নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ জুলাই৷৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে যেখানে খোদ চিকিৎসকই প্রশ্ণ তুলেছেন৷ তা অনেকটাই মেনে নিয়ে একাংশ চিকিৎসকদের দায়ী করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ শুক্রবার ডক্টরস ডে উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডাঃ প্রদীপ ভৌমিক স্বাস্থ্য মন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য সচিবের সামনেই রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতাল জিবিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক শয্যা নেই রোগীদের জন্য৷ জিবির জরুরি বিভাগে পরিষেবা সঠিকভাবে পাওয়া যায় না৷ এর জন্য তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ শুধু তাই নয়, এদিন তিনি সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ ব্যবসায় মেতে উঠেছেন বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন৷ ডাঃ ভৌমিকের গুচ্ছ অভিযোগের খন্ডন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বাদল চৌধুরীর বক্তব্য, চিকিৎসকদের একাংশ তাদের দায়িত্ববোধ ভুলে গেছেন ঠিকই৷ তাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা কলঙ্কিত হচ্ছে৷ পাশাপাশি বলেন, দেশেই এখন পরিকল্পনার অভাব রয়েছে৷ ফলে, রাজ্যে পরিকল্পিতভাবে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়ে উঠছে না৷
এদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চরম অসন্তোষ ব্যক্ত করে জানান, এক জেলা হাসপাতালে বৈঠক করতে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের সুপার অনুপস্থিত৷ চিকিৎসকদের উপস্থিতির হিসাব রাখার জন্য আইজিএম হাসপাতালে বায়োমেট্রিক মেশিন বসানো হয়৷ অথচ খবর মিলেছে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশ এক দরজা দিয়ে ঢুকে, অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন৷ তিনি চিকিৎসকদের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে এদিন জোরালো প্রশ্ণ তুলেছেন৷ তাঁর স্পষ্ট কথা, রোগীর সাথে চিকিৎসকের সম্পর্ক ভালো না হলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরানো সম্ভব নয়৷ তাঁর মতে, আজকের দিনে চিকিৎসকদের কাজের মূল্যায়নের সময় এসেছে৷ রাজ্যের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ মানবিক দিক দিয়ে রোগীদের পরিষেবা প্রদান করেন৷ কিন্তু একটা অংশ বরাবরই প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়েই মেতে থাকেন৷ এধরনের চিকিৎসকদের বহু অভিযোগ ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে এসেছে৷ জেলাস্তরে হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্য আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে৷ অথচ একাংশ চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার জন্য সে আবাসনে থাকছেন না৷ ফলে, অনেক সময় গভীর রাতে মুমূর্ষ রোগী হাসপাতালে আসলে তাকে স্বাস্থ্য পরিষেবা সঠিক ভাবে দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না৷ তিনি স্পষ্ট জানান, জিবি এবং আইজিএম এ দুটি হাসপাতাল দিয়ে সারা রাজ্যের রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়৷ সেক্ষেত্রে জেলায় জেলায় যে হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে চিকিৎসকদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে৷ এরজন্য তিনি চিকিৎসকদের সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্যেও অনুরোধ রেখেছেন তারা যেন চিকিৎসকদের দায়িত্ববোধ মনে করিয়ে দেন৷ কারণ, কয়েকজন চিকিৎসকদের জন্য গোটা চিকিৎসক সমাজ কলঙ্কিত হচ্ছে৷ এরই পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন৷
2016-07-02