নিজস্ব প্রতিনিধি, খোয়াই, ২৫ জুন৷৷ প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের মাত্রা ক্রমশই বেড়ে চলেছে৷

পুরোহিত হত্যা, ধর্ম যাজকদের প্রাণনাশের হুমকি সহ ব্লগার হত্যার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের বিতাড়িত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে একাংশের মৌলবাদীরা৷ খোয়াই জেলার পাশ্ববর্তী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার চারটি গ্রাম থেকে নির্যাতিত ১৬৮টি হিন্দু পরিবার খোয়াইয়ের গুমসিংবাড়ি সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়ার গেইটের কাছে সীমান্তের ওপারে ভারতীয় ভূখন্ডে আশ্রয় নিয়েছে৷ ঐ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তে রক্ষী বাহিনীর ১৩০ নং ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন৷ বাংলাদেশী নাগরিকরা কাঁটা তারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে এপাড়ে আসার চেষ্টা করলে বিএসএফ’র জওয়ানরা বাধা দেন৷ বিষয়টি খোয়াই জেলা প্রশাসনের নজরে আনে বিএসএফ৷ বিএসএফ’র আপত্তি অগ্রাহ্য করেই বাংলাদেশী পরিবারগুলো ভারতীয় ভূখন্ডে কাঁটা তারের বেড়া সংলগ্ণ এলাকায় তাবু টাঙ্গিয়ে অবস্থান করতে থাকেন৷
শনিবার সকাল ৭ নাগাদ চাম্পাহাওড়া থানা এলাকার গুমসিং বাড়ীরর ভারত-বাংলা সীমান্তের ১৯৬৫নং পিলার এর ১০নং গেইটে বাংলাদেশ হবিগঞ্জ জেলা ও চুনারোঘাট থানা এলাকার কালেঙ্গ ফরেষ্ট রেঞ্জ এর ছনবাড়ী এলাকার প্রায় দুইশত লোক সীমান্ত কাঁটা তারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা চালায়৷ খবর পেয়ে বিএসএফ ১৩০নং বেটেলিয়ান এবং চাম্পাহাওড় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং নির্যাতিত বাংলাদেশীরা যেন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহন করেন৷ গোটা এলাকা বেরিক্যাড তৈরী করে রাখা হয়৷
চাঞ্চল্যকর এই খবর পেয়ে খোয়াই জেলা প্রশাসন ও আরক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা শনিবার সকালে গুমসিংবাড়ি সীমান্তে ছুটে যান৷ খোয়াইয়ের ডেপুটি কালেক্টর সহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা আশ্রিত বাংলাদেশী পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেন৷ অসহায় পরিবারগুলো ভারতের প্রবেশের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান৷ তারা জানান, বাংলাদেশে বন দপ্তরের জমিতে দীর্ঘকাল ধরে হিন্দু পরিবারগুলো বসবাস করে আসছিল৷ সেখানে তিন শতাধিক মুসলীম পরিবারও বসবাস করছে৷ হিন্দু পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চক্রান্ত শুরু হয়৷ মৌলবাদীরা এই চক্রান্তে লিপ্ত৷ বন দপ্তর এই প্ররোচনার ফাঁদে পা দিয়ে হিন্দু পরিবারগুলোর উপর গত কয়েকদিন ধরেই নির্যাতন চালিয়ে আসছিল৷ দু’তিন ধরে নির্যাতনের মাত্রা চরম আকার ধারণ করে৷ অসহায় হয়ে চারটি গ্রামে বসবাসকারী ১৬৮টি হিন্দু পরিবার ভারতে আশ্রয় গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়৷ সে অনুযায়ী তারা কাঁটা তারের বেড়ার কাছে এসে ভারতের প্রবেশের জন্য আর্জি জানান৷ কাঁটা তারের বেড়া থাকায় তারা বন্ধু রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেনি৷ কাঁটা তারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে এপাড়ে আসতে না পারলেও তারা ভারতীয় ভূখন্ডেই আশ্রিত রয়েছেন৷ মানবিক কারণে খোয়াই জেলা প্রশাসন তাদের ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে৷ সকালে জল খাবার এবং দুপুরে ভাতের ব্যবস্থাও করা হয়৷ রাতেও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে খোয়াইয়ের ডেপুটি কালেক্টর জানান, বিষয়টি আন্তর্জাতিক৷ সে কারণেই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ বিজিবি’র সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিং করার উদ্যোগ চলেছে৷ আলোচনার মাধ্যমেই ভারতীয় সীমান্তে আশ্রিত পরিবারগুলোকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷
জানা যায় সীমান্ত ওপারের মৌলবাদী এবং ফরেস্ট রেঞ্জের কর্মী কর্তৃক ঐ নিরীহ মানুষদের উপর, তাদের পরিবারের উপর বিগত ২-৩ দিন যাবত নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানোর ফলেই বাধে বিপত্তি৷ প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত ডিঙ্গিয়ে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা মূলত এই কারনেই৷ গত বছরও একবার এমনই ঘটনা ঘটেছিল৷ বছর ঘুরতেই ফের একাবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি৷ ইতিমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে দুই দেশের বিজিবি এবং বিএসএফ ফ্লেগ মিটিংয়ে বসার উদ্যোগ গ্রহন করছে৷ শনিবার উক্ত ঘটনা জানাজানি হবার পর মিডিয়া কর্মীরা সেখানে ছুটে গেলে একজন সংবাদ কর্মীকেও সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি৷ তবে জানা গেছে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের পরই ঐ লোকজনদের বাংলাদেশে পৌছানোর ব্যবস্থা করা হবে৷
এদিকে, সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতীয় সীমান্তে আশ্রয় নেওয়ায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঐ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে৷ তারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছে সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ বিএসএফ পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ন নজর রেখে চলেছে৷ বিষয়টি ভারত সরকারের নজরে আনা হয়েছে৷ এনিয়ে অবশ্য কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই৷ এবিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের তরফে কিংবা বিজিবি’র তরফে এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়নি৷

