জাতি জনগণনা ভিত্তিহীন দাবি করে আবাস যোজনায় ঘোটালার অভিযোগ প্রদেশ তৃণমূলের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ জানুয়ারি৷৷ রাজ্যে ২০১১ সালের আর্থ সামাজিক জাতি জনগণনা তথা সোসিও ইকোনমিক

বুধবার আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ ছবি নিজস্ব৷
বুধবার আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ ছবি নিজস্ব৷

কাস্ট সেন্সাসের কোন ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ৷ এরই সূত্র ধরে তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রাজ্যে লুটতরাজ চলছে৷ একটি তথ্য তুলে ধরে তাঁর বক্তব্য, উত্তর ত্রিপুরা জেলার যুবরাজনগর ব্লকের ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে জাতি জনগণনার ভিত্তিতে ৩৩৬৭ জন সুবিধাভোগী চিহ্ণিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর বন্টনের জন্য৷ তাদের মধ্যে, কেবলমাত্র ১০৩৬ জনের হদিশ মিলেছে৷ বাকি কারোরই কোন হদিশ পাওয়া যায়নি৷ তাঁর দাবি, ভূয়ো নাম দেখিয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছে রাজ্য সরকার৷ আর সেই অর্থের লুটপাট চলছে৷ তিনি জোর গলায় বলেন, ভূয়ো ২৩৩১ জনকে দেখিয়ে রাজ্য সরকার কেবলমাত্র একটি ব্লকেই ৩০ কোটি ৩০ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা লোপাট করে দিয়েছে৷ শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে সুদীপবাবু এই সমস্ত তথ্য তুলে ধরে জানান, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর গোচরে নেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি বিজেপি রাজ্য কমিটিকে কটাক্ষ করে বলেন, রাজ্য সরকার দেদার অর্থ লুটপাট করছে, অথচ কেন্দ্রে যে সরকার রয়েছে তাদের দলের এবিষয়ে এরাজ্যে কোন হেলদোল নেই৷

২০১১ সালে আর্থ সামাজিক জাতি জনগণনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ তাতে, প্রত্যেকের নামে পৃথক আইডি তৈরি হয়েছে৷ সুদীপবাবুর বক্তব্য অনুসারে, কেবলমাত্র যুবরাজনগর ব্লকেই ১০৩৬জনকে বাদ দিলে বাকি সমস্ত আইডি ভুয়ো৷ তাঁর প্রশ্ণ, একটি ব্লকেই এই হাল, তবে সারা রাজ্যের কি অবস্থা৷ স্বাভাবিকভাবেই আর্থ সামাজিক জাতি জনগণনার রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই এখন প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ সুদীপবাবুর মতে, এরাজ্যে কোন জাতির কত মানুষ রয়েছেন তার সঠিক তথ্য নেই৷ এজন্য তিনি মনে করেন, একটি ব্লকেই ২৩৩১ জন ভূয়ো নাম থাকায় আর্থ সামাজিক জাতি জনগণনার কোন ভিত্তি নেই৷

এদিন তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার এই জাতি জনগণনার উদ্যোগ নিয়েছিল৷ কিন্তু নিজস্ব পরিকাঠামোর অভাবে এবিষয়ে কেন্দ্র রাজ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে৷ তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জাতি জনগণনার কাজ সম্পন্ন করে৷ তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, জাতি জনগণনার সময়ই রাজ্য সরকার কৌশলে ভূয়ো নাম নথিভুক্ত করে ফেলে৷

এদিন তিনি জানান, পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠী যেমন তপশিলী জাতি, তপশিলী উপজাতি, ওবিসি তাদের জন্য ঘর বন্টনের প্রকল্প আসে৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর বন্টনে সুবিধাভোগীদের চিহ্ণিত করা হয়৷ এই প্রকল্প অনুসারে প্রতি ঘরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকাস ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা করে অর্থ বরাদ্দ করেছে৷ রাজ্য সরকারের হাতে সমস্ত টাকা এসে পৌঁছেছে৷ তাতে তিনি দাবি করে বলেন, কোটি কোটি টাকা এই প্রকল্পের নাম করে আত্মসাৎ করেছে রাজ্য সরকার৷ কারণ, যুবরাজনগর ব্লক ছাড়াও নগর এলাকাতেও ঘরবন্টনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বহু এমন সুবিধাভোগীকে ঘর বন্টন করা হয়েছে যারা এই প্রকল্পের আওতায় কোন ভাবেই আসেন না৷ তাঁর বক্তব্য, যাদের পাকা বাড়ি রয়েছে, কিংবা সরকারি কর্মচারী অথবা আর্থিক দিক দিয়ে স্বচ্ছল তাদের এই প্রকল্প অনুসারে কোন সুবিধা পাওয়ার কথা নয়৷ কিন্তু ৬ আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রের ৮নং ওয়ার্ডে ৪৬ জনকে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ঘর বন্টনের সুবিধাভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, এখানেও রাজ্য সরকার অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই এমন সুবিধাভোগীদের তালিকাভুক্ত করেছেন যারা এই প্রকল্পের আওতায় আসেন না৷ সুদীপবাবু জানান, তিনি পুর কমিশনারকে চিঠি দিয়ে সমস্ত বিষয় জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে তাদের ঘর বন্টন প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি করেছেন৷ এদিন তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে চিঠিতে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন, উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায় ঘর বন্টন প্রক্রিয়ার তদন্ত করার জন্য৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *