নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ মে৷৷ সারা দেশের সাথে রাজ্যেও আগামী ১ জুলাই থেকে চালু হচ্ছে জিএসটি৷ তাই শুক্রবার
ত্রিপুরার বিধানসভার সদস্যদের নিয়ে জিএসটি শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তাতে জিএসটি সম্পর্কে বিধায়কদের বিভিন্ন বিষয় জানানো হয়েছে৷
গুডস সার্ভিস ট্যাক্স বা জিএসটি মূলত চারটি ভাগে বিভক্ত৷ আইজিএসটি, সিজিএসটি, এসজিএসটি এবং ইউটিজিএসটি৷ ইতিমধ্যে সংসদে আইজিএসটি এবং সিজিএসটি পাশ হয়েছে৷ এখন এসজিএসটি এবং ইউটিএসজিএসটি রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিতে স্ব স্ব বিধানসভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে৷ এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এসজিএসটি বিল পাশ হয়েছে৷
রাজ্যেও দি ত্রিপুরা গুডস এন্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স ২০১৭ বিলটি বিধানসভায় পেশ করার জন্য শুক্রবার মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ এই বিল বিধানসভায় পেশ করা হবে আগামী ২৩ মে৷ এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা জানান, ২০০৬ সালে ভ্যাট এর বদলে গুডস এন্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জি এস টি) আনার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে সভাপতি করে সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়৷ এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকের পরে ২০১৬ সালে বিলটি সাংবিধানিক রূপ পায়৷ এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করার জন্য জি এস টি কাউন্সিল তৈরী করা হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে সভাপতি করে সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে এই কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে৷ জিএস টি কাউন্সিলের এখন পর্যন্ত ১৩টি বৈঠক হয়েছে৷ জি এস টি কাউন্সিলের ১৪ তম তথা অন্তিম বৈঠকটি জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আগামী ১৮ এবং ১৯ মে অনুষ্ঠিত হবে৷ ইতিমধ্যে সংসদে ইন্টিগ্রেটেড গুডস এন্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (আইজিএসটি) এবং সেন্ট্রাল গুডস এন্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (সিজিএসটি) পাশ হয়েছে৷ স্টেট জিএসটি স্ব স্ব রাজ্যের বিধানসভায় পাশ করতে হবে৷ গোটা দেশেই ১ জুলাই থেকে জিএসটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এই উদ্দেশ্যেই আজ রাজ্য মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ আগামী ২৩ মে বিধানসভায় দি ত্রিপুরা গুডস এন্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স, ২০১৭ বিলটি পেশ করা হবে৷
জিএসটি চালু হলে দেশে কর ব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তন হবে৷ এক দেশ এক কর ব্যবস্থাপনায় জিএসটি কার্যকর হবে৷ তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ৭টি কর এবং রাজ্য সরকারের ৪টি কর একত্রিত হয়ে যাবে৷ নতুন এই কর ব্যবস্থাপনায় চারটি স্তরে কর বিন্যাস করা হয়েছে৷ ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ অনুপাতে বিভিন্ন পণ্যের কর সংগ্রহ করা হবে৷ এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিধি রয়েছে যা কেন্দ্র-রাজ্য উভয়কেই মানতে হবে৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আরূপিত বিভিন্ন কর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ণ উঠেছিল রাজ্যগুলি রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে৷ তাই জিএসটি চালুর প্রথম পাঁচ বছর রাজস্ব আয়ে ক্ষতি হলে রাজ্যগুলিকে ১৪ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে স্থির হয়েছে৷ তবে, এক্ষেত্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে রাজস্ব আয়ের হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে৷ তাতে, দেখা গেছে উৎপাদনশীল রাজ্যগুলি বিশেষভাবে রাজস্ব ক্ষতি হবে৷ ত্রিপুরার মতো রাজ্য এই জিএসটি চালু হলে রাজস্ব আয়ের নিরিখে লাভবান হবে৷
জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে মতানৈক্য ছিল কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে৷ অবশেষে স্থির হয় দেড় কোটি পর্যন্ত বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ৯০ শতাংশ রাজ্যের হাতে এবং ১০ শতাংশ কেন্দ্রের হাতে থাকবে৷ দেড় কোটির অধিক হলে রাজ্য ও কেন্দ্রের হাতে ৫০ শতাংশ করে নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷
জিএসটিতে নথিভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলি সহ মোট ১১টি বিশেষ তালিকাভুক্ত রাজ্যের বিক্রেতাদের ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাণিজ্যে এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে৷ অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাণিজ্য হয়েছে এমন ব্যবসায়ীদের এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে এদিন কর্মশালায় বিধায়ক রতন লাল নাথ প্রশ্ণ করেন, এরাজ্যের জন্য জিএসটি আওতাভুক্ত হওয়ার জন্য ১০ লক্ষ টাকা গন্ডি বেঁধে দেওয়া হলে বড় উদ্যোগপতিরা আসতে চাইবেন না৷ তাতে রাজ্যকে বরাবরই কেন্দ্রের উপর নির্ভর থাকতে হবে৷ ফলে জিএসটি চালু হলে রাজ্যের লাভ কোথায়৷ এবিষয়ে ট্যাক্স সুপারিনটেন্ডেন্ট জানান, যদি উৎপাদিত পণ্য এরাজ্যের মধ্যে বিক্রি হয়ে থাকে তাহলে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জিএসটি’তে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক নয়৷ কিন্তু, রাজ্যের বাইরে পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে এই নিয়ম লাগু থাকবে না৷ তখন সেই ব্যবসায়ীকে জিএসটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে৷
এদিন অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা জানিয়েছেন, জিএসটি চালুর মুখ্য উদ্দেশ্য হল কর ব্যবস্থায় সরলীকরণ৷ নতুন এই কর ব্যবস্থা চালু হলে খুব সহজেই ঘরে বসে কর সংক্রান্ত সমস্ত কাজ করা হবে৷ অনলাইন পদ্ধতিতে সমস্ত কিছু হবে জিএসটিতে৷ এর জন্য জিএসটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে৷ রাজ্যগুলি কি পরিমান রাজস্ব শেয়ার পাবে তাও অনলাইনে স্থির হয়ে যাবে৷ এদিকে, জি এস টি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াকিবহাল করার জন্য সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর নিকট একটি কর্মশালা করার আবেদন জানানো হয়৷ মন্ত্রী এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয় হবে বলে সাংবাদিকদের জানান৷