সিপিআইএম-বিজেপি তরজা, আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করলেন না এন সি দেববর্মা, অবরোধকারীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বল প্রয়োগ করবে না সরকার ঃ অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/তেলিয়ামুড়া, ১১ জুলাই৷৷ রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ আন্দোলন থেকে সরছে না আইপিএফটি এন সি গোষ্ঠী৷ এনিয়ে রাজ্যপালের কাছে কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে দাবীসনদ পেশ করেছে আইপিএফটি৷ এদিকে, অবরোধকারীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বল প্রয়োগ করবে না রাজ্য সরকার৷ তা আজ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা৷ তবে, এই অবরোধ আন্দোলন কর্মসূচীকে ঘিরে সিপিএম এবং বিজেপির মধ্যে তরজার লড়াই শুরু হয়েছে৷ সিপিএমের অভিযোগ বিজেপির মদতে আইপিএফটি রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ সংগঠিত করছে৷ বিজেপির পাল্টা অভিযোগ সিপিএম আইপিএফটিকে মদত দিচ্ছে৷ এদিকে, মুখ্যসচিব ও পুলিশ প্রশাসন সমগ্র বিষয়ের উপর ক্রমাগত পর্যালোচনা করছে৷ অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন৷

আইপিএফটি’র রেল ও সড়ক অবরোধকারীদের উপর প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামফ্রন্ট সরকার৷ তবে সামগ্রিক পরিস্থিতির উফর নজরদারী আরও জোরদার করা হয়েছে৷ রাজ্য মন্ত্রীসভায় বৈঠক শেষে রাজ্যের তথ্য সংসৃকতি ও জনসংভরণ দফতরের মন্ত্রী ভানু লালা সাহা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রাজ্য সরকার আন্দোলনকারীদের উপর বলপ্রয়োগ করবে না৷ তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে৷ আর রাজ্য সরকার কোন অবস্থাতেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বিরুদ্ধে শক্তির প্রয়োগ করতে পারে না৷ বামফ্রন্ট সরকারের নীতি অবস্থান থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তিনি বলেন, ত্রিপুরায় পৃথক রাজ্যের দাবী অযৌক্তিক৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত৷ আন্দোলন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে৷ কারণ এর পেছনে জন সমর্থন নেই৷ তারা যতদিন পারে অবরোধ চালিয়ে যাক৷ রাজ্য সরকার শান্তিপূর্ণ অবরোধকারীদের উপর বলপ্রয়োগ করবেনা৷ তিনি আরও বলেন, রাজ্য সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাজ্যে নিয়ে আসার জন্য বিকল্প পথ গুলি খতিয়ে দেখছে৷ রাজ্যে ৮১ দিনের চাল মজুত আছে৷ এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুতও মোটামুটি ভাবে ভাল পরিমাণেই রয়েছে৷ তবে অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হলে সমস্যা হবে৷ যদিও রাজ্য সরকার অন্যান্য বিকল্প রাস্তা গুলি ব্যবহার করে পেট্রোলিয়াম জাতীয় সামগ্রী রাজ্যে নিয়ে আসতে শুরু করেছে৷ এই পথ গুলি দিয়ে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীও আনা যাবে৷ কিন্তু অসম-আগরতলা জাতীয় সড়কের মত ঐ পথ গুলি ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য বিশেষ উপযুক্ত নয়৷ তবুও আপাতত কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ মন্ত্রী ভানু লাল সাহা আশা প্রকাশ করে বলেন, অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হবে না৷ তবে রাজ্য সরকারের তরফে নজরদারী আরও জোরদার করা হয়েছে৷ অবরোধস্থল ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় পরিস্থিতির উপরতীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা হচ্ছে৷ যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে৷

যদিও রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের গতকালই গ্রেফতার বরন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু তারা তা নাকচ করে দিয়েছিল৷ তবে সচিবালয়ে আজ সকালে এক বৈঠকের পর এখন আবার রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে৷ অবরোধ প্রত্যাহার কিংবা শান্তিপূর্ণভাবে গ্রেফতার বরন করার জন্য নিয়ে আলোচনা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷

প্রশাসনের তরফে দেওয়া আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করলেন না আইপিএফটি’র রাজ্য সভাপতি নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা৷ মঙ্গলবার তিনি বলেন, আলোচনা হতেই পারে তবে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে না৷ পৃথক রাজ্যের দাবীতে আইপিএফটি’র ডাকা অনির্দিষ্টকালের জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ত্রিপুরা৷ এই অবস্থায় আন্দোলনকারীদের অবরোধ প্রত্যাহার কিংবা শান্তিপূর্ণভাবে গ্রেফতার বরন করা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে৷ প্রশাসনের আলোচনায় প্রস্তাব সম্পর্কে তাদের মতামত জানতে চাইলে শ্রীদেববর্মা বলেন, আলোচনা হতেই পারে তবে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে না৷ গ্রাম পাহাড় থেকে আরও সমর্থক আসছেন৷ প্রশাসন গ্রেফতার বরন করার প্রস্তাব নিয়ে এলে তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দেখা হবে৷ গ্রেফতার বরন করার প্রস্তাব পুনবিবেচনা করা যেতে পারে৷ এদিকে, আইপিএফটির এক প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার রাজ্যপালের কাছে কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে এক দাবী সনদ পেশ করেছে৷ দাবী সনদে উল্লেখ করা হয়েছে, পৃথক রাজ্যের দাবীর ভিত্তিতে কেন্দ্র আলোচনা করুক৷ এই দাবী যতদিন পর্যন্ত না মানা হবে ততদিন অবরোধ আন্দোলন জারি থাকবে৷

এদিকে, আইপিএফটি’র ডাকা অনির্দিষ্টকালের জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধ আজ দ্বিতীয় দিনে পড়ল৷ আইপিএফটি’র অবরোধের জেরে বহিঃরাজ্যের সঙ্গে তা বটেই রাজ্যের বহু অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ উপজাতি ও মিশ্র জনবসতি পূর্ণ এলাকা গুলিতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ অবরোধের জেরে রাজ্যের ট্রেন চলাচলে বিরূপ প্রভাব পড়েছে৷ যাবতীয় রেল চলাচল পুনরায় বাতিল করা হয়েছে৷ আংশিক অথবা পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে তিন জোড়া ট্রেন৷ বন্ধ হয়ে আছে এই পথে সড়ক যোগাযোগও৷ সড়ক ও রেল পথে বহিঃরাজ্যের সঙ্গে ত্রিপুরার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷ বড়মুড়া পাহাড়ের অবরোধে স্থলে ক্যাম্প করে বসেছে জেলা শাসক এবং জেলা পুলিশ সুপার সহ উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরা৷ রাতের দিকে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা হ্রাস পেলেও সকালে তা আবার বৃদ্ধি পেয়েছে৷ মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর সংখ্যক সুরক্ষা কর্মী৷

পৃথক রাজ্যের দাবীতে আইপিএফটি’র ডাকা অনির্দিষ্টকালের জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু৷ শাসক দল সিপিআইএম ও বিরোধী বিজেপি একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে শুরু করেছে৷ তবে উভয় পক্ষই মনে করে আন্দোলন ব্যর্থ৷ রাজ্যের এডিসি এলাকাকে নিয়ে পৃথক তিপ্র্যালান্ডের রাজ্য গঠনের দাবীতে আদিবাসী ভিত্তিক রাজনৈতিক দল আইপিএফটি-র এন সি দেববর্মা গোষ্ঠীর উদ্যোগে সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ শুরু হয়েছে৷ তারা খোয়াই জেলার বড়মুড়া পাহাড়ের খামথিং বাড়ি এলাকায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছে৷ আজ সকাল থেকেই দলের কর্মী সমর্থকরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে নিজেদের দাবির সমর্থনে স্লোগান দেন৷ অবরোধ আন্দোলনে যোগ দিতে প্রত্যন্ত এলাকা গুলো থেকে বহুসংখ্যক উপজাতি যুবক বড়মুড়া পাহাড়ের খামথিং বাড়িতে এসে জড়ো হয়েছে৷ রবিবার রাত থেকে বেশ কয়েকবার সুরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলেও৷ এখনও কোনও প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় না৷ এই অবস্থায় আন্দোলনকারীদের আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে৷ আন্দোলনের নেতা আলোচনার প্রস্তাব খারিজ না করলেও অবরোধ তুলে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন৷ অবরোধ আন্দোলনের জেরে কার্যত স্বব্ধ ত্রিপুরা৷ অন্যান্য রাজ্য ও ত্রিপুরা ভিতরে বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না৷ পরিস্থিতি নিয়ে উপজাতি অঞ্চলের মানুষের মনে উত্তেজনা রয়েছে৷ এরই মধ্যে এই আন্দোলন নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউত্তোর শুরু৷ এক দিকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেছেন, আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল সিপিআইএম এই অবরোধের মদত দিয়েছে৷ কিন্তু পৃথক রাজ্যের দাবীতে জনগণের সমর্থন ছিল না৷ ফলে তা ব্যর্থ হতে চলেছে ৷ এদিকে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বলেন, আন্দোলন ব্যর্থ হবেই৷ তবে রাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য বিজেপি’র মদতে আন্দোলন -আন্দোলন খেলা শুরু হয়েছে৷ এর পেছনে উপজাতি অংশের মানুষের কোন সমর্থন নেই৷

পৃথক রাজ্যের দাবীতে আইপিএফটির ডাকা অনির্দিষ্টকালের জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধ আজ দ্বিতীয় দিনে পরল৷ অবরোধের জেরে বাতিল হয়েছে বহু ট্রেন৷ বন্ধ রয়েছে সড়ক পথ৷ ফলে বহিঃরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ যোগাযোগ করা যাচ্ছে না রাজ্যের বহু অঞ্চলের সঙ্গে৷ উপজাতি ও মিশ্র জনবসতি পূর্ণ এলাকা গুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ অবরোধের জেরে রাজ্যের ট্রেন চলাচলে বিরূপ প্রভাপ পরেছে৷ যাবতীয় রেল চলাচল পুনরায় বাতিল করা হয়েছে৷ আংশিক অথবা পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে তিন জোড়ো ট্রেন৷ বন্ধ হয়ে আছে এই পথে সড়ক যোগাযোগও৷ সড়ক ও রেল পথে বহিঃরাজ্যের সঙ্গে ত্রিপুরার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷ বড়মুড়া পাহড়ের অবরোধ স্তলে ক্যাম্প করে বসেছে জেলা শাসক এবং জেলা পুলিশ সুপার সহ উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরা৷ রাতের দিকে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা হ্রাস পেলেও সকালে তা আবার বৃদ্ধি পেয়েছে৷ মুখোমুুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর সংখ্যক সুরক্ষা কর্মী৷