BRAKING NEWS

বৃষ্টিতে জাতীয় সড়কে ধস, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি,বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ কমলাসাগর/ বিশালগড়/ বক্সনগর,২১ অক্টোবর৷৷ রাজ্যে কয়েক দিনের বিক্ষিপ্ত বর্ষনে জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে৷ রাজধানী আগরতলা শহরের বিভিন্ন এলাকা যেমন বরাবরের মত জলমগ্ণ হয়ে পড়ে৷ তেমনি রাজ্যের প্রতিটি নদীতে জলস্তর বেড়ে যায়৷ গোমতী, হাওড়া, খোয়াই নদীর জলস্তর তো বেড়েছেই সেইসাথে দীর্ঘ কয়েক বছর পর ধলাই নদীর জলস্তরও বেড়ে যায়৷ তবে কোথাও থেকে কোন মানুষকে বাড়ি ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হয়নি৷ নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় প্রশাসনের তরফ থেকে তীক্ষ্ন নজরদারী রাখা হয়েছে৷ এদিকে, বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে৷ এদিকে, শনিবার আসাম আগরতলা জাতীয় সড়কের আঠারমুড়া ও বড়মুড়ায় বেশ কয়েকটি স্থানে ধবস পড়েছে বলে খবর৷ যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ধস সরানোর কাজ চালানো হচ্ছে৷ কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷
টানা বর্ষণে রাজ্যের বহু এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে৷ বৃষ্টির সঙ্গে চলে দমকা হাওয়াও৷ বিদ্যুৎ ও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে৷ গত প্রায় ৪৮ ঘন্টা ধরে টানা বর্ষণ হয়েছে৷ শুক্রবার থেকে বর্ষন শুরু হলেও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বষ্টিপাতের পরিমান মারাত্মক ভাবে বেরে যায়৷ একই সঙ্গে চলে ঝড়ো হাওয়া৷ বেশ কিছু এলাকায় গাছ উপরে পরেছে৷ রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবায় এই ঝড়বৃষ্টিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে৷ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিকল হয়ে পড়েছে৷ রাজধানী আগরতলার বহু এলাকায় গতকাল রাত থেকেই বিদ্যুৎ নেই ৷ প্রভাব পড়েছে টেলি পরিষেবাতেও৷ অসময়ের এই অবিরাম বৃষ্টি ও ঝড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ রাজধানী আগরতলা বাসীরা কার্যত গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন৷ কিন্তু গরে এমন কি বহু অফিসেও বিদ্যুৎ নেই৷ বিদ্যুৎ না থাকায় এবং বিদ্যুৎ কর্মীদের খবর দিয়েও পরিষেবা বহালের কোন ইঙ্গিত না পাওয়ায় জন মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে৷
এদিকে, তিন দিনের ভারী বর্ষনের ফলে কমলাসাগর মাতার বাড়ী সংলগ্ণ এলাকায় বিশাল টিলা থেকে ধস পড়ে কমলাসাগর মূল সড়কে৷ কিন্তু মটির ধসটিকে সরানো হয়নি৷ দীপাবলি দিন কমলাসাগরে মাতা মন্দির দর্শন করতে আসে দূর দূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থিরা৷ বৃষ্টির ফলে সেই ধস পড়ে থাকায় দীর্ঘ প্রায় ৩০০ মিটার জায়গা যান চলাচল ও লোকজনের যাতায়াতের ভীষণ অসুবিধা পড়তে হয়েছে৷ অনেক বাইক, আটক গাড়ি সড়কে আটকে পড়ে৷ চরম দুর্ভোগর শিকার লোকজন৷ এই তিনদিনের ভারী বর্ষণের ফলে মাতাবাড়ী সড়কের আরো বেহাল অবস্থা৷ যান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে৷ চরম দুর্ভোগে মধ্যে পড়ে আছে এলাকার লোকজন সহ দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা৷
অন্যদিকে, মৌসুমি বায়ু বিদায় নেওয়ার পরও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের জেরে সারা রাজ্যে বৃষ্টি৷ কোথাও হাল্কা বৃষ্টি কোথাও বা ভারী বৃষ্টিপাত অবিরাম গতিতে চলছে৷ ফলে নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ এই দু-দিনের বিরামহীন বৃষ্টিপাতের দৌলতে বিশালগড়ের কৃষকদের মাথায় হাত৷ কৃষি জমিতে জল জমে কৃষিজ ফসল নষ্টের মুখে বিশেষ করে ধান চাষ৷ বিশালগড়ের চন্দ্রনগর, গোপীনগর, নদীলাক, নারাউরা, লক্ষ্মীবীল, রঘুনাথ পুর, কেকে নগর প্রভৃতি এঞ্চলের ধানচাষীদের মুখে এখন চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে৷
এই বৎসর রাজ্যে গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ কখনো বন্যা বা অধিক বৃষ্টিপাতের দরুণ জমিতে জল জমে গিয়ে ধানের রোয়া বারবার নষ্ট হয়েছে৷ এক কৃষক জানান উনি ১২ কানি জামিতে ধান চারা রোপন করেছে৷ কিন্তু বন্যা বা জমিতে বেশি পরিমানে জল জমে ধান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে৷ একই জামিতে তিনবার ধান গাছ লাগিয়েছে কিন্তু ভিলেন হয়ে দাড়াচ্ছে বৃষ্টি৷ বার বার ধান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে৷ শেষ মেস অনেক কষ্টে জমিতে লাগানো ধান গাছ এই বৃষ্টিতে জলের তলে চলে গেছে৷ এখন কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না বলে জানান৷ আগামী বছর যে ধান চালের দাম বেশি থাকবে তা সহজে অনুমান করা যায়৷ বিরামহীন বৃষ্টির জেরে বিশালগড়ের নিম্নাঞ্চলে জল উঠে গেছে৷ রাত্রি বেলাও যদি এই ভাবে বৃষ্টি হয় তাহলে বিশালগড়ে ফের বন্যা দেখা দিবে৷ অন্যদিকে বৃষ্টির জেরে বিশালগড়ে সাপ্তাহিক বাজার একেবারে জমেনি৷ মানুষের আনাগোনা ছিল একেবারে কম৷ তাছাড়া বিশালগড়ে সকাল থেকেই বিদ্যুৎ নেই৷ কড়ইমুরা, কেকেনগর তেবারিয়া, দুর্গানগর প্রভৃতি অঞ্চলে খবর লেখা অবধি বিদ্যুৎ নেই৷
তাছাড়া, গত বুধবার থেকে টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা৷ বিশালগড় বিজয় নদের জলে ডুবে গেছে বক্সনগর ব্লক এলাকার রহিমপুর, পুটিয়া, ভেলুয়াচর এর সমস্ত ধানের জমি৷ পুরো ধানের মাঠ জলে গ্রাস করে ফেলেছে৷ মাস খানেক আগেও ফসল নষ্ট হয়েছিল৷ কিন্তু গত দুদিন আগের বৃষ্টিতে ও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কৃষকের মাঠের ফসল৷ দুশ্চিন্তায় ভুগছে কৃষকরা৷ কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা৷ বক্সনগর, কলমচৌড়া, আনন্দনগর, কমলনগর, মতিনগর, কুলুবাড়ী, সহ নানান স্থানে ভারী বর্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ এবারে কৃষকের উৎপাদিত ফসলও ভাল হবেনা৷ চিন্তায় মাথায় হাত কৃষকদের৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *