BRAKING NEWS

জঙ্গীদের সাথে শান্তি আলোচনা বিশ বাঁও জলে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ জুলাই৷৷ কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে ত্রিপুরার নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন এনএলএফটি’র শান্তি আলোচনা হিমঘরে৷ একবছর আগে সাত জুলাই দিল্লীতে শান্তি আলোচনার সর্বশেষ বৈঠকটি দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ ঐ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারীকরা উক্ত জঙ্গী সংগঠনটির তিন প্রতিনিধি এবং ত্রিপুরা সরকারের প্রতিনিধি৷ দিল্লীতে অনুষ্ঠিত গত বছরের বৈঠকে এনএলএফটি’র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জঙ্গী সংগঠনের স্বঘোষিত বিদেশ সচিব উৎপল দেববর্মা৷ বৈঠকে শ্রীদেববর্মা দাবী জানিয়েছিলেন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রাক্তন টিএনভি নেতা তেথা রাজনৈতিক দল আইএনপিটির সভাপতি বিজয় কুমার রাঙ্খলকে করার জন্য৷ জঙ্গীনেতার এই দাবীর বিষয়ে রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার কোন সাড়া দেয়নি৷ এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে৷ এই শান্তি আলোচনা আর অগ্রসহ হয়নি৷ এনিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে৷ প্রশ্ণ উঠেছে জঙ্গীদের আগামী কর্মসূচী নিয়েও৷
সংবাদে প্রকাশ, দীর্ঘদিন এনএলএফটি জঙ্গী সংগঠনটি ত্রিপুরায় নাশকতার কাজ করেছে৷ এই জঙ্গী সংগঠনের সুপ্রিমো বিশ্বমোহন দেববর্মার রহস্যজনক অন্তর্ধান ঘিরেও প্রশাসনিক স্তরে কোন হেলদোল নেই৷ জানা গিয়েছে, বিশ্বমোহন দেববর্মা মায়ানমারে অবস্থান করছিল৷ দীর্ঘদিন ধরে সে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত৷ এদিকে, এনএলএফটি’র আত্মসমর্পণকারী জঙ্গীদের তরফে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তারা ২০০৭ সালের পর থেকে তাদের সুপ্রিমো বিশ্বমোহন দেববর্মাকে দেখেনি৷ এদিকে, রাজ্যে কর্মরত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীদের কাছেও বিশ্বমোহন দেববর্মার ব্যাপারে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই বলে জানা গিয়েছে৷ বিশ্বমোহন দেববর্মা এখনও বেঁচে রয়েছে কিনা তাও অনিশ্চিত৷
এদিকে, রাজ্য সরকার বরাবরই বলে আসছে জঙ্গীদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য৷ এখনও বাংলাদেশের ঘাঁটিতে বেশ কিছু জঙ্গী রয়েছে৷ তবে বিশ্বমোহন দেববর্মা কোথায় রয়েছে এই বিষয়ে কোন খবর নেই রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে৷ যদিও রাজ্য সরকার চাইছিল এনএলএফটি যাতে শান্তি আলোচনায় বসে৷ সেই মোতাবেক কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং এনএলএফটি’র মধ্যে কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছে৷ সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছিল ২০১৫ সালের ৭ জুলাই দিল্লীতে৷ ঐ বৈঠকে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি৷ ঝুলেই রয়েছে এখনও গোটা শান্তি আলোচনা৷ অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বারবারই চাওয়া হয়েছে শান্তি আলোচনা৷ সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার জানিয়েছেন, বিশ্বমোহন দেববর্মা কোথায় রয়েছে৷ রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শান্তি আলোচনার বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য৷ যাতে করে একটি চূড়ান্ত সমাধানের পথে আসা যায়৷
এদিকে, সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে তিনটি কারণে হয়তো বিশ্বমোহন দেববর্মা শান্তি আলোচনায় এখন আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷ প্রথমত, হয়তো বিশ্বমোহন দেববর্মা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে আর বেঁচে নেই৷ দ্বিতীয়ত, ২০০১ সাল পর্যন্ত রাজ্যে প্রচুর রক্ত ঝরিয়েছে বিশ্বমোহন তাই হয়তো রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে শান্তি আলোচনা করার মতো কোন ধরণের শর্ত রাখার অবস্থাতে নেই৷ তৃতীয়ত, যদি বিশ্বমোহন দেববর্মা জীবিত থেকে থাকে তাহলে এনএলএফটি’র অন্যতম নেতা নয়নবাসী জমাতিয়াকে ছাড়া কোন ধরনের শান্তি আলোচনায় যেতে চাইছে না৷ এদিকে, নয়নবাসী জমাতিয়া বর্তমানে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে এদিক ওদিক ঘুরাফেরা করছে তার বাড়ি তেলিয়ামুড়া মহকুমার তৃষাবাড়ী এলাকায়৷
অন্যদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন এনএলএফটি’র বেশ কিছু ঘাঁটি এখনও বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছে৷ ঐসব ঘাঁটিতে যেসব জঙ্গী রয়েছে তাদের সিংহভাগ আত্মসমর্পণ করার জন্য ভাবছে৷ ঘাঁটি গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার উঠেপড়ে লেগেছে৷ প্রায়শই ঘাঁটিতে সেনা অভিযান চালানো হচ্ছে৷ উপায়ন্তর না পেয়ে জঙ্গীরা পালিয়ে আসছে৷ ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জঙ্গী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ করেছে পরিবারশুদ্ধ৷ কিন্তু, আত্মসমর্পণকারী জঙ্গীদের তরফে সম্প্রতি বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে৷ তাদের কিছু দাবী এখনও পূরণ করা হয়নি৷ এই দাবীগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাদের সঠিক পুনর্বাসন দেওয়া৷ তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা বিভিন্ন থানায় রয়েছে সেগুলি থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া ইত্যাদি৷ এইসব দাবী নিয়ে আত্মসমর্পণকারী জঙ্গীদের একাধিক সংগঠন যৌথভাবে আন্দোলন সংগঠিত করছে৷ এই আত্মসমর্পণকারী জঙ্গীরা জাতীয় সড়ক অবরোধ, অনশন আন্দোলনও সংগঠিত করেছে৷ এইসব দাবী পূরণে রাজ্য সরকার আন্তরিক হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করা হয়েছে৷ যদি তাদের দাবী পূরণ করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার আন্তরিক না হয় তাহলে আগামীদিনে আত্মসমর্পণের পথে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে দ্বিধাবোধ করবে জঙ্গীরা৷ পাশাপাশি আশঙ্কা করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর দরুণ হয়তো এনএলএফটি শান্তি আলোচনার পথে অগ্রসর হতে চাইছে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *