নিজস্ব প্রতিনিধি, খোয়াই, ১ জুলাই ৷৷ খোয়াইতে ফিল্মি কায়দায় হিরোগিরি করতে গিয়ে মদমত্ত যুবতী সহ গ্রেফতার খোয়াই সুভাষপার্কের এক বিত্তশালী পরিবারের যুবক৷ কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রীকে মদমত্ত অবস্থায় নিজের গাড়ীতে বহন করছিল গাড়ীর মালিক তথা বিত্তশালী যুবক শংকর শুভ্র কর৷ কিন্তু মদমত্ত গাড়ী চালকের অসাবধনতায় দুর্ঘটনার কবলে পড়তেই বাধে বিপত্তি৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ৷ উত্তম-মধ্যম খেয়ে চালক গা ঢাকা দেয়৷ গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য খোয়াইতে৷
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সন্ধ্যায়৷ আগরতলা থেকে আসার পথে সুভাষপার্ক কালীবাড়ী এলাকায় নো-এন্ট্রি ক্রস করার সময় চরগণকী এলাকার সবজি ব্যবসায়ী নারায়ন দেবনাথকে ধাক্কা মারে টিআর০১এএম-০২২৬ নম্বরের একটি গাড়ী৷ দুর্ঘটনায় আহত হন ঐ সবজি ব্যবসায়ী৷ প্রত্যক্ষদর্শী পথচারী এবং ট্রাফিক পুলিশ এসে আহত সবজি ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে৷ কিন্তু সেখানেই গাড়ীর চালক ও মালিকের সাথে ট্রাফিক পুলিশের প্রচন্ড বাক-বিতন্ডা শুরু হয়৷ বাক-বিতন্ডা একসময় হাতাহাতিতে গিয়ে পৌঁছে৷ ট্রাফিক পুলিশের গায়ে হাত দেয় গাড়ীর মালিক শংকর শুভ্র কর৷ এদিকে চালক বিপুল মোদককে উত্তম-মধ্যম দেওয়াতে সে ঘটনাস্থলে থেকে পালিয়ে যায়৷ পরবর্তী সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছায় খোয়াই থানার পুলিশ৷ পুলিশ এসে মদমত্ত কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে গাড়ী থেকে উদ্ধার করে৷ গাড়ীর মালিক শংকর শুভ্র কর এবং মদমত্ত যুবতীকে থানায় নিয়ে আসা হয়৷ পরবর্তী সময় মদমত্ত গাড়ীর চালকও থানায় পৌছে৷ কিন্তু দেখা যায় প্রভাবশালী হওয়ার সুবাদে থানার ভেতর থেকেও মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জায়গায় ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাড়ীর মালিক শংকর শুভ্র কর৷ তবে রূত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ধৃত তিনজনের কথা-বার্তাতেই অসংলগ্ণতা ধরা পড়ে৷ খোয়াই সুভাষপার্কের অতি প্রভাবশালী কাপড় ব্যবসায়ীর ছেলে থানায় বসেই মেয়েটিকে বাড়ীতে পাঠানোর সবরকম চেষ্টা করতে শুরু করে৷ বিত্তশালী পরিবারের ছেলে বলে কথা৷ তার ইচ্ছে মতোই খোয়াই থানার পুলিশও আইনি জটিলতা এড়াতে যুবতীটিকে কোনও প্রকার মেডিক্যাল ছাড়াই তাকে ছেড়ে দেয়৷ জানা যায় কলেজ পড়ুয়া ঐ ছাত্রীটি আশারামবাড়ী এলাকার৷ পিতা একজন রেগা মাষ্টার এবং রাবার ব্যবসায়ী৷ এদিকে পুলিশ একটি মামলা হাতে নিয়েছে৷ তার কেইস নং ৯৬৷ ৩০৭/৩৫৩/৩৩৩/৩৪ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে৷
তবে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় হচ্ছে এটি একটি মাত্র ঘটনা নয়৷ উন্নত খোয়াই শহরে বিত্তশালী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা নিত্যদিনই এমনসব ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ছে৷ পুলিশ সব জেনেশুনেও আইনি মার প্যাঁচ থেকে বাঁচতে নিজেরাই কেটে পড়ে৷ অবৈধ কার্যকলাপের বাড়-বাড়ন্তের মধ্যে খোয়াই শহরেজুড়ে এইডস এর রোগী ক্রমাগত বেড়েই চলছে৷ বিত্তশালী পরিবারের ছেলে-মেয়েদের খপ্পরে পড়ে গরীব-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও নিজেদের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে৷ সুতরাং এখন থেকেই সমাজ এবং প্রশাসনকে সতর্ক হতে হবে৷ নতুবা খুব অল্প সময়ে খোয়াই শহর ও শহরতলী ভয়ানক হয়ে উঠবে৷ তার জন্য দায়ী থাকবে প্রশাসন আর সচেতন নাগরিকরা, এমনই ধারনা খোয়াইবাসীর৷
ইদানিংকালে খোয়াই শহরে একশ্রেণীর যুবক-যুবতীদের মধ্যে আধুনিকতার নয়া ভাষা, আদব-কায়দা এবং ভাব-ভঙ্গীর ছুঁয়াছে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে৷ তাল মিলিয়ে বাড়ছে নানান অপরাধমূলক অসামাজিক কাজ, গতিবিধি এবং বিশেষ করে বিত্তশালী পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েরা এর শিকার হচ্ছে৷ পাশাপাশি ঐসব বিত্তশালী পরিবারের ছেলে-মেয়েদের সাথে ধবংশের পথে ধাবিত হচ্ছে গরীব-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও৷ বিত্তশালী পরিবারের সন্তানরা সমাজের মধ্যেও এক বিশেষ সমাজ হিসাবে নিজেদের মনে করে নেয়৷ এই ধবংশের বীজ বপন হতে শুরু করে সেই ছেলেবেলা থেকেই৷ পরিবারের মধ্যেই বেড়ে উঠতে উঠতে এসমস্ত ছুঁয়াছে ভাব-ভঙ্গী, আদব-কায়দা তাদের মনের মধ্যে ঘর করতে শুরু করে৷ যার কুপ্রভাব পড়ে যুবাবস্থায়৷ এর পেছনে ঐসব বিত্তশালী পরিবারের অধিক কালোধনকেই দায়ী করছে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মহল৷ তারা এতটাই বিত্তশালী যে, প্রশাসনকেও সাত-পাঁচ ভেবে ঐসব মাথানষ্ট যুবক-যুবতীদের গায়ে হাত দিতে হয়৷ হিমশিম খেতে হয়৷ এমনই এক জলজ্যন্ত উদাহরন মিলল শুক্রবার৷
2016-07-02

