BRAKING NEWS

বিজেপির সাথে জোট করে প্রার্থীর নাম ঘোষণা, পৃথক রাজ্যের দাবী ছাড়ছে না আইপিএফটি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ জানুয়ারী৷৷ পৃথক রাজ্যের দাবী নিয়ে জট খুলল না৷ বিজেপির সাথে জোটে গেলেও, পৃথক

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিজেপির নির্বাচন প্রভারী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও আইপিএফটি সভাপতি এনসি দেববর্মা৷ নিজস্ব ছবি৷

রাজ্যের দাবি ছাড়ছে না আইপিএফটি৷ বৃহস্পতিবার দুপুরেই আইপিএফটির সাথে জোটের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিজেপির নির্বাচন প্রভারী ড হিমন্ত বিশ্ব শর্মা৷ সাথে জানিয়েছিলেন, পৃথক রাজ্যের দাবি বাদ দিয়েই জোটে রাজী হয়েছে আইপিএফটি৷ কিন্তু, তার ঠিক কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আইপিএফটি বিজেপির এই দাবী পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে৷ ফলে, বিজেপি এবং আইপিএফটির মধ্যে জোটের জটিলতা আদৌ মিটবে কিনা তা নিয়েই ফের সংশয় দেখা দিয়েছে৷

এদিন, আইপিএফটি’র সাথে জোটের ঘোষণা দেয় বিজেপি৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ৫১টি আসনে লড়বে বিজেপি, আইপিএফটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৯টি আসনে৷ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন বিজেপি’র নির্বাচন প্রভারী ড হিমন্ত বিশ্ব শর্মা৷  সাথে যোগ করেন, অন্য কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আতাঁত করতে চাইলে সেই দলের সম্ভাব্য জয়ী প্রার্থীকে বিজেপির চিহ্ণেই ভোটে দাঁড়াতে হবে৷ তবে, তিনি উপজাতিভিত্তিক আঞ্চলিক দলের জন্য দরজাও খোলা রেখেছেন৷ পরিস্থিতি বুঝে অন্তিম মুহুর্তে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের সাথে আতাঁত নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হতেও পারে, জানিয়েছেন হিমন্তবাবু৷

এদিন ড. শর্মা বলেন, আইপিএফটি’র সাথে নির্বাচনী আতাঁত নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আইপিএফটি ৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে৷ বাকি ৫১টি আসনে বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে৷ তাঁর কথায়, সিমনা, মান্দাই, টাকারজলা, অম্পিনগর, মনু, রাইমাভ্যালী, রামচন্দ্রঘাট, কাঞ্চনপুর এবং আশারামবাড়ি বিধানসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আইপিএফটি সম্মত হয়েছে৷ এই আসনগুলিতে বিজেপি আইপিএফটিকে সহায়তা করবে৷ বাকি ৫১টি আসনে আইপিএফটি বিজেপিকে সহায়তা দেবে৷

তাঁর দাবি, তিপ্রাল্যান্ড নয়, জনজাতিদের আর্থ-সামাজিক, কৃষ্টি-সংসৃকতি এবং ভাষার উন্নয়নই এই জোটের প্রধান এবং একমাত্র শর্ত৷ নির্বাচনে জোটের অভিন্ন ন্যুনতম কর্মসূচী এই ইস্যুগুলিকে নিয়েই হবে৷ আইপিএফটি তিপ্রাল্যান্ডের দাবি বাদ দিয়ে এই শর্ত মানতে রাজী হয়েছে৷ তাঁর কথায়, আগামী ২৭ জানুয়ারী বিজেপি এবং আইপিএফটি জোট নিয়ে যৌথ বিবৃতি দেবে৷

ড. শর্মা জানান, আগামী ২৭ জানুয়ারী বিজেপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা দেবে৷ সে মোতাবেক আজই বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব এবং রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধর দিল্লি ছুটে গেছেন৷ আগামীকাল দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ’র সাথে প্রার্থী তালিকা এবং রাজ্যের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন৷ ২৭ জানুয়ারী বিজেপি’র সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে প্রার্থী তালিকায় সিলমোহর পড়বে৷ ড শর্মার মতে, ২৭ জানুয়ারী সন্ধ্যায় কিংবা ২৮ জানুয়ারী সকালে বিজেপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা দেবে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সাথে সাথেই আইপিএফটি‘র সাথে জোট নিয়ে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে৷

এদিন ড. শর্মা আরও জানান,  আইপিএফটি আজ থেকে নর্থ ইস্ট ডেমোক্রেটিক এলায়েন্সের (নেডা) শরিক দল হিসেবে যুক্ত হল৷ তাঁর কথায়, আইপিএফটিকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এডিসি এলাকার উন্নয়নের সাথে জনজাতিদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনাই হবে এই জোটের প্রধান এবং একমাত্র লক্ষ্য৷

এদিকে, উপজাতিভিত্তিক অন্য কোন রাজনৈতিক দল এই জোটে সামিল হলে সেই দলের সম্ভাব্য জয়ী প্রার্থীকে বিজেপি চিহ্ণেই ভোটে দাঁড়াতে হবে, স্পষ্ট জানিয়েছেন ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা৷  তাঁর কথায়, বাম বিরোধী ভোট বিভাজন আটকাতে বিজেপি যেকোন রাজনৈতিক দলের সাথে আতাঁত করতে প্রস্তুত৷ কোন রাজনৈতিক দল চাইলেই বিজেপি তাঁকে জায়গা ছেড়ে দেবার বিষয়ে নিশ্চয়ই ভাববে৷ কিন্তু, এখন যদি কোন রাজনৈতিক দল বিজেপি’র সাথে আতাঁত করতে চায়, তাহলে সেই দলের সম্ভাব্য জয়ী প্রার্থীকে বিজেপির চিহ্ণেই ভোটে দাঁড়াতে হবে৷ অবশ্য, উপজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দলের জন্য বিজেপি দরজা খোলা রেখেছে, তাও এদিন তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷ তাঁর সাফ কথা, পরিস্থিতি বুঝে অন্তিম মূহুর্তে উপজাতিভিত্তিক আঞ্চলিক দলের সাথে আতাঁত নিয়ে ভাববে বিজেপি৷

কিন্তু, রাতের মধ্যে পরিস্থিতি অন্য রূপ নেয়৷ বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে আইপিএফটি বিজেপির সাথে জোটের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি ৯টি আসনের মধ্যে ৭টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে৷ আইপিএফটি সভাপতি এনসি দেববর্মা জানান, বিজেপি আইপিএফটিকে ৯টি আসন দিয়েছে৷ বাকি ৫১টি আসনে বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে৷ তিনি জানান, আইপিএফটি’র ৯টি আসনের মধ্যে ৭টি আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে৷ বাকি দুটি আসনে প্রার্থী দুয়েক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে৷ তিনি জানান, সিমনা কেন্দ্রে ব্রিশকেতু দেববর্মা, কাঞ্চনপুর কেন্দ্রে প্রেম কুমার রিয়াং, মান্দাই কেন্দ্রে ধীরেন্দ্র দেববর্মা, রামচন্দ্রঘাট কেন্দ্রে প্রশান্ত দেববর্মা, অম্পিনগর কেন্দ্রে এস সি দেববর্মা, মনু কেন্দ্রে ধনঞ্জয় দেববর্মা এবং টাকারজলা কেন্দ্রে এনসি দেববর্মা প্রার্থী হচ্ছেন৷ বাকি রাইমাভ্যালী এবং আশারামবাড়ি কেন্দ্রে প্রার্থী দুয়েক দিনের মধ্যে ঘোষণা দেয়া হবে৷

এনসিবাবু জানান, বিজেপির  সাথে জোটে আইপিএফটি ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল নেই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ অভিন্ন বোঝাপড়ার মধ্য দিয়েই এই জোট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে৷ তাঁর বক্তব্য, বামফ্রন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করাই এই জোটের একমাত্র লক্ষ্য৷ এই জোটের মানসিকতা হল সরকার পরিবর্তনে দরকার রয়েছে৷ জনগণও এমনটাই প্রত্যাশা করছেন৷ সেজন্যই আইপিএফটি বিজেপির সাথে জোটে সামিল হয়েছে৷ তবে, পৃথক রাজ্যের দাবীর পক্ষে নির্বাচনের পর শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে আইপিএফটি৷ তাঁর সাফ কথা, জনজাতিদের আর্থ-সামাজিক, কৃষ্টি-সংসৃকতি এবং ভাষার মানোন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় যে মর্ডালিটি কমিটি গঠন করেছে তিপ্রাল্যান্ডের দাবীর সাথে তা সম্পর্কযুক্ত৷

তাঁর মতে, পৃথক রাজ্য নিয়ে বিজেপির আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকতেই পারে৷ কিন্তু, আইপিএফটি আলাদা রাজ্যের দাবী নিয়েই লড়বে৷ এনসি দেববর্মা এদিন জোর গলায় দাবী করেন, পৃথক রাজ্যের দাবীর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতেই কেন্দ্রীয় সরকার মর্ডালিটি কমিটি গঠন করেছে৷

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন আইপিএফটির সাধারণ সম্পাদক মেবার কুমার জমাতিয়া৷ তাঁর কথায়, বিজেপির জাতীয় নীতি অনুযায়ী পৃথক রাজ্যের ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই৷ তাছাড়া, পৃথক রাজ্য মানবে না কেন্দ্রীয় সরকার, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রী কখনোই এমনটা বলেননি৷ তাঁর বক্তব্য, বিজেপি কখনোই পৃথক রাজ্যের বিরোধীতা করেনি৷ তাঁর মতে, তিপ্রাল্যান্ডের দাবীর প্রতি বিজেপি যথেষ্ট ইতিবাচক৷

ফলে, জোটের ফয়সালা হলেও পৃথক রাজ্য নিয়ে বিজেপি ও আইপিএফটির বক্তব্যে জটিলতা আরও বাড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *