নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ জুন৷৷ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশফেল প্রথা নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত তাৎপর্য্যপূর্ণভাবে অসন্তুষ্টি জাহির করেছেন৷ কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার পাশফেল প্রথা নিয়ে খুব একটা চিন্তা ব্যক্ত না করলেও, মূল সমস্যা
কোথায় তার গভীরে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন৷ একদিকে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী গুনগত শিক্ষার ঘাটতির জন্য অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশফেল প্রথা তুলে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সমালোচনায় সরব হন৷ অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার রাজ্যের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছাত্রছাত্রীদের ভিত গড়ে তোলার দিকে মনযোগ দিন৷ বেতন নিয়ে নির্দিষ্ট ধারায় শিক্ষকতার বাইরে গিয়ে শিক্ষকদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করুন৷ যদি কোন ছাত্র বা ছাত্রী ক্লাসে মনযোগী না হয় কিংবা কোন বিষয়ে তার বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে সময় নিয়ে ঐ ছাত্রছাত্রীকে সমস্ত বিষয় বোঝানোর চেষ্টা করুন৷ তাতে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ভিত গড়ে তুলতে সহায়ক হবে৷
সোমবার উমাকান্ত একাডেমীর মিলয়াতনে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থানাধিকারী সুকলের কৃতি ছাত্রদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও সেই সঙ্গে তুহিন স্মৃতি পুরস্কার ও সহচরি দেবী মেধা স্মৃতি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল চিত্র ঢাকতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষানীতির তীব্র সমালোচনা করলেও, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাঁর বক্তব্যে শিক্ষককূলকেই সতর্ক করেছেন৷ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশফেল প্রথার বিরোধীতায় অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি ত্রিপুরা সরকারও রয়েছে৷ কিন্তু, মূল সমস্যার গভীরে গিয়ে রাজ্য সরকারও কোন সমাধান সূত্র বের করতে পারছে না৷ এরাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা শিক্ষকদেরকে নিয়েই৷ তা শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে ফুটে না উঠলেও মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত সুচারু ভাবে বর্ণনা করে দিশা দেখিয়েছেন৷ পাশফেল প্রথা না থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করার সুযোগ রয়েছে৷ আর এই দায়িত্ব শিক্ষকদেরই নিতে হবে, সেই বিষয়ে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিন, মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ক্লাসে সকলকে মনযোগী হতে হবে৷ যদি কোন বিষয় বুঝতে অসুবিধা হয় তবে নির্দ্ধিধায় একাধিক বার শিক্ষকদের কাছে যাওয়ার জন্যও তিনি অভয় দিয়েছেন৷ পাশাপশি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ছাত্রছাত্রীদের স্পেশাল কোচিং দেওয়ার জন্য৷ তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেকোন একটি বিষয়ের উপর সপ্তাহে দুইদিন কিংবা অন্তত একদিন স্পেশাল কোচিংয়ের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের দুর্বলতাগুলিকে কাটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন৷
ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মান ক্রমশ তলানীতে, এর দায় শিক্ষক সমাজকে নিতেই হবে৷ আর তাতে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করছেন অভিভাবক মহল৷ পাশফেল প্রথা নেই ঠিকই, কিন্তু শিক্ষক শিক্ষিকারা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভবে পালন করলে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মান স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে বলে তারা মনে করেন৷ মফঃস্বলে অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরা নিয়মিত সুকলে যাচ্ছেন না৷ প্রক্সি টিচার দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ দেওয়া হচ্ছে৷ যা অত্যন্ত মারাত্মক৷ অভিভাবক মহলের মতে, দেশের শিক্ষানীতির দিকে আঙ্গুল না তুলে শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত রাজ্যে মজবুত করে তুলতে শিক্ষক সমাজকে সতর্ক করতে হবে৷