নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ১৯ মে৷৷ বিতর্ক জিইয়ে রেখে অবশেষে তেরো দিন পর উদ্ধারকৃত গ্রেনেডগুলি বিস্ফোরণ করা হয়৷ গ্রেনেড বিস্ফোরণের ফলে আশেপাশের এলাকায় সাতটি বাড়ির ঘরের দেওয়ালে ফাঁটল দেখা দিয়েছে৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷ এই ব্যাপারে কৈলাসহর মহকুমা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও জনমনে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে৷
সংবাদে প্রকাশ, গত সাত মে দুপুরে ঊনকোটি জেলার কৈলাসহরের গৌরনগর এলাকায় পুলিশ সুপারের অফিসের পাঁচশ মিটারের মধ্যে এবং কৈলাসহর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের দুইশ মিটারের মধ্যে গ্রামবাসীরা মাটি কাটতে গিয়ে কয়েকটি গ্রেনেড পেয়েছিল৷ পরবর্তী সময়ে কৈলাসহর থানায় গ্রামবাসীরা খবর দেয়৷ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেনেডগুলি দেখে বোম স্কোয়াডকে খবর দেয়৷ বোম স্কোয়াড ঘটনাস্থলে গিয়ে বোমাগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে৷ তারপর চলে খনন কাজ৷ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাটি কেটে মোট ১৫১টি গ্রেনেড উদ্ধার করার পর মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ গ্রেনেডগুলি পরীক্ষা করার জন্য আগরতলা থেকে স্পেশাল বোম স্কোয়াড যায়৷ পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসন এবং আরক্ষা প্রশাসন কৈলাসহর সিজেএম কোর্টে কাছে আবেদন জানায় গ্রেনেডগুলি বিস্ফোরণ করার জন্য৷ সেই মোতাবেক আসামের শিলচরের মাছিমপুর থেকে সেনা বাহিনীর তিন সদস্যক একটি টিম এবং আসাম রাইফেলসের ৩০ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের পাঁচ জনের একটি টিম গতকাল কৈলাসহরে আসে৷ সেনাবাহিনীর তিনজনের টিমের নেতৃত্বে ছিলেন কর্ণেল বি কে বল৷ ৩০ নম্বর ব্যাটেলিয়ান আসাম রাইফেলসের কুমারঘাট মহকুমার ফটিকারের রাধানগর গ্রামের ক্যাম্প থেকে জওয়ানরা যায়৷ শুক্রবার ভোর ছয়টা থেকে শুরু হয় অপারেশন৷ কয়েকবার বৃষ্টি আসার ফলে অপারেশনে বিঘ্ন ঘটে৷ যে জায়গায় গ্রেনেডগুলি পাওয়া গিয়েছিল তার থেকে পঞ্চাশ মিটার দূরে টিলার নীচে দুটি বড় বড় গর্ত করা হয়৷ দুটি গর্তের মধ্যে একটিতে ৭৫টি আর অন্যটিতে ৭৬ টি গ্রেনেড রেখে মাটি চাপা দিয়ে টাইমার দিয়ে গ্রেনেডগুলি বিস্ফোরণ করে৷
এদিকে এর আগে বৃহস্পতিবার মাইক যোগে আরক্ষা দপ্তর প্রচার করে যে সকাল ছয়টা থেকে বেলা এগারটা পর্যন্ত এলাকার মানুষ যেন পাঁচশ মিটার দূরে থাকেন৷ জেলা আরক্ষা প্রশাসন থেকে মাইক যোগে প্রচার করা হলেও গ্রামবাসীদের দাবী ছিল যেহেতু ঘনবসতীপূর্ণ লোকা তাই এই জায়গায় গ্রেনেডগুলি বিস্ফোরণ না করে অন্য জায়গায় নিয়ে বিস্ফোরণ করার৷ গ্রামবাসীদের এই দাবী অগ্রাহ্য করে প্রশাসনের তরফ থেকে বোঝানো হয়েছে যে এই বিস্ফোরণে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না৷ কিন্তু বাস্তবে গ্রামবাসীদের আশঙ্কাই সত্যি হল৷ যখন বিস্ফোরণ ঘটানো হয় তখন এলাকায় বড় ধরনের আওয়াজ হয় এবং এলাকার মোট সাতটি বাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সাতটি বাড়ির মধ্যে তিনটি ইটের দালান বাড়ী এবং চারটি মাটির দেওয়ালের ঘর৷ প্রতিটি ঘরের দেওয়ালে ফাঁটল দেখা যায়৷ বিস্ফোরণের পর পুলিশ কর্তারা সঙ্গে সঙ্গেই এলাকা থকে চলে যায়৷ গ্রামবাসীদের অভিযোগ শোনতেই রাজি নন তারা৷ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব দেব গ্রামবাসীদের বলেন তারা মিথ্য অভিযোগ করছেন৷ অনেকের বাড়ীর ঘরের দেওয়াল আগে থেকে ফাঁটল অবস্থায় ছিল৷ বাড়ির ঘরগুলি অনেক পুরনো বলে বিপ্লববাবুর দাবি৷ তিনি আরও বলেন, এই বিস্ফোরণের ফলে কোনওভাবেই ঘরের দেওয়ালে ফাঁটল ধরতে পারে না৷ তিনি বলেন, আসাম রাইফেলস এবং সেনা বাহিনীর যারা এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন তারা বিশেষজ্ঞ৷ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা একাজে সাফল্য পেয়েছেন৷ পুলিশ কর্তার এই বক্তব্য মানতে নারাজ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি৷ তারা প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছেন যাতে তারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়৷ তাদের আরও দাবি যে এলাকায় মাটি কেটে গ্রেনেডগুলি উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে আরও গ্রেনেড থাকতে পারে৷ অবিলম্বে আশেপাশের এলাকায় মাটি কেটে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার দাবী জানান সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ৷
2017-05-20