বিচারপতির অভাবে বিলম্বিত হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়া ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ জুন৷৷ পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারপতির অভাবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে৷ তাতে গণতন্ত্র দূর্বল

সোমবার ত্রিপুরা হাইকোর্ট কেইস ইনফরমেশন সিস্টেমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বক্তব্য রাখেন, মঞ্চে মুখ্য বিচারপতি টি ভাইপেই, বিচারপতি শুভাশিষ তলাপাত্র৷ ছবি নিজস্ব৷

হবে এবং ক্রমেই বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আকর্ষণও কমবে৷ সোমবার ত্রিপুরা হাইকোর্ট কেইস ইনফরমেশন সিস্টেম (সিআইএস), ন্যাশনাল কোর ভারশন ১০ পদ্ধতির আনুষ্ঠানিক সূচনা করে এই অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ সাথে তিনি মহিলাদের উপর সংঘটিত অপরাধ কমিয়ে আনতে বিচারপতি, বিচারক এবং জুডিশিয়ারি অফিসারদের আরো সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করার আহ্বান জানান৷ একাজে আইনজীবীদের সহযোগিতাও চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিচার ব্যবস্থায় যে নতুন পদ্ধতি সংযোজিত হয়েছে তা বিচার প্রক্রিয়ায় নিঃসন্দেহে খুবই সহায়ক ভূমিকা নেবে৷ কিন্তু, বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এখন বিশেষভাবে ভাবনার সময় এসেছে৷ তিনি বলেন, এ রাজ্যে বহু মামলা এখনো নিস্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে৷ আগের তুলনায় সংখ্যা অনেক কমেছে, কিন্তু এখনো প্রচুর মামলা আদালতগুলিতে পড়ে রয়েছে৷ তাঁর প্রশ্ণ, দীর্ঘদিন বিচারের অপেক্ষায় মামলা কেন পড়ে থাকবে৷ তিনি মনে করেন, বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়ার মূল কারণ পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারপতির অভাব৷ বিভিন্ন স্তরেই বিচারপতির যথেষ্ট অভাব রয়েছে৷ এই সমস্যার সমাধানে তাঁর ধারণা, চলমান পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন, সম্প্রসারণ এবং উৎকর্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে৷ পাশাপাশি বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি আরো সহজসাধ্য করা দরকার বলেও তিনি মনে করেন৷ কারণ, এই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে কেবলমাত্র আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নতুন পদ্ধতি চালু করলেই মূল সমস্যার সমাধান হবে না, দৃঢ়তার সাথে জানান মুখ্যমন্ত্রী৷
তিনি বলেন, বহু মামলা আদালতে বছরের পর বছর ধরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় পড়ে আছে, এমন অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে৷ কোন কোন মামলা দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নিষ্পত্তি হয়নি৷ তাই, এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব না দেওয়া হলে ক্রমেই বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমে যাবে৷ তাতে গণতন্ত্র দূর্বল হয়ে পড়বে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেন৷ এজন্য তিনি এই সমস্যার সমাধানে বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷
এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট, ভারত সরকার সাথে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রককে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন৷ রাজ্যের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, ত্রিপুরা হাইকোর্টে মুখ্য বিচারপতি সহ চারজন বিচারপতি ছিলেন৷ কিন্তু এখন দীর্ঘদিন ধরে দুইজন বিচারপতির আসন খালি পড়ে রয়েছে৷ তাঁর ধারণা, ত্রিপুরা হাইকোর্ট এবিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে৷ কিন্তু, তা সত্বেও কেন এখনো দুইজন বিচারপতির আসন খালি পড়ে রয়েছে তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না৷ অবশ্য বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ভারত সরকার এবং সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে বিতর্ক দীর্ঘদিনের, সেকথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবিষয়ে অনেকগুলি প্রশ্ণ তুলেছিলেন৷ তার একটিরও উত্তর আজ পর্যন্ত মানুষ জানতে পারেননি৷ তা সত্বেও মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়ার সমস্যার সমাপ্তি হওয়া উচিৎ৷
মুখ্যমন্ত্রী এদিন রাজ্যে মহিলাদের উপর সংঘটিত অপরাধ কমিয়ে আনার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন৷ তিনি মহিলাদের উপর সংঘটিত অপরাধ কমিয়ে আনতে জুডিশিয়ারি অফিসার, বিচারক ও বিচারপতিদের আরো সক্রিয় ভূমিকা নিতে আহ্বান জানান৷ একাজে সহযোগিতায় আইনজীবীরাও এগিয়ে আসুক তা চাইছেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন তদন্তকারী সংস্থা এবং মামলা পরিচালনা যাঁরা করেন তাঁদের উৎকর্ষ বাড়ানো কিভাবে সম্ভব সে বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছেন৷
এদিকে, অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা হাইকোর্টের মুখ্য বিচারপতি টি ভাইপেই বলেন, গন্ডাছড়া, কাঞ্চনপুর ও লংতরাইভ্যালী ব্যতীত রাজ্যের সমস্ত আদালতে কেইস ইনফরমেশন সিস্টেম পদ্ধতির চালু করা হয়েছে৷ অবশিষ্ট তিনটি আদালতেও চালু করার কাজ চলছে৷ শীঘ্রই শুরু হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷ স্বাগত বক্তব্যে বিচারপতি শুভাশিস তলাপাত্র বলেন, নতুন সংযোজিত পদ্ধতিতে বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে মামলা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জানা যাবে৷ ইন্টারনেটের সাহায্যে সহজ ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কেও তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেন৷