নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ অক্টোবর৷৷ আবার মুখ পুড়ল পুলিশের৷ দায় চাপল রাজ্য সরকারের উপরও৷ কল্পনা দাস হত্যাকান্ডে প্রধান

অভিযুক্ত স্বামী তথা সিপিআইএম’র প্রাক্তন ডাকসাইটে নেতা জীতেন দাসকে বেকসুর খালাস করল আদালত৷ একইসঙ্গে অন্য ছয় অভিযুক্তকেও নির্দোষ বলে জানাল আদালত৷ ফাস্ট ট্রেক কোর্টে দীর্ঘ শুনানির পর এদিন আদালত অভিযুক্ত সকলকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে৷ পুলিশ আদালতে কল্পনা দাস হত্যাকান্ডে পরিবারের সদস্যরাই যুক্ত এই তথ্য প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ চার্জশিট খুবই দুর্বল ছিল, তাও এই মামলায় অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী পিযুষ কান্তি বিশ্বাস৷ তিনি জানান, জীতেন দাস সহ তাঁর বাই সতীন্দ্র দাস, ভাগ্ণে সিদ্ধার্থ দাস, ভ্রাতৃবধূ শিবু দাস, কল্পনা দাস এবং শিখা দাসকে আদালত এই হত্যা মামলায় বেকসুর খালাস করেছে৷ সরকার পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন রায়ের কপি এখনো হাতে পাওয়া যায়নি৷ তাই কোন মন্তব্য করা সম্ভব নয়৷ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর তা আইন দপ্তরের কাছে পাঠানো হবে এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনের বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা হবে৷
২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভোরে নিজ বাড়িতে খুন হন কল্পনা দাস৷ এর পরেই জেলা সভাধিপতি এবং সিপিআইএম’র তৎকালীন ডাকসাইটে নেতা জীতেন দাসকে পার্টি থেকে বহিস্কার করে সিপিআইএম রাজ্য নেতৃত্ব৷ এর পরেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ ক্রমান্বয়ে তার ভাই ভাতৃবধূ সহ আরও বেশ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দীর্ঘদিন ধরে শুনানি চলে৷ অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হয়নি৷ কিন্তু এদিন তাদের বেকসুর খালাস করা হয়েছে৷ পুলিশি তদন্তে অসংখ্য দুর্বলতা এবং রিপোর্টে অস্পষ্টতার জেরেই এমনটাই হয়েছে বলে অভিযোগ৷ ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি ঘটনায় পুলিশি গাফিলতির কারণে আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে যাবার অভিযোগ উঠেছে৷ এনিয়ে রাজ্য বিধানসভাতেও বিভিন্ন সময় দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে৷
এই রায় সম্পর্কে বরিষ্ট আইনজীবী সন্দীপ দত্ত চৌধুরী বলেন, রাজ্যে খুনের মামলায় পুলিশি ব্যর্থতা আবারও ফুটে উঠেছে৷ তবে, এ নেহাৎ ব্যর্থতা নাকি ইচ্ছাকৃত তা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷ সিপিএমের ডাকসাইটে নেতা হওয়ায় তাকে রাজনৈতিক মদত দেওয়া হয়েছে কি না, সেই বিষয়েও তিনি প্রশ্ণ তুলেছেন৷ তার বক্তব্য, রাজ্যে বহু খুনের মামলায় রাজনৈতিক স্বার্থে তদন্ত সঠিকভাবে করা হয় না৷ ফলে, প্রকৃত দোষীকে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয় না৷ এই রায় সম্পর্কে মৃতার বাপের বাড়ির সদস্য আইনজীবী পার্থ সরকার বলেন, আদালতের রায় মাথা পেতে নিলেও পারিপার্শ্বিক প্রমাণাদি থাকা সত্বেও কি করে অভিযুক্তরা খালাস পেলেন তাতে প্রশ্ণ থেকেই যাচ্ছে৷ পুলিশী ব্যর্থতার বিষয়েও তিনি ইঙ্গিত করেছেন৷
এই মামলায় হোস্টাইল হয়েছিলেন চল্লিশ জন৷ কিন্তু, পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দী থেকে তারা আদালতে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যান৷ ফলে, এই মামলার তদন্তে রাজ্য পুলিশ যে চার্জশিট জমা দিয়েছে এবং তথ্য প্রমাণাদি কোনটাই অভিযুক্তদের দোষী প্রমাণে সহায়ক হয়নি৷

