নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ আগষ্ট৷৷ সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কংগ্রেসত্যাগী ছয় বিধায়কের পদ বহাল রাখলেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ৷ সোমবার সকালে বিধানসভা ভবনে অধ্যক্ষ এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন৷ ছয় বিধায়ক হলেন, সুদীপ রায় বর্মন, আশীষ কুমার সাহা, দিলীপ সরকার, বিশ্ববন্ধু সেন, দিবাচন্দ্র রাঙ্খল এবং প্রণজিৎ সিংহ রায়৷ গত সাত জুন এই ছয় বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের বিষয়টি বিধানসভার অধ্যক্ষকে জানিয়েছিলেন৷ বিধানসভার অধ্যক্ষ আইনী বিভিন্ন দিক পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখার পর সোমবার সকালে ছয় বিধায়কের পদ বহাল থাকার কথা ঘোষণা করলেন৷ এরফলে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হিসেবে পরিগণিত হবেন৷ বিধানসভার অধিবেশনে তাঁরা তৃণমূলের বিধায়ক হিসেবেই আসন অলংকৃ করবেন৷ ছয় বিধায়কের পদ বহাল থাকার কথা ঘোষণার সাথে সাথেই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়৷ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তী সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা অধ্যক্ষের এই সিন্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷
দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় বাদে রাজ্য বিধানসভায় তিনটি পৃথক রাজনৈতিক দলের সত্বা প্রকাশ পাচ্ছে৷ পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা প্রাপ্তির পর তৃতীয় বিধানসভায় আমরা বাঙালী দলের একজন সদস্য থাকায় বিধানসভায় তিনটি পৃথক রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে৷ এরপর এবার তৃণমূল কংগ্রেস স্বীকৃতি পাওয়ায় বিধানসভায় বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস এই তিনটি পৃথক দলকে দেখা যাবে৷ এর ফলে পাল্টে যাবে রাজ্য বিধানসভার অভ্যন্তরীণ গঠনও৷ খুব সম্ভবত ডেপুটি স্পীকার সহ কংগ্রেসের তিন বিধায়ক একসাথে বসবেন৷ আর উপাধ্যক্ষের ডান দিকে থাকবেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়কদের আসন৷ এই ছয় বিধায়ক তৃণমূলের বিধানসভার সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও বিরোধী দলনেতার পদের মর্যাদা কাউকেই দেওয়া হচ্ছে না৷
এদিন, বিধানসভার অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ জানিয়েছেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা পাঁচজন বিধায়কের বিধায়কপদ খারিজ করার জন্য পিটিশন দাখিল করেছিলেন৷ একই সঙ্গে বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেনকে দল থেকে বহিস্কারের বিষয়টি জানিয়ে তাঁর বিধায়ক পদও খারিজ করার কথা পিটিশনে উল্লেখ করেছিলেন৷ কিন্তু, সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে এবং সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে বিচার বিশ্লেষণ করে ছয় বিধায়কের বিধায়ক পদ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ বিশ্ববন্ধু সেনকে বহিস্কারের বিষয়টি সম্পূর্ণ কংগ্রেস দলের গঠনতন্ত্রের বিষয়৷ তবে শ্রীসেনের বিধায়কপদ খারিজ হয়নি দলীয় বিহস্কারের সিদ্ধান্তে৷ তাই বিধানসভার সদস্যপদ খারিজ হওয়ার কোন কারণ নেই৷ অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ আরও জানান, প্রয়োজনে বীরজিৎ সিনহা এই সিদ্ধান্তের জন্য হাইকোর্টের রিভিওর আর্জি জানাতে পারেন৷ তৃণমূলের ছয় বিধায়ক বিধানসভার সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও বিরোধী দলনেতার পদ পাচ্ছেন না৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিধানসভার কোরাম অনুযায়ী বিরোধী বেঞ্চের দশজন সদস্য হওয়া প্রয়োজন৷ কিন্তু, তৃণমূলের এই সংখ্যা নেই৷ তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধী দলনেতার পদ মিলবে না তৃণমূলের৷
রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তি আরো বৃদ্ধি পেল৷ সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেও তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা তলে সামিল হওয়া ছয় বিধায়ক অবশেষে বিধায়ক হিসেবেই বহাল থাকার স্বীকৃতি পেলেন৷ এর ফলে বিধানসভার ভিতরে এবং বিধানসভার বাইরে তৃণমূল কংগ্রেসের কথা বলার সুযোগ আরো বৃদ্ধি পেল৷ আসন্ন বিধানসভা অধিবেশনেই দলত্যাগী ছয় কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের আসন অলঙ্কৃত করবেন৷ সৌভাগ্যবশত বিধানসভার মোট আসনের দশ শতাংশ বিধায়ক দলের সদস্যভুক্ত হওয়ায় বিরোধী দলনেতার পদও হাসিল করতে সক্ষম হবে তৃণমূল কংগ্রেস৷ বিধানসভার অধ্যক্ষ সোমবার ছয় বিধায়কের পদ বহাল রাখার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মণ তৃণমূল কংগ্রেস ভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, শীঘ্রই তারা বিরোধী দলনেতার নাম অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে জানাবেন৷ অধ্যক্ষের অনুমোদন পেলেই দলনেতার নেতৃত্বে বিধানসভা অধিবেশনে দায়িত্ব পালন করবেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়করা৷ এদিকে, কংগ্রেস ত্যাগী বিধায়কদের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর বিধানসভার অধ্যক্ষ তাদের বিধায়ক পদ বহাল রাখার সংবাদে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বাধভাঙা উল্লাস পরিলক্ষিত হয়৷ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তী অধ্যক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করার পথ প্রশস্থ করা হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন৷