নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জুলাই৷৷ গত তিন বছর ধরে আমাদের দেশের সামাজিক পরিমন্ডলকে বিষাক্ত করে তোলা হচ্ছে৷ একটা অশুভ শক্তি ধর্ম-সম্প্রদায়ের নামে দেশে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে৷ গো-রক্ষার নামে দেশের সংখ্যালঘু জনগণকে নানা ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে৷ দলিত অংশের মানুষদের নির্বিচারে আক্রমণ করা হচ্ছে৷ কে কি খাবে, কে কি লিখবে এটাও ঠিক করে দেয়া হচ্ছে৷ আমাদের রাজ্যে একটি সাম্প্রদায়িক দল ধর্ম-বর্ণ ভেদে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরী করার চেষ্টা করছে৷ রাজ্যে অশান্তির পরিমন্ডল যাতে সৃষ্টি না হয় সে জন্য সকল অংশের মানুষকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে৷ সোমবার ধর্মনগরের বি বি আই মাঠে আয়োজিত ৬৮ তম রাজ্যভিত্তিক বনমহোৎসবের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একথা বলেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতির কোলে আমাদের সৃষ্টি এবং প্রকৃতির কোলেই আমরা বেড়ে উঠি৷ তাই প্রকৃতি আমাদের কাছে মায়ের মতো৷ মা যদি অসুস্থ হয়, আমরা চিন্তিত হই, উদ্বিগ্ণ হই৷ ঠিক তেমনি প্রকৃতি যদি অসুস্থ হয় আমাদের জীবনে নানা বিপর্যয় নেমে আসে৷ তাই প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদের সকলকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতি আজ নানা ভাবে আক্রান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে৷ পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ছে, দূষণ বাড়ছে, পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে, ওজোন স্তর বায়ু মন্ডলের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না এবং প্রাণীকূল যারা বনাঞ্চলে বাস করে তারাও বিলুপ্ত হচ্ছে৷ সব মিলিয়ে পরিবেশে একটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ তাই পরিবেশকে রক্ষা করতে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী ভাবে সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই কাজ করতে না পারলে আমরা ধবংসের কিনারায় চলে যাবো৷ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনমহোৎসবের প্রাসঙ্গিকতা উপলব্দি করতে হবে৷ তিনি বলেন, পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান দেওয়া ক্রমশঃ কঠিন হয়ে পড়ছে৷ অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের বসবাসের স্থান ক্রমশঃ সংকুচিত হচ্ছে৷ মানুষ এখন বনভূমি নষ্ট করে বাসস্থান তৈরী করছে৷ ফলে বনভূমি কমে যাওয়ার কারণে ভূমিক্ষয় যেমন হচ্ছে তেমনি নদীর জলস্তরও কমে যাচ্ছে৷ ফলে অল্প বৃষ্টিতেই নদী নালা ভরাট হয়ে বন্যার সৃষ্টি করছে৷ মানুষের সম্পদ ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাই বনভূমিকে রক্ষা করা না গেলে মানব সভ্যতাও ধবংস হয়ে যাবে৷ তাই বনমহোৎসব করতে হচ্ছে মানুষকে সচেতন করতে৷ আমরা সবাই সচেতন না হলে এই বনমহোৎসবের প্রাসঙ্গিকতা হারাবে৷
তিনি বলেন, আমাদের রাজ্য সকল অংশের মানুষের সহযোগিতায় রক্তদান ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে৷ রক্তদানের মতো বৃক্ষরোপণেও সফলতা অর্জনের উদ্যোগ নিতে হবে৷ বিবাহবার্ষিকী, মৃত্যু দিবস এ ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠানেও বৃক্ষরোপণ করার উদ্যোগ নিতে মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান৷ নবীন প্রজন্মের কাছেও বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠান সহ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ে বেশী করে বৃক্ষরোপণে উদ্যোগে নিতে হবে৷ আমরা লক্ষ্য করেছি, এক সময় জীবিকার জন্য যারা বৃক্ষ ছেদন করতেন তাদেরকে সচেতন করে তুলতে বন দপ্তর রাজ্য ব্যাপী বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে৷ এতে অনেক সাফল্য এসেছে৷ দেখা গেছে এক সময় যারা বন ধবংস করতেন তারাই এখন যৌথ বনায়ণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় বন সংরক্ষনের ভূমিকা নিয়েছেন৷ এতে লক্ষাধিক পরিবারের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং বন নিধনও কমেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছরই বনমহোৎসব উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করা হয়৷ এই গাছগুলিকে বেড়ে উঠতে সবাই ভূমিকা নিন৷ বৃক্ষগুলি যাতে রক্ষ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে৷ তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ এবং দামী গাছপালা রয়েছে৷ সেগুলি দিয়ে মূল্যবান সামগ্রী তৈরী করে রাজ্যের বাইরে পাঠানো হচ্ছে৷ এরফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷ কাজেই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার সাথে সাথে আমাদের আয় উপার্জনের জন্য ও বনকে রক্ষা করতে হবে৷
৬৮তম বনমহোৎসবের উদ্বোদনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বিজ্ঞান -প্রযুক্তি ও পরিবেশ মন্ত্রী বিজিতা নাথ বলেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য বন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মানব জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনেও বনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ তাই রাজ্য সরকার বৃক্ষরোপণের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন৷ অনুষ্ঠানের সভাপতি বনমন্ত্রী নরেশ চন্দ্র জমাতিয়া বলেন, রাজ্য সরকার সীমাবদ্ধ আর্থিক ক্ষমতায় মধ্য দিয়েও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি বন সৃজনেও গুরুত্ব দিয়েছে৷ বন সৃজনের লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাগুলিকেও এগিয়ে আসার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন, বিধায়ক ফয়জুর রহমান, উত্তর ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিমা দাস, ধর্মনগর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন শক্তি ভট্টাচার্য্য এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলা শাসক শরদিন্দু চৌধুরী৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর উপস্থিত অতিথিগণ বি বি আই মাঠ সংলগ্ণ স্থানে বৃক্ষরোপণ করেন৷
2017-07-04

