নিজস্ব প্রতিনিধি, তেলিয়ামুড়া, ২৫ জুন৷৷ রাজ্যে বাম শাসন ব্যবস্থায় গ্রাম পাহাড়ের জনজাতি গিরিবাসীরা কতটুকু সরকারি সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে সক্ষম হয়েছেন৷ তা ওই সকল এলাকাগুলিতে পা না রাখলে বোঝা যায় না৷ তবে শাসকদলের
নেতা মন্ত্রীরা সাধারণত পা না রাখলেও বিরোধী দলের নেতৃত্বরা সরকারের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও কোন কর্ণপাত করেন না৷ বর্তমান সরকারের বেতনধারি আমলাকামলারা৷ তবে ওই সকল প্রত্যন্ত এলাকার গিরিবাসীরা দিনের পর দিন করুণ অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন গুজরান করে থাকলেও প্রশাসনের কাছে তাতে কোন আসে যায় না৷ তেলিয়ামুড়া মহকুমা মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের ৪১ মাইল গুচ্ছ গ্রামের মধ্যে আজও বিদ্যুৎ গিয়ে না পৌঁছাতে ক্ষোভে ফঁুসছেন গিরিবাসীরা৷
২০০৩ সালে সরকারের প্রলোভনের উপর পা রেখে নোনাছড়া, কাকড়াছড়া, হলুদিয়া সহ বিভিন্ন এডিসি ভিলেজের বিভিন্ন পাড়া থেকে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি ছেড়ে ৪১ মাইল গুচ্ছ গ্রামে বসবাস করতে এসেছিলেন৷ সেই সময় তাদের কাছে প্রতিশ্রুতি সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছিল কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মৌলিক অধিকারের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা তাদের দেওয়া হবে৷ শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়, পানীয় জলের জন্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পানীয় জলের উৎস, যাতায়াতের জন্য ভালো রাস্তাঘাট, সহ রাতের অন্ধকার দূরীকরণের জন্য আলোর ব্যবস্থা৷
বর্তমানে ৪১ মাইল গুচ্ছ গ্রামের বসবাসকারী গিরিবাসীরা সরকারিভাবে বিভিন্ন মৌলিক অধিকারের নূ্যনতম সুযোগ সুবিধা পান নি৷ পানীয় জলের ব্যবস্থা বর্তমান সরকারের আমলে এখন পর্যন্ত না হলেও ভোটের প্রাক্কালে সরকারি দপ্তরের একাংশ কর্মীরা ভোট প্রচার হিসাবে মৌলিক অধিকারের পাইয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শাসক দলের ভোট ব্যাঙ্কের মার্জিন বাড়ানোর প্রয়াস আদতে উপজাতি ঠকানোর কৌশল, বর্তমানে তারা জেনে গেছেন তারা সরকারি আমলা কামলা সহ শাসক দলের হয়ে যারা ভোট প্রচার করে থাকেন তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কায়দা৷ তবে ওই সকল এলাকার একাংশ উপজাতি জনগণ বিশ্বাস হারিয়ে বর্তমানে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে দিয়েছিলেন৷ বৈদ্যুতিক তার টানা হলে ও বিদ্যুৎ গিয়ে পৌঁছায় দীর্ঘ প্রায় বছর পাঁচেক ধরে৷ ফলে ওই এলাকার গুচ্ছ গ্রামবাসীরা বর্তমানে প্রশাসনের উপর ক্ষুব্ধ ৷ বর্তমানে কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে রাতের অন্ধকার নিবারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল সুকল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন পাঠ নিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনে থাকলেও, বৈদ্যুতিক আলোই বা কি তারা জানেন না৷ প্রতিদিন পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া কেরোসিনের বাতির আলোই অন্ধকার নিবারণের একমাত্র ব্যবস্থা তারা শিখেছেন৷ কিন্তু ডটকমের যুগে বসবাস করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন বৈজ্ঞানিকেরা, সে যুগে বসবাস করে ৪১ মাইল এলাকার বসবাসকারী গুচ্ছ গ্রামবাসীরা আজও কোপি বাতির উপর নির্ভরশীল৷ যদিও রেশন থেকে মাত্র ১ লিটারের বেশি কেরোসিন প্রতিমাসে পান না৷ বাকি কেরোসিন বাজার থেকে চড়ামূল্যে সংগ্রহ করতে হয় তাদের৷
এদিকে, এই খবর শুনে ৪১ মাইল এলাকায় রাতের অন্ধকারে গিরিবাসীরা কেমনভাবে দিন গুজরান করে যাচ্ছেন, তা দেখার জন্য খোয়াই জেলার বিজেপি সাধারণ সম্পাদক বিকাশ দেববর্মা গিরিবাসীদের সাথে দেখা করেন৷ তিনি স্বর্ণযুগের আমলাকামলা সহ ২৯ কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মৎস্য ও সমবায়মন্ত্রীর উপর তোপ দাগেন৷ তিনি বলেন বর্তমানে স্বর্ণযুগের ব্যাপারে যদিও শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরা নিজেদের মন্তব্য তুলে ধরেন উন্নয়নে ফিরিকি নিয়ে আদতে কতটুকু স্বর্ণযুগে গিরিবাসীরা বসবাস করছেন তা ৪১ মাইল এলাকায় না গেলে অবশ্য বলা যায় না৷ তবে তিনি মন্তব্য করে বলে বর্তমান সরকার জনস্বার্থ বিরোধী৷ ২০০৩ সালে সরকারি আমলা কামলা সহ নেতাদের উপর বিশ্বাস করে ৪১ মাইল গুচ্ছগ্রামে বিভিন্ন এডিসি ভিলেজের মধ্যে থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা উপভোগ করার জন্য এসে থাকলেও তাদের জীবনধারনের মান যেমন তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে গেছে৷ এখন দেখার বিষয় ৪১ মাইল গুচ্ছগ্রামবাসীদের জন্য বর্তমান সরকারের করুণার চোখ কবে নাগাদ খুলে৷