নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ আগষ্ট৷৷ মানবাধিকারের অর্থ হচ্ছে শোষক ও শোষণের যে ব্যবস্থা একে প্রতিহত করতে ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত অংশের মানুষের বেঁচে থাকবার যে নূ্যনতম প্রয়োজন তা পূরণে সাহায্য করা৷ তার জন্য ব্যবস্থার মধ্যে যদি রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে হয় বা পরিকাঠামো, আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় তবে তা সবটাই করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আজ আগরতলা প্রেস ক্লাবে হিউম্যান রাইটস এডুকেশন, ত্রিপুরা শাখার এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন৷ এই সংগঠনের উদ্যোগে আজ থেকে শুরু হয়েছে শিক্ষকদের নিয়ে তিন দিনের মানবাধিকার শিক্ষার উপর এক ট্রেনিং প্রোগ্রাম৷ চলবে ২৩ আগষ্ট পর্যন্ত৷ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ এই ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেন৷
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে৷ এক্ষেত্রে হিউম্যান রাইটস এডুকেশন-ত্রিপুরা শাখা বেশ কয়েক বছর যাবৎ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে উদ্যোগ নিয়েছে৷ এই কাজ প্রশংসার দাবি রাখে৷ তিনি বলেন, মানবাধিকার বলতে সাধারণ দৃষ্টিতে আমরা যা ঝুকি তা হল, মানুষের সম্মান নিয়ে, মানুষের মতো জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বেঁচে থাকার, জীবনকে ভোগ করার অস্ত্র৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ স্বাধীনতার ৭০ বছরে পদার্পণ করেছে৷ আমাদের স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ছিল পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রে বাস করা৷ স্বাধীনতার আরেকটি লক্ষ্য ছিল অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলি মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে৷ মর্যাদার সাথে বসবাস করা৷ মানুষের জীবনযাত্রার বিষয় উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কি করা যায় তার জন্য সাংসদ অর্জুন সেনগুপ্তের নেতৃত্বে যে কমিশন গঠন করা হয়েছিল সেখানে বলা হয়েছে দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষ দৈনিক ২০ টাকা ব্যয় করতে পারেন না৷ রিপোর্টে অংসগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি, তাদের আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নের জন্য কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু কোন সরকারই কমিশনের এই পরামর্শগুলি নিয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তার আলোচনায় দেশের নিরক্ষরতার সংখ্যা, দেশের ৫৫ শতাংশ মহিলার রক্তাপ্লতার, ৫ বছঠরের নীচে শিশুদের প্রয়োজনের তুলনায় ওজন কমের বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেন, এগুলির সমাধান না করে সাধারণ মানুষের কাছে মানবাধিকার, কোর্ট কাছারি অর্থহীন৷
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আরও বলেন, আমরা যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছি তাকে প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যমন্ডিত করতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে৷ দেশের ১০ শতাংশ মানুষ যারা ধনী শ্রেণীর তারা কিন্তু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দুই ভাগে ভাগ করছেন৷ অথচ স্বাধীনতার আন্দোলনে তাদের তেমন কোন ভূমিকাই ছিলনা৷ তিনি বলেন, সমাজ জীবনের মৌলিক সমস্যার সমাধানের পথে ছাত্রছাত্রীদেরইবা এই প্রশ্ণে কি ভূমিকা রয়েছে৷ এই বোধে শিক্ষা দিতে পারলেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মানবাধিকার বোধে সঠিক শিক্ষা দেওয়া হবে৷
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রাইটস এডুকেশনের পূর্বাঞ্চল জোনের কোর্ডিনেটর প্রদীপ্ত নায়েক, এই সংগঠনের ত্রিপুরা শাখার চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কেশব রায়, সম্পাদক রঞ্জিত দাশগুপ্ত প্রমুখ৷