BRAKING NEWS

২০১৮ সালের মধ্যে ১১ হাজার ঘরে সৌভাগ্য যোজনা, আইজলে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

আইজল (মিজোরাম), ১৬ ডিসেম্বর (হি.স.): স্বাধীনতার ৭০ বছর অতিক্রান্ত। এরপরও দেশের চার কোটি মানুষের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছয়নি। দেশের গরিবরা এখনও অষ্টাদশ শতকের জীবন কাটাচ্ছেন। তাই কেন্দ্রের বর্তমান সরকার গরিবদের জীবনে আলো ফুটাতে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের ঘরে খাদ্যের যোগানের ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। শনিবার মিজোরামের রাজধানী আইজলে অসম রাইফেলস-এর প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করে বিশাল সমাবেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বেলা ১১টায় অসম রাইফেলস-এর প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে বোতাম টিপে কলাশিব জেলায় তুরিয়াল নদীবাঁধে নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে আজ তৃতীয় আত্মনির্ভরশীল রাজ্যে পরিণত হল মিজোরাম। সিকিম, ত্রিপুরার পর নিজের চাহিদা মেটানো উপযোগী বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে মিজোরাম। বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করতে কেন্দ্রীয় সরকার ২৭৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। এর বলে ছয়টি নতুন সাব-স্টেশন তৈরির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৭৭ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে ১১ হাজার ঘরে সৌভাগ্য যোজনা বাস্তবায়ন করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে তাঁর সরকার। আগামী বছরের মধ্যে এই লক্ষ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে এক কথায় অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
উন্নয়নের বলে গোটা দেশকে এক সূত্রে গাঁথতে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি। ১৯৯৮ সালে বিদ্যুৎ যোজনার ঘোষণা করেছিলেন অটলজি। কিন্তু সময়মতো তা সম্পূর্ণ হতে পারেনি। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে সরকারের দায়িত্ব নিয়েই শপথ নিয়েছিলেন, বাজপেয়ীজির স্বপ্ন তিনি যত শিগগির পারেন বাস্তবে রূপ দেবেন। এই লক্ষ নিয়েই তাঁর সরকার দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে।
তাঁর ইচ্ছে, উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি ঘরোয়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হোক। কেবল তা-ই নয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ যাতে দেশের অন্যান্য রাজ্যে সরবরাহ হোক তা চান তিনি। প্রসঙ্গক্রমে তিনি পাওয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেম খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথাও ঘোষণা করেছেন আইজলের জনসভায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক এবং রেল ব্যবস্থার মাধ্যমে মিজোরামকে জুড়তে কাজ চলছে। জানান, ৪৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শিলচর-মিজোরাম রেল সড়কের কাজ তাঁর সরকার চালিয়েছে বলে মনে করিয়ে দিতে ভুনেননি প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ৩৮০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জাতীয় সড়ক তথা ১২০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে ১০ হাজার কোটি টাকার এক প্রকল্পের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
দেশের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার রাজ্যে প্রচলিত কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলোর সঠিক লাভ আদায় করে আত্মনির্ভশীল হওয়ারও আহ্বান জানান স্থানীয় জনসাধারণকে। আর্থিক যোজনা, স্টার্ট-আপ স্ট্যান্ড-আপ ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন নতুন ব্যবসা শুরু করে রাজ্যের যুবসম্প্রদায়কে প্রতিষ্ঠিত হওয়ারও ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বলেন, ভুটান যেমন একশো শতাংশ জৈব তথা কার্বন নেগেটিভ দেশ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে সে ভাবেই ২০২২ সালের মধ্যে মিজোরাম-সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকেও অর্গানিক তথা কার্বন নেগেটিভ অঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠার সংকল্প নিতে হবে। এজন্য অর্গানিক ক্লাস্টার তৈরি করে পূর্বোত্তরের জন্য ৫০ হাজার কৃষককে যুক্ত করা হয়েছে যাতে তাঁরা জৈবিক পদ্ধতিতে চাষবাস করতে পারেন।
তাছাড়া, রাজ্যে এতদিন নিজস্বভাবে বাঁশ উৎপাদন করা এবং এগুলির পরিবহণ খাতে যে পারমিট ব্যবস্থা ছিল তা তাঁর সরকার বাতিল করে দিয়েছে। এতে বিনা সরকারি বিধিনিষেধ অর্থাৎ পারমিট ব্যবস্থার গ্যাঁড়াকল থেকে বেরিয়ে স্থানীয় যুবসম্প্রদায় বাঁশ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন।
মণিপুরের ইমফলে একটি স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি স্থাপনের কথাও ঘোষণা করেছেন এদিন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ক্রীড়া প্রতিভার বিপুল সম্ভারের প্রসঙ্গও আজকের ভাষণে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেন, ২০১৪ সালে প্রথম সন্তোষ ট্রফি লাভ করে মিজোরাম বিশ্বে এক নয়া রেকর্ড গড়েছিল। সেই সূত্রে তিনি রাজ্যের যুবক-যুবতীদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জানান, সকলের জন্যই ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করবে কেন্দ্রীয় সরকার।
তিনি বলেন, দেশে তাঁর সরকারই প্রথম উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে গত তিন বছরে ১৫০ দিনের বেশি সফর করেছেন। এই অঞ্চলের সুবিধা-অসুবিধার খতিয়ান সংগ্রহ করে সেগুলোর সমাধানের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। মিজোরামের পর্যটন ক্ষেত্রের প্রসঙ্গও আজ তুলছেন প্রধানমন্ত্রী। জনান, রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত করতে ১৯৪ কোটি টাকা কেন্দ্র বরাদ্দ করেছে। তাছাড়া, মিজোরামের রাজধানী আইজলে একটি ন্যাশনাল পার্ক তৈরি করার কথাও আজ ঘোষণা করেছেন তিনি। রাজ্যের বিকাশে যুবসম্প্রদায়কে বিশেষ ভূমিকা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
আজ সকাল প্রায় সোয়া নয়টা নাগাদ ভারতীয় বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে অবতরণ করনে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান রাজ্যপার নির্ভয় শর্মা, মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা প্রমুখ। সঙ্গে ছিলেন ডোনার মন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *