচ্ছে৷ তবে, ভোট বিভাজন উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ ৫৮ টি বিধানসভা আসনে ত্রিমুুখী লড়াই হচ্ছে৷ কাকড়াবন-শালগড়া বিধানসভা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সেখানে দ্বিমুখী লড়াই হবে৷ এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে৷ সিপিএম ও বিজেপি উভয় দলই জয় পরাজয় নিয়ে ভীষণ চিন্তায় রয়েছে৷ একদিকে অস্তিত্বের, অন্যদিকে সম্মান রক্ষার লড়াই হবে রবিবার৷
অন্যান্যবারের তুলনায় এবার নির্বাচনী উন্মাদনায় অন্যচিত্র ফুটে উঠেছে৷ প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপির উত্থানে শাসক দলের সাথে লড়াই খুব সহজ হবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ জয় নিয়ে সিপিএম ও বিজেপি উভয় দলই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী৷ কিন্তু, গণদেবতা কাদের পক্ষে রায় দেন তা জানতে ৩ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবে রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশও৷