অবরোধ ৫ম দিন অতিক্রান্ত, দিল্লীতে পাত্তা পাচ্ছে না আইপিএফটি নেতারা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪, জুলাই৷৷ পৃথক রাজ্যের দাবীতে দিল্লির দরবারে গিয়ে কোন ধরনের গুরুিত্ব না পেয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে আইপিএফটির নেতারা৷ জাতীয় সড়ক এবং রেল পথ ছাড়াও এবার রাজধানীতে আসার যাবতীয় বন্ধ করে দেবার হুমকি দিয়েছে আইপিএফটির নেতারা৷ একই সঙ্গে রাজনৈতিক দোষারোপ আরও তীব্র হচ্ছে৷ গতকাল আইপিএফটির দুই সদস্যের এক প্রতিনিধি দল যথাক্রমে দলের সাধারণ সম্পাদক মেবার কুমার জমাতিয়া এবং দলের যুব সংগঠনের সভাপতি বীরেন্দ্র রিয়াং দিেিল্ল উড়ে যান৷ তারা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের রাষ্ট্র মন্ত্রী ডাঃ জীতেন্দ্র সি’এর সঙ্গে সাক্ষাত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন৷ এমনকি অন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাত করার চেষ্টা করলে তাও ব্যর্থ হয়৷ জানাগেছে, রাজ্য বিজেপির নেতারা ত্রিপুরা থেকে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তার ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাদের সাক্ষাতের আবেদন নাকচ করে দেন৷ আজ শুক্রবার সকালেও আইপিএফটির এই প্রতিনিধিদলের নেতারা পুনরায় সাক্ষাতের আবেদন করেন এবং যথারীতি তা নাকচ হয়ে যায়৷ এই অবস্থায় আইপিএফটি হুমকি দিয়েছে আলোচনায় না বসলে তারা জাতীয় সড়ক আর রেল অবরোধেই নয় তারা রাজ্যের যাবতীয় বিকল্প সড়ক যা রাজধানী আগরতলার সঙ্গে যুক্ত তা বন্ধ করে দেবে৷ সর্বত্র অবরোধ গড়ে তোলা হবে৷ পৃথক রাজের দাবীতে আইপিএফটির ডাকা অনির্দিষ্টকালের জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধ আজ পঞ্চম দিনে পড়েছে৷ পরিস্থিতি ক্রমেই অন্য খাতে বইতে শুরু করেছে৷ অন্যদিকে এদিকেবরোধ স্থল খামতিংবাড়িতে অবরোধ কারীদের মধ্যে অসুস্থের সংখ্যা বাড়ছে৷ ইতিমধ্যেই জাতীয় সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ফলে প্রচণ্ড দুর্র্ভেগে পড়েছেন মানুষ৷ এর উপর যাবতীয় বিকল্প পথ গুলো বন্ধ করে দিলে পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয়ে উঠবে বলে ধারনা করা হচ্ছে৷ দূরপাল্লার রেল যাত্রীরা বদরপুর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে আসতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়ছেন৷ সমস্যার মুখে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের নিত্য রেল যাত্রীরা৷ ট্রেন চলাচল কার্যত বন্ধ থাকায় বিমান ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে৷ ফলে দুর্র্ভেগ আরও বাড়ছে৷ সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রেণীর মানুষের হাতে কাজ নেই৷ ট্রেন চলাচল বন্ধে থাকায় আগরতলা স্টেশনে অপেক্ষমাণ বেশ কয়েকজন যাত্রী দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন৷ স্টেশনে ভিড় জমে আাছে৷ ত্রিপুরা সুন্দরী, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের মতো দূরপাল্লার ট্রেন সব বন্ধ৷ উপজাতি প্রধান এলাকা, দূরবর্তী এলাকা গুলোতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন৷ রাজধানী আগরতলা এবং অন্যান্য মহকুমা শহর গুলোতে জিনিষপত্রের মূল্য বৃদ্ধির হার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে৷
বদরপুর রেলস্টেশনে চরম দুর্র্ভেগের মধ্যে পরেছেন ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেসে করে আসা রাজ্যের রেলযাত্রীরা৷ বিগত তিন দিন ধরে তাদের প্রায় অনিদ্রা ও অনাহারে কাটাতে হয়েছে৷ কারণ বদরপুর স্টেশনে তাদের স্থান সঙ্কুলান হয়নি৷ জানা গেছে, স্টেশনের অপেক্ষমাণ কক্ষ তথা ওয়েটিং রুমগুলিতে প্রায় তিল ধারণের জায়গা পাওয়া যায়নি৷ স্টেশনে রিটায়ারিং রুম রয়েছে মাত্র ছয়টি৷ বদরপুর জুড়ে ভালো-মন্দ মিলিয়ে পর্যাপ্ত হোটেলও নেই৷ ফলে বহু যাত্রীর পক্ষে রাতে চোখের পাতা এক করা সম্ভব হয়নি৷ পাওয়া যায়নি ঘুমানোর জায়গা৷ ঠিকভাবে বসেও কাটাতে পারেননি অনেকে৷ পাওয়া যায়নি পানীয় জল ও খাদ্য৷ শুধু তাই নয় যাত্রীদের সকালে প্রাকৃতিক কর্ম করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে৷ জানা গেছে, আগরতলা ও রাজ্যের অন্যান্য স্থানের জন্য বিকল্প পথে বাসে মাথাপিছু নূন্যতম এক হাজার থেকে সর্র্বেচ্চ দু’হাজার করে ভাড়া গুনতে হয়৷ ছোট গাড়ি পিছু ভাড়া নূন্যতম ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার অথবা তার্য বেশী নেওয়া হচ্ছে৷ তার উপর প্রবল বর্ষণে নাকাল হতে হচ্ছে সবাইকে৷ সব মিলিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের৷ আইপিএফটির একটি গোষ্ঠীর ডাকে রাজ্যের জিরানিয়া ও তেলিয়ামুড়া মহকুমার মাঝামাঝি অংশে জাতীয় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ চলছে৷ টানা পাঁচদিনের অবরোধের মানুষের দুর্ভোগ বেরেই চলেছে৷ বিকল্প জাতীয় সড়ক চালু থাকলেও গুনতে হচ্ছে বদরপুরে৷ আগরতলা-ধর্মনগর আপ ও ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে৷ আগরতলা-শিলচর আপ ও ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলছে কুমারঘাট পর্যন্ত৷ এইদিকে আইপিএফটির অবরোধের ফলে প্যাসেঞ্জার এবং এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে সাথে লাগানো পার্সেল ভ্যানে করে আগরতলায় মালপত্র আনা সম্ভব হচ্ছে না৷ এতে খাদ্য সহ অন্যান্য সামগ্রীর যোগানে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে৷