BRAKING NEWS

স্থানীয় পর্যায়ে গাফিলতির জন্যই উৎকল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা, জানাল রেল

নয়াদিল্লি-মুজফফরনগর, ২০ আগস্ট (হি.স) : স্থানীয় পর্যায়ে গাফিলতির জন্যই খতৌলিতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। শনিবার উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের কাছে খতৌলিতে পুরী-হরিদ্বার-কলিঙ্গ উৎকল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় রবিবার এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন রেলের আধিকারিকরা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, রেল লাইনে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এদিন রেলবোর্ডের সদস্য (ট্র্যাফিক) মহম্মদ জামশিদ বলেছেন, প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, অনুমতি ছাড়াই ওই লাইনে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। কী ধরনের কাজ চলছিল, সেটা স্পষ্ট নয়। রেল লাইনে যে কোনও কাজই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হয়। এমনকী, জরুরি ভিত্তিতে কাজ হলেও সেটা জানাতে হয়। রেল লাইনে সমস্যা থাকলে লাল সঙ্কেত দিতে হয়। এক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। রেল লাইনে কাজের জন্যই দুর্ঘটনা হয়েছে কি না বা কোনও কর্মী এর জন্য দায়ী কি না, সেটা বিস্তারিত তদন্ত হলেই জানা যাবে।
গতকাল দুর্ঘটনার পরেই রেলবোর্ডকে তদন্তের নির্দেশ দেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। আজকের মধ্যেই রেলবোর্ডের চেয়ারম্যানকে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার দায়িত্ব দেন রেলমন্ত্রী। সেই প্রাথমিক তদন্তেই রেলের গাফিলতির ইঙ্গিত মিলেছে। আগামীকাল থেকে শুরু হবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত। রেলের নিরাপত্তা বিভাগের কমিশনার শৈলেশ কুমার পাঠক তদন্ত করবেন। অন্তর্ঘাত, যান্ত্রিক ত্রুটি বা কোনও কর্মীর গাফিলতি ছিল কি না, সে সবই খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জামশিদ।
তিনি আরও বলেছেন, কয়েকজন ব্যক্তির কথাবার্তার অডিও ক্লিপ পাওয়া গিয়েছে। রেল লাইন সারানোর যন্ত্রপাতিও পাওয়া গিয়েছে ঘটনাস্থল থেকে। তদন্ত সবদিকই খতিয়ে দেখা হবে। বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেই কামরাগুলি লাইনচ্যুত হয়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এক্ষেত্রে ২০০ মিটার রেল লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা দরকার। রেলের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, গাফলতিতে বহু মানুষের মৃত্যু এবং জখম হওয়া, জীবন ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা বিপন্ন করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে রেল পুলিশ।
প্রসঙ্গত, শনিবার উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের কাছে খতৌলিতে উলটে যাওয়া পুরী-হরিদ্বার-কলিঙ্গ উৎকল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় এপর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। আহতদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮১ জন।লাইনচ্যুত ট্রেনটির ১০টি কামরা থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেসরকারি সূত্রে আহত শতাধিক, উলটে গিয়েছে কমপক্ষে ১৪টি কামরা। এদিনের দুর্ঘটনাকে ঘিরে দিনভর রেল, পুলিশ ও বেসরকারি সূত্রের পরিসংখ্যান বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
এরই মধ্যে দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে রেল ইঞ্জিনিয়াররা জানতে পেরেছেন, যে রেলপথে ট্রেন ছুটে যাচ্ছিল, সেখানেই মেরামতি চলছিল। ট্র্যাকের মাঝে হওয়া ফাঁক মেরামত করছিলেন অস্থায়ী ঠিকাদাররা। মেরামতির খবর জানানো হয়নি ট্রেনচালককে। খতৌলি স্টেশনের চিফ ম্যানেজার রাজেন্দ্র সিং দাবি করেছেন, তিনি নিজেও জানতেন না ওই ট্র্যাকে মেরামতির বিষয়ে। তাই চালককে সেই খবর জানাতে পারেননি। ট্র্যাকে মেরামতি চলাকালীন ট্রেনের গতি থাকা উচিত ঘণ্টায় ১০–১৫ কিলোমিটার। সেখানে ঘণ্টায় ১০৬ কিলোমিটার বেগে ছুটছিল এক্সপ্রেসটি।
এদিকে, এনডিআরএফ এবং রেলকর্মীরা জানিয়েছেন, পুরী থেকে হরিদ্বারগামী দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের উদ্ধারকাজ শেষ। এখন ট্র্যাএক মেরামতি করছেন রেলকর্মীরা। ১৪টি কামরা সরাতে দুটি ক্রেন আনা হয়েছে। বেশকিছু ট্রেনের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে সব কিছু তদারক করছেন উত্তর রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে কুলশ্রেষ্ঠ এবং দিল্লির ডিভিশনাল ম্যানেজার আর এন সিং। তাঁদের আশা সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে ওই শাখায় রেল চলাচল ফের চালু করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *