BRAKING NEWS

এলগিন রোডে মুকুলের বাড়িতে নারদকান্ডের পুনর্নির্মাণ করতে চায় সি বি আই

কলকাতা, ১৪ অক্টোবর ( হি.স.): এবার নারদ কান্ডে মুকুল রায়কে নোটিশ দিল সি বি আই ৷ নোটিশ পাঠাবার সঙ্গে সঙ্গে শনিবার সকালে তাকে ফোন করেন, সি বি আইয়ের আধিকারিক রঞ্জিত কুমার ৷ তিনি জানান,নারদকাণ্ডের পুনর্নির্মাণ করতে চেয়ে এলগিন রোডের বাড়িতে যেতে চান তারা ৷ মুকুল রায় তাকে জানান,’দল ছেড়েছি, রাজনৈতিক কাজে এই মুহূর্তে দিল্লিতে ব্যস্ত আছি ৷ এই মাসের শেষে কলকাতায় ফিরব ৷ আমায় সময় দেওয়া হোক’ ৷
অভিযোগ , এই ২০১৪ সালের ২৫ শে এপ্রিল এলগিন রোডের এই বাড়িতেই বসেই মুকুল রায় ম্যাথু স্যামুয়ালকে বলেছিলেন,’ আমি নিজের হাতে টাকা নিই না ৷ আপনি বর্ধমানে গিয়ে পুলিশ সুপার মির্জার সঙ্গে টাকার ব্যাপারে কথা বলুন ৷ ওই বাড়িতে দু বার তিনি ম্যাথু স্যামুয়ালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ৷ দ্বিতীয় বার মুকুল রায় ম্যাথুকে বলেছিলেন, পাশের একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে টাকা দিয়ে আসতে ৷
তাই ,মুকুল-ম্যাথুর বৈঠকের পুনর্নির্মাণ করতে চান সি বি আই অফিসাররা ৷
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন মুকুল রায়৷ তবে এরপর তিনি কোন দলে যাবেন, তা এখনও পরিস্কার করে বলেন নি মুকুল রায় ৷ সেই কারণেই সি বি আইয়ের কাছ থেকে একমাস সময় চেয়েছেন তিনি ৷ বলেছেন, রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে তিনি এখন ব্যস্ত৷ হাতের কাজ গুটিয়েই তিনি সি বি আইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন ৷
মুকুলের এলগিন রোডের বাড়িতে টাকা নিতে ইচ্ছে প্রকাশ করা নিয়ে নারদ ফুটেজ আছে। সেই ফুটেজের উপর ভিত্তি করে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে চাইছে সি বি আই ৷ সেখানে তাঁরা বৈঠকের জায়গার ছবি তুলবেন ৷ গোটা বিষয়টি পুনর্নির্মাণ করবেন ৷ দেখবেন, ম্যাথু ও মুকুলেরর মধ্যে ঠিক কী হয়েছিল, আর কীভাবে হয়েছিল,৷ বিস্তারিত রিপোর্ট তাঁরা জমা দেবেন আদালতে৷
এর আগে অবশ্য নারদা কাণ্ডে ই ডি-র মুখোমুখি হতে হয়েছিল মুকুল রায়কে। মুকুল অবশ্য তখন দাবি করেছিলেন, নারদার স্টিং অপারেশনে তিনিই একমাত্র নেতা, যাঁকে কোনও টাকা নিতে দেখা যায়নি। তৃণমূল ছেড়ে মুকুল রায় দাবি করেছিলেন, তিনি নির্দোষ । কোনও ধরনের অনৈতিক কাজ তিনি করেননি । মুকুল এমন দাবি করলেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজর থেকে যে তিনি এখনই রেহাই পাচ্ছেন না, তা স্পষ্ট।
আগামী ৩১ অক্টোবর তাঁকে হাজিরা দিতে বলেছে ই ডি ৷ একই সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের আরও দুই সাংসদকে তলব করা হয়৷ তাঁদের মধ্যে একজন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার৷ তাঁকে ডাকা হয়েছে আগামী ২৪ অক্টোবর৷ দ্বিতীয়জন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁকে আগামী ৩০ অক্টোবর হাজিরা দিতে বলেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরে ট৷ এদিকে যেদিন মুকুল রায়কে ডাকা হয়েছে, সেদিনই ডাকা হয়েছে কলকাতার মেয়রের স্ত্রীকেও ৷ এর আগে তাঁকে দু’বার তলব করা হয়েছিল৷ কিন্তু একবারও তিনি হাজিরা দেননি৷
গত কয়েকদিন ধরেই নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের মন্ত্রী, সাংসদদের বাড়ি এবং অফিসে গিয়ে ঘটনা পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করেছে সি বি আই। সেই কারণেই মুকুলের বাড়িতেও যেতে চান তাঁরা । কবে তিনি বাড়িতে থাকবেন, তা জানতেই মুকুলের কাছ থেকে সময় চেয়েছেন সি বি আই গোয়েন্দারা । সদ্য তৃণমূল ত্যাগ করা মুকুলের কাছে যা যথেষ্টই অস্বস্তির ।
ঘটনাচক্রে গত বৃহস্পতিবার সারদা, নারদার মতো আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডে মুকুলের প্রত্যক্ষ যোগ নিয়ে সরব হয়েছিলেন আর এক বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ । দাবি করেছিলেন, সারদা কাণ্ডে তাঁর মুখোমুখি বসিয়ে মুকুল রায়কে জেরা করা হোক ।
নারদ তদন্তে ইতিমধ্যে ১৩ জন অভিযুক্তকেই প্রথম দফার জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সি বি আই সূত্রের খবর, ১৩ জনের মধ্যে দু-তিন জন ছাড়া সবাই টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন । যাঁরা স্বীকার করেছেন, তাঁদের মধ্যে সুলতান ছাড়া সবাইকে গোপন ক্যামেরা অভিযানে টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে নানান প্রশ্ন করা হয়েছে । এমনকী, প্রশ্নের পাশাপাশি তাঁদের সামনে গোপন ক্যামেরা অভিযানের ফুটেজ তুলে ধরা হয়েছে । শুধু মাত্র সুলতানকে কোনও প্রশ্নই করতে হয়নি । ফুটেজও দেখাতে হয়নি । নিজে থেকেই টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন । কে তাঁর কাছে ম্যাথুকে নিয়ে গিয়েছিলেন, সে কথাও নিজে থেকেই বলেছিলেন বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর । সি বি আইয়ের এক আধিকারিকের কথায়, ‘তিনি আমাদের সবরকম সহযোগিতা করেছিলেন’ ।
প্রসঙ্গত বলা যায়, গত মঙ্গলবার পার্ক সার্কাসে সুলতানের অফিসে হানা দিয়েছিলেন তদন্তকারীরা । কারণ, তাঁকে গোপন ক্যামেরা অভিযানে ওই কার্যালয়ে বসে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল । সেদিন প্রয়াত সাংসদের আইনজীবী দানিশ হক বলেছিলেন, ‘তিনি প্রথম থেকেই বলেছিলেন, তদন্তে সবরকম সাহায্য করবেন’ ।
সি বি আই সূত্রে জানা গেছে, নারদ মামলায় অভিযুক্ত তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র টাকা নেওয়ার স্বীকার করেছেন । কিন্তু তাঁকে নানা ভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রশ্ন করা হয় । নারদ মামলা সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন করা হলেই তিনি অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন । এমনকী, সারদা মামলায় তিনি যে কদিন জেলে ছিলেন, সেখানকার অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন । জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন মাঝে একবার অসুস্থতা অনুভব করেছিলেন । টাকা নেওয়ার কথা মনে করাতে, তাঁকেও গোপন ক্যামেরা অভিযানের ফুটেজ দেখানো হয়েছিল ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *