নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ আগস্ট৷৷ উপজাতি রমণী অপরহণের গুজব রটিয়ে আইপিএফটির উশৃঙ্খলতায় অগ্ণিগর্ভ হয়ে উঠে রাজধানী আগরতলার অদূরে বোধজংনগর ও আশপাশের এলাকা৷ সকাল থেকে পুলিশ সহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদের সাথে দফায় দফায় চলে আইপিএফটির উশৃঙ্খল কর্মী সমর্থকদের সংঘর্ষ৷ তাতে পুলিশ সহ বহু লোক জখম হয়েছেন৷ থানা, টিএসআর ক্যাম্প, শিল্প কারখানার ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে৷ ভাঙচুর চালানো হয়েছে পুলিশের গাড়ি ও প্রাইভেট কার এবং বাইক৷ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি বাইকে, স্থানীয় দোকানে৷ আইপিএফটির কর্মীদের হাতে ছিল গুলতী, পেট্রোল বোমা, ধারালো অস্ত্রশস্ত্রও৷ পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে এদিন এই হামালা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে৷ বোধজংনগরের এই হিংসার বিস্তার রাজ্যের অন্যান্য স্থানেও ছিটেফোটা পড়েছে৷ বিভিন্ন জাতি উপজাতির মিশ্র বসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ যেকোন সময় আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা রয়েছে৷
রাজ্যজুড়ে ত্রাসের আবহ তৈরী করে ক্ষুদ্র স্বার্থে মরিয়া আইপিএফ টি৷ পাহাড়ে উল্লঙ্গ নৃত্য, জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধে উশৃঙ্খলতা করার রেশ এখনো কাটিয়ে উঠেনি রাজ্যবাসী৷ সোমবার হিংসাত্মক হয়ে পুলিশ, টিএসআর সহ কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের উপর এলোপাথাড়ী হামলা চালায় আইপিএফটির উশৃঙ্খল কর্মী সমর্থকরা৷ বোধজংনগর থানা এলাকায় বিবেকানন্দ ত্রিপুরার স্ত্রী মল্লিকা ত্রিপুরা (৪০) টিএ আর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ানের জওয়ান রবীন্দ্র দেববর্মার সঙ্গে ফাস্টিনস্টি করতে গিয়ে স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়েছিল বে অভিযোগ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইপিএফটি পরিস্থিতি অগ্ণিগর্ভ করে তোলার চেষ্টায় ঘাটতি রাখেনি৷ মহিলা অপহরনের নাটক সাজিয়ে বোধজংনগর এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে৷ বোধজংনগর শিল্প নগরীতে শ্রমিকদের প্রবেশে বাধাদান করে মারমুখী হামলা শুরু করে৷ পুলিশ আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ ভাবে আলোচনার মাধ্যমে দাবীর যৌক্তিকতা বিবেচনা করে আশ্বস্থ করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছেন৷ পরিকল্পনামাফিক থানা ভাঙচুর, নিরীহ জনগণকে মারধোর, জানমাল হরনের সমস্ত চেষ্টা শুরু করে৷ মুহুর্তেই লেফুঙ্গা, বোধজংনগর সহ রাজ্যের নানাপ্রাপ্ত থেকে আই পি এফ টি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে৷ পুলিশের উপর এলোপাথাড়ী ইট, পাটকেল ছুড়েতে থাকলে পুলিশ পাল্টা প্রতিরোধের পথে নামেন৷ রাজ্যভাগের দাবী তোলে উশৃঙ্খল পার্টির বিদ্বেষীদের প্রতিরোধে পুলিশ শক্ত হয়ে উঠতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়িয়ে যায়৷ প্রশ্ণ উঠছে, মহিলা নিখোঁজের এফআইআর করতে গিয়ে গাড়ি ভর্তি করে ইট, রড নিয়ে বোধজংনগর থানায় নাশকতা শুরু করে৷ পথচারী মানুষের বাইক, সুকটি ভাঙচুর শুরু করতেই পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাদানে গ্যাস ছুড়ে৷ পুলিশ ব্যারিকেট ভেঙ্গে হিংসাত্মক আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশকে বেগ পোহাতে হয়েছে৷ আই পি এফ টি’র কর্মীদের লাঠি, রড, ইটের বৃষ্টিতে গুরুতর জখম হয়েছেন
বেশ কয়েকজন জওয়ান৷ রেহাই পায়নি খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকরা৷ কুকর্ম করতে গিতে মহিলা গা ঢাকা দিয়েছে৷ এই ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলে অভিযোগ স্থানীয়দের৷ বিশাল টি এস আর, সি আর পি এফ ও রাজ্য পুলিশের বিশাল ফোর্স গুলি চালাতে তৎপর হলে ক্রমান্বয়ে পিছু হটে উন্মত্ত তান্ডবকারী সমস্ত উশৃঙ্খল কর্মীরা৷ পরিস্থিতি বিশৃঙ্খলতা মাত্রা ছাড়িয়ে যেতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পশ্চিম জেলা শাসক মিলিন্দ রামটেকে, পুলিশ সুপার অভিজিৎ সপ্তর্ষী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী সবাইকে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে৷ আশঙ্কা, ২৩ শে আগস্টের উশৃঙ্খলতার ভয়ে রাজ্য আরক্ষা প্রশাসন অনুমতি না দেওয়ায় হিংস্র হয়ে উঠেছে৷ প্রশাসনকে বাধ্য হয়ে জারি করতে হয়েছে ২৪ ঘন্টার জন্য ১৪৪ ধারা৷ দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালিয়ে ১৪৪ ধারার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হলেও সাধাবণ মানুষের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ থানা লন্ডভন্ড করে দেওয়ায় স্থানীয় মানুষ আতঙ্কিত৷ যতদূর জানা গিয়েছে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে পলায়ন করতে শুরু করেছেন৷ বোধজংনগরের বিস্তির্ণ এলাকায় ফের হামলা চালানোর ভয়ে বিশাল পুলিশ ও টিএসআর মোতায়েন করা হয়েছে৷ অন্যদিকে, বিকাল থেকেই আনন্দনগরে আইপিএফটি বাঙালীদের উপর আক্রমণ শানিত করেছে৷ বাজারে বাঙালী ব্যবসায়ীর গাড়ি ভাঙচুর করে দা, বল্লম নিয়ে ব্যবসায়ীকে প্রাণনাশ করতে উদ্যোত হয় আই পি এফ টি’র হার্মাদ বাহিনী৷ ক্ষুব্ধ বাজার ব্যবসায়ী অবরোধ করতে গিয়ে হাজার উল্লঙ্গধারী বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছে৷ শ্রীনগর থানার পুলিশ ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে৷ বাজার গুটিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রাণরক্ষায় পলায়ন করেছেন৷ গোটা রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি আইপিএপটি অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে রাজ্য ভাগের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ৷
এদিকে, বোধজংনগরে থানা ঘেরাও, অবরোধ, হামলা দখল নেবার চেষ্টা টানটান উত্তেজনার মধ্যে আইপিএফটির রাজ্য সভাপতি নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্র্ম এই ঘটনাক্রমের দায় নিতে অস্বীকার করেছে৷ তবে উপজাতিদের পৃথক রাজ্য হলে এধরনের সমস্যা হত না বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ আইপিএফটির রাজ্য সভাপতি নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্র্ম এই ঘটনার সঙ্গে আইপিএফটির যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, স্থানীয় এলাকার জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে এসব ঘটনা সংগঠিত করেছে৷ এদের মধ্যে আইপিএফটি যেমন থাকতে পারে তেমনি সিপিআইএমের সমর্থকরাও থাকতে পারে৷ এটি কোন ভাবেই আইপিএফটির কর্মসূচি নয়৷ রাজ্য প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে এসব ঘটনা ঘটছে৷ পৃথক রাজ্য হবে স্থানীয় উপজাতি অংশের জন্যগণের সমস্যা নিরসনে আরও কার্যকরী ভূমিকা নেওয়া যেতে পারত৷ যা এখন হচ্ছেনা৷
অন্যদিকে, মিথ্যাশ্রিত গুজব রটিয়ে আই পি এফ টি’র দুর্বৃত্তরা আজ সকাল থেকে বোধজংনগর থানা, টি এস আর ব্যাটেলিয়নের স্থাপনা, ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের অফিস আক্রমণ, টি এস আর -পুলিশের ওপর হিংস্র আক্রমণ এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির যে ক্ষতিসাধন করেছে সি পি আই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদমন্ডলী তার তীব্র নিন্দা করছে৷
দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বোধজংনগর থানা এলাকার বনিক্য চৌমুহনী থেকে মালতী দেবী ত্রিপুরা নামে একজন মহিলা অপহৃত হয়েছে বলে আই পি এফ টি’র লোকেরা ৩১ জুলাই গভীর রাত থেকে ফেসবুকে গুজব ছড়ায় এবং একটি ক্যাবল টেলিভিশন চ্যানেলেও গুজবে ইন্ধন জোগায়৷ আজ সকাল থেকে আই পি এফ টি’র লোকেরা রোধজংনগর থানার ওপর আক্রমণ চালিয়ে ভাঙচুর করে৷ দুপুরে আশেপাশের কয়েকটি মহকুমা থেকে আরও লোক জড়ো করে ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের অফিস আক্রমণ করে যথেষ্ট ভাঙচুর করে৷ কম্পিউটার সহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রি লুট করে৷ আরেকটি প্রতিষ্ঠানের দুটি বাইক ও সুকটি পুড়িয়ে দেয় এবং গোডাউনে রাখা মেশিনপত্র ভাঙচুর করে৷ রাস্তায় পার্ক করে রাখা ৫টি বাইকে আগুন দেয় এবং ৫টি বাইক ও একটি গাড়ি ভাঙচুর করে, টি এস আর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ানের কমিউনিটি হল ভাঙচুর করে৷ পুলিশ টি এস আর হিংস্রাশ্রয়ী আক্রমণে বাধা দিতে গেলে তাদের ওপর ইট, গুলতি, তীর, ধনুক নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে প্রচন্ড প্ররোচনা ও উস্কানি দেয়৷
যে মহিলা অপহৃত হয়েছে বলে এরা গুজব রটায় সেই মালতী দেবী ত্রিপুরা গন্ডাছড়া মহকুমার রইস্যাবাড়িতে নিজ বাড়িতেই রয়েছেন৷ মহিলাটি জানায়, তিনি গতকাল আগরতলায় কোর্টে গিয়েছিলেন এবং নিরাপদেই ফিরে এসেছেন৷ কেউ তাকে অপহরণ করেনি৷
অভিচরনে একটি নির্মাণ কাজ সেরে ৩ জন নির্মাণ শ্রমিক বাইকে বাধারঘাটের বাড়িতে ফিরছিলেন৷ একদল সশস্ত্র আই পি এফ টি দুসৃকতিকারী তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে৷
ঘটনাবলীতে এটা পরিস্কার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, শান্তি-সম্প্রীতি বিঘ্নিত করার ঘৃন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পূর্ব পরিকল্পনার আই পি এফ টি’র লোকেরা মহিলা অপহরণের গুজব রটিয়ে বোধজংনগর থানা, টি আই ডি সি অফিস, বেসরকারি সংস্থার অফিস আক্রমণ, ভাঙচুর, অগ্ণিসংযোগ, লুটপাট করেছে এবং পুলিশ -টি এস আর-কে আক্রমণ করেছে৷
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী আই পি এফ টি’র এই জঘন্য ষড়যন্ত্রমূলক আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে৷ গুজব রটনাকারী এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ক্ষতিসাধনকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দিতে দাবি জানাচ্ছে৷ শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্টের যে কোনও অপচেষ্টা ঐক্যবদ্ধ ভাবে ব্যর্থ করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে৷

