BRAKING NEWS

রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামার পরিস্থিতি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চলছে, সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ নভেম্বর৷৷ রাজ্যে একটা অশুভ শক্তি ধর্মীয় বিভাজনের নামে বিষাক্ত বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ ধর্মের বিভাজনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামার পরিস্থিতি সৃষ্টিকরার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে৷ রাজ্যে যে শান্তি-সম্প্রীতি উন্নয়ন বজায় রয়েছে তা সহ্য হচ্ছে না বলেই তারা ধর্মের নামে বিষের হাওয়া ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সকলকেই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে তাদের জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কোনও দেশ বা রাজ্যের উন্নয়নের প্রথম শর্ত হলো শান্তি৷ আমাদের রাজ্যে শান্তি-সম্প্রীতির ঐক্য রয়েছে বলেই নানা জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী রূপায়ণ করা সম্ভব হচ্ছে৷ কাজেই রাজ্যে যাতে শান্তি-সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় থাকে তার জন্য আমাদের সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে৷ আজ সোনামুড়া মহকুমায় ৩ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বড়নারায়ণ ইসলামিয়া হাই (আলীম) মাদ্রাসার নবনির্মিত ছাত্রাবাসের দ্বারোদ্ঘাটন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার চায় মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে ছেলে-মেয়েরা যাতে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রশাসনের উচ্চ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে বসতে পারে৷ সংখ্যালঘু ঘরের ছেলে-মেয়েরা যাতে ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার হতে পারে তারজন্য রাজ্য সরকার তাদের সেই রকম পরিবেশই গড়ে দিচ্ছে৷ মুসলিম সম্প্রদায় যদি মাদ্রাসার পুরোনো ধাঁচের পড়াশুনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে অগ্রসর হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে৷ আমরা পুরোনো ধারণাটির পরিবর্তনের চেষ্টা করছি৷ এর জন্য বাংলা, ইতিহাস, ভূগোলের পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ের উপরও অধিক জোর দেওয়া হচ্ছে৷ তিনি আরও বলেন, আমরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসা নির্মাণ করে প্রয়োজনীয় শিক্ষক প্রদান করছি, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করছি এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করছি৷ মাদ্রাসাগুলিতে যাতে পড়াশুনাটা ভালো হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে৷ মাদ্রাসায় যারা শিক্ষকতা করেন তাদেরকে মন প্রান দিয়ে ছাত্রদের পড়াতে হবে৷ বাড়িতে মা-বাবাদের লক্ষ্য রাখতে হবে ছেলে-মেয়েরা সঠিকভাবে পড়াশুনা করছে কিনা৷ শুধু পরীক্ষায় পাশের জন্য ছেলে-মেয়েদের মাদ্রাসায় পাঠালে চলবে না৷ আমরা চাইছি ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক৷ তারা পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধূলা করবে, গান-বাজনা করবে, নাটক করবে, ছবি আঁকবে এবং শরীর চর্চা করবে৷ এসব কাজের জন্য তাদের সহযোগিতা করার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষকদের আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা আমাদের চিরত্র গঠনে সাহায্য করে৷ পনাশুনার পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের কতগুলি সদগুণের অধিকারী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েরা সৎ হবে, সত্য কথা বলবে, মিথ্যার আশ্রয় নেবে না, কারোর ক্ষতি করবে না, বড়দের শ্রদ্ধা করবে, ছোটদের ভালোবাসবে৷ তারা ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকলের সাহায্য করবে৷ পাশাপাশি তারা নিজ দেশ, রাজ্যকে ভালোবাসবে৷ এই দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তারা শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে তুলবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটা সময় রাজ্যে সন্ত্রাসবাদীদের দৌরাত্ম্যে ছিল৷ তখন উন্নয়নমূলক কাজ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল৷ রাজ্যের জনগণ শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই আন্দোলন করেছিল৷ অবশেষে অনেক লড়াইয়ের পর রাজ্যে শান্তি ফিরে এলে উন্নয়নমূলক কর্মসূচী রূপায়ণে গতি পায়৷ কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে একটা অশুভ শক্তি ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে৷ ধর্মীয় বিভাজনের নামে দেশকে ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ কিন্তু আমরা জানি আমাদের দেশ হল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র৷ সেখানে সরকারের কোনও নিজস্ব ধর্ম নেই৷ সরকারের কাছে সব ধর্মের গুরুত্বই সমান৷
কিন্তু বর্তমানে কি দেখছি? একটা অশুভ শক্তি আমাদের দেশকে নির্দিষ্ট একটা ধর্মের দেশ বানানোর প্রয়াস চালাচ্ছে৷ জোর করে ধর্মান্তরিত করানো হচ্ছে৷ তিনি আরও বলেন, ধর্ম হচ্ছে ব্যাক্তিগত ব্যাপার৷ সকল ধর্মকেই সমান শ্রদ্ধার চোখে দেখা উচিত৷ কারণ সকল ধর্মেরই মূল কথা হল সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই৷ সব ধর্মই বলেছে মানুষকে ভালোবাসবে এবং সকলের উপকার করবে৷ কিন্তু আমরা এখন দেখছি ধর্মের নামে, গো-রক্ষার নামে দেশের সংখ্যালঘু জনগণের উপর আক্রমণ হানা হচ্ছে৷ পাশাপাশি দলিতদের উপরও নানা নির্যাতন করা হচ্ছে৷ এতে দেশে শান্তি-সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল শাসন ক্ষমতায় এলে নিত্যপণ্যের দাম কমবে, মুদ্রাস্ফীতি কমবে, দেশে বেকারের সংখ্যা কমবে, কৃষক আত্মহত্যা কমবে৷ কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা কি? বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এর বিরুদ্ধে কৃষক, শ্রমিক ব্যবসায়ী এবং বেকাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে৷ তাদের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে দমানোর জন্য ধর্মের নামে, জাতির নামে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজ্যেও একটা অশুভ শক্তি ধর্মীয় বিভাজনের নামে বিষাক্ত বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ ধর্মের বিভাজনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামার পরিস্থিতি সৃষ্টিকরার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে৷ রাজ্যে যে শান্তি-সম্প্রীতি উন্নয়ন বজায় রয়েছে তা সহ্য হচ্ছে না বলেই তারা ধর্মের নামে বিষের হাওয়া ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সকলকেই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে তাদের জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, এক সময় রাজ্যে সরকারীভাবে মাদ্রাসা চালু ছিল না৷ কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার সংখ্যালঘুদের কল্যাণে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচী রূপায়ণের পাশাপাশি মাদ্রাসা নির্মাণ করে শিক্ষার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাগুলি প্রদান করছে৷ এতে সংখ্যালঘু অংশের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে৷
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এবং বড়নারায়ন ইসলামিয়া হাই (আলীম) মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মুফতি আব্দুল জলিল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *