নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ অক্টোবর ৷৷ তিন তালাক রদ করা কিংবা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করা কোনটাই মানবে না ত্রিপুরা রাজ্য জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ৷ জমিয়ত দেশে শান্তি চায়৷ কোন সরকার বা কোন রাজনৈতিক দল ইসলামি শরিয়তের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত চাপাতে চাইলে ভারতের মত রাষ্ট্রে অশান্তি সৃষ্টি হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ৷ তাঁদের সাফ কথা, দেশে ইসলাম নিয়ে চক্রান্ত চলছে৷ মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার জন্যই এই সমস্ত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাই জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করা বা তিন তালাক রদ করা থেকে পিছিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে৷
বৃহস্পতিবার আগরতলায় গেদু মিয়া মসজিদে ত্রিপুরা রাজ্য জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মুফতি তৈয়ীবুর রহমান বলেন, সম্প্রতি তিন তালাক, মিরাশ বন্টন, মহিলা পুরুষের সমান অধিকার ও ভিন্ন দেওয়ানি আইন ব্যাপারে কিছু রাজনৈতিক দল এবং কেন্দ্রীয় সরকার নিজ নিজ স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে ইসলাম ধর্মের বিধি-বিধানের ভ্রূক্ষেপ না করে সিদ্ধান্ত চাপাতে চাইছে৷ মুফতি সাহেবের দাবি, এদেশে যারা মুসলিম হয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে সহমত পোষণ করছেন তারা অমুসলমান৷ তিন তালাক রদ প্রকৃত মুসলমানরা কোনমতেই মেনে নেবেন না৷ মুফতি সাহেবের দাবি, তিন তালাক রদ হোক এমন মহিলা এরাজ্যে নেই৷ যে মহিলারা সুপ্রিমকোর্টে দাবি জানিয়েছে তিন তালাক রদ করার বিষয়ে তারা সারা বিশ্বের প্রকৃত মুসলমানদের অসম্মান করেছেন৷
অবশ্য এদিন মুফতি সাহেবের ইসলামদের নিয়ে একটি বক্তব্য অবাক করার মত ছিল৷ তাঁর দাবি, পৃথিবীতে প্রকৃত ইসলামী দেশ নেই৷ সব মুসলিম দেশ৷ কারণ, ইসলাম সন্ত্রাস পছন্দ করে না৷ তাই প্রকৃত ইসলাম দেশ হলে সেখানে শান্তি থাকবে৷
মুফতি সাহেব এদিন বারে বারেই বলেন, ভারতের ফৌজদারি আইনের বিষয়ে তাদের কোন বক্তব্য নেই৷ এমনকি আপত্তিও নেই৷ কিন্তু দেওয়ানি আইন সম্পূর্ণ ইসলাম ধর্মের নিজস্ব৷ ১৪০০ বছর ধরে আল্লাহর বিধান চলছে৷ কোন সরকার বা রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপে এর পরিবর্তন হতে দেওয়া যাবে না৷
সম্প্রতি তিন তালাক রদকরার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে হলফনামা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন৷ তিন তালাক রদের অবস্থান থেকে কেন্দ্রীয় সরকার কোন মতেই সরবে না সেই কথাও স্পষ্ট করে দেয়৷ তাতে, তিন তালাক নিয়ে বেশ কয়েকটি মুসলিম ধর্মীয় সংস্থা সরকারি হলফনামার বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে৷ মুসলিম ধর্মীয় সংস্থাগুলির অভিযোগ হচ্ছে, তিন তালাক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে তাতে শরিয়তের সঙ্গে সংঘাত অনিবার্য৷ সেই ক্ষেত্রে মুসলিম ধর্মীয় সংস্থাগুলি আবেদন জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার যাতে সুপ্রিমকোর্টে যে হলফনামা পেশ করেছে তা পরিবর্তন করে নেয়৷ মূলত, কেন্দ্রীয় সরকার আইনে সংশোধন করে তিন তালাক অবৈধ ঘোষণা করেছে৷ কেন্দ্রের যুক্তি তিন তালাক মহিলাদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী৷ একই সঙ্গে সংবিধানেও তিন তালাকের বিষয়টি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে৷
এদিন, সাংবাদিক সম্মেলনে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ তিন তালাক নিয়ে সাফাই দিতে গিয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে মহিলাদের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে সেটাই প্রমাণিত৷ মুফতি সাহেব জানান, তিন তালাকের পর ঐ মহিলাকে তিন মাস ভরণপোষণ দেওয়া হয়৷ এরপর আর কোন সহায়তা করা হয় না৷ কিন্তু ভারতীয় আইন বলছে, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হলেও স্ত্রী যদি স্বাবলম্বী না হন তাহলে সারা জীবনের ভরণ পোষণের মাপকাঠি আদালত ঠিক করে দেবে৷ অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এককালীন কিংবা মাসিক ভরণপোষণের দায় স্বামীকে নেওয়ার জন্য আদালত নির্দেশ দিয়ে থাকে৷
এদিকে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি হলে সারা দেশকে এক রঙে রাঙানো হবে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তাই ভিন্ন দেওয়ানি আইন রদ করা চলবে না৷ এনিয়ে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের বক্তব্য ভিন্ন দেওয়ানি আইন তথা মুসলিম ব্যক্তিগত আইন যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, বিবাহ, তালাক, ফরাইজ, আজান, কোরবানি, টুপি, দাড়ি, ইসলামি মৌলিক শিক্ষা কোন সরকার বা কোন আদালতের ইসলাম বিরোধী রায় প্রকৃত মুসলিম সমাজে গ্রাহ্য হবে না৷ একে ধর্মীয় অধিকারে বিপরীত হস্তক্ষেপ বলে বিবেচিত হবে এবং এর প্রতিবাদ করা হবে বলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানান মুফতি সাহেব৷
কেন্দ্রীয় সরকারের এই সমস্ত সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় আগামী ১৯ ও ২০ নভেম্বর দিল্লির দেউবন্দে সারা ভারত উলামায়ে হিন্দের প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে৷ ঐ সমাবেশে যোগ দিতে রাজ্য থেকে ৮০ থেকে ৯০ জনের এক প্রতিনিধি দল যাবেন৷
2016-10-21