মহিলা পুলিশ ব্যাটেলিয়ান গড়তে চায় রাজ্য সরকার, আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ণ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ মে৷৷ নারী ক্ষমতায়ণের যুগে পুলিশ বাহিনীতে মহিলাদের সম্পূর্ণ পৃথকভাবে দায়িত্ব দিতে

বৃহস্পতিবার কেটিডি সিং পুলিশ ট্রেনিং একাডেমিতে মহিলা কনস্টেবলের ১৩ তম ব্যাচের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান৷ ছবি নিজস্ব৷

চাইছে রাজ্য সরকার৷ মহিলাদের নিয়ে পৃথক সিভিল পুলিশ ব্যাটেলিয়ান গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ তাই রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং পুলিশের মহানির্দেশককে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, শীঘ্রই এ সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য৷ রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে৷ বৃহস্পতিবার পুলিশ ট্রেনিং একাডেমিতে মহিলা কনস্টেবলের ১৩তম ব্যাচের শপথ গ্রহণ সমারোহে মুখ্যমন্ত্রী একথা বলেছেন৷
এরই পাশাপাশি এদিন তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ জীবনে নানা সমস্যা থাকে৷ সমস্যাকে জয় করতে হবে৷ একে অপরকে সমস্যার উত্তরণে সাহায্য করতে হবে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে৷ তাই এখন প্রয়াস কর্মসূচীতেও আত্মহত্যা প্রসঙ্গে আলোচনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ সারা রাজ্যে প্রতিটি বিটে অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি এখন আত্মহত্যা নিয়েও আলোচনা হয়৷ মানুষকে এই প্রবণতার হাত থেকে বাঁচানোর উপায় বের করার জন্যই প্রয়াস কর্মসূচীতে আত্মহত্যার বিষয়টিকেও জোর দেওয়া হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন৷
আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ণ তুলেছে রাজ্যের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে অভাব অনটন এবং সংসারে অশান্তির জের মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন৷ এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি রাজ্য সরকারকে কলংকিত করছে৷ রাজ্যের মানুষের গড় আয় বেড়েছে বলে রাজ্য সরকার ঢোল পেটালেও, বাস্তবে মানব সম্পদ উন্নয়নের বদলে রসাতলে যাচ্ছে বলেই মনে করছে তথ্যভিজ্ঞ মহল৷ ফলে, প্রশ্ণ উঠেছে আত্মহত্যার বিষয়ে প্রয়াস কর্মসূচীতে আলোচনা করে আদৌ কোন সুফল মিলবে কি না৷ কারণ, আত্মহত্যা একটি মানসিক রোগ৷ ফলে, মানুষের আর্থিক এবং সামাজিক অবস্থার উন্নতি না ঘটলে কেবল আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব নয় বলে দাবি মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের৷
নারী ক্ষমতায়ণের প্রশ্ণে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সকলেই মহিলাদের সমানাধিকারের বিষয়ে দাবি করে থাকি৷ কিন্তু, সমাজে কিংবা পরিবারে মহিলারা সমানাধিকার ভোগ করতে পারছেন ঘটনা তা নয়৷ মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, দায়িত্ব পালনে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় কোন অংশে কম নন৷ এরাজ্যে পুলিশ বাহিনীতে শতকরা ১০ শতাংশ মহিলা পুলিশ রয়েছেন৷ তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীতে এক তৃতীয়াংশ পদ মহিলাদের দিয়ে পূরণ করতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ পাশাপাশি তিনি বলেন, মহিলাদের দিয়ে পৃথক সিভিল পুলিশ বাহিনী গঠন করতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ তাই তিনি মুখ্য সচিব এবং রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকে এসংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরি করে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার গ্রহণ করবে৷
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এগুলো এখন আমাদের জাতীয় জীবনের জ্বলন্ত সমস্যা৷ এসব সমস্যা সমাধানে বিপন্ন মানুষ যেন ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, সেজন্য তাদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের কথা বলে নিঃস্ব বিপন্ন মানুষের একতা বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে৷ শপথ গ্রহণ প্যরেডে আজ যারা শপথ নিলেন, যারা আরক্ষা বাহিনীতে কাজ করছেন তাদের সবার প্রতি অনুরোধ শান্তি সম্প্রীতি সুস্থিতি সৌভ্রাতৃত্ব গণতন্ত্র রক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষতার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ত্রিপুরাকে ভারতের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷ ত্রিপুরা পুলিশকে এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে৷ আজকে টিডিসিং পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মহিলা পুলিশদের শপথ গ্রহণ প্যারেড অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এই আহ্বান জানান৷ পুলিশ ট্রেনিং কলেজে দশ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ১৩২ জন মহিলা পুলিশ শপথ গ্রহণ প্যারেডে অংশ নেন৷ সঙে ১২ জন পুরুষ পুলিশ কর্মীও শপথ গ্রহণ প্যারেডে অংশ নিয়েছেন৷ শুরুতে মহিলা পুলিশ কর্মীরা প্যারেডে অংশ নেন৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার অভিবাদন গ্রহণ করেন৷ তিনি বিভিন্ন বিভাগে বিশেষ পারদর্শিতার জন্য ছয় জম মহিলা পুলিশ কর্মীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পুলিশ কর্মীদের ১৩ নম্বর ব্যাচের স্মরণিকা প্রকাশ করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, খেলাধূলার ক্ষেত্রে পুলিশকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হবে৷ রাজ্যে বর্তমানে ৭৬ টি থানা আছে৷ এর মধ্যে অন্তত ৫০ টি থানা এলাকায় এবছর থেকে থানার উদ্যোগে খেলাধূলার আয়োজন করতে হবে৷ বিশেষ করে ফটুবল, ভলিবল, এ্যাথলেটিক্স-র আয়োজন করতে হবে৷ তাতে ঐ এলাকার যুবক – যুবতী, কিশোর-কিশোরিদের মধ্যে উৎসাহ বাড়বে৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের মেলবন্ধন বাড়বে৷ তাতে গ্রামে পাহাড়ে যেসব ক্রীড়া প্রতিভা আছে তাদের চিহ্ণিত করতে সুবিধা হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *