BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার গড়ার বিরাট আশা ও স্বপ্ণ নিয়ে কংগ্রেসের সাত বিধায়ককে এক পাল্লায় তুলতে আগরতলায় দিনভর দৌঁড়ঝাপ মুকুল রায়ের

Mukulনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জুন৷৷ স্বপ্ণ এখন ত্রিপুরার মসনদ দখল৷ পশ্চিমবঙ্গে যা সম্ভব হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস চাইছে এরাজ্যেও তা সম্ভব করতে৷ তাই রাজ্যের রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়কদের নিয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে সৈন্যপত্যে দায়িত্ব নিয়েছেন সাংসদ মুকুল রায়৷ সহজ না হলেও কংগ্রেসকে এ রাজ্যে সাইনবোর্ড সর্বস্ব করে দিতে দলের বিদ্রোহী বিধায়করা শুক্রবার দিনভর তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা, সাংসদ মুকুল রায়কে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন৷ বীরজিৎ সিনহাদের রীতিমত অবাক করে দিয়ে বর্মণ শিবিরে প্রকাশ্যে অংশ গ্রহণ করতে দেখা গেছে জীতেন সরকার, বিশ্ববন্ধু সেনদের৷
এদিন, মুকুল রায় একদিনের ঝটিকা সফরে রাজ্যে আসেন৷ এসেই সোজা ছুটে যান এক নং এমএলএ হোস্টেলে৷ বিদ্রোহীর তালিকায় সুদীপ রায় বর্মণ এবং আশীষ কুমার সাহা সরাসরি নাম লিখলেও এতদিন পর্দার আড়ালে ছিলেন বিশ্ববন্ধু সেন, দিবাচন্দ্র রাংখল এবং জীতেন সরকার৷ প্রণয়জিৎ সিংহ রায় অবশ্য পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন৷ এদিন সকালে এক নং এমএলএ হোস্টেলে সুদীপ বর্মণ সহ কংগ্রেসের ছয় বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন, দিবাচন্দ্র রাংখল, আশীষ কুমার সাহা, প্রণয়জিৎ সিংহ রায় এবং জীতেন সরকার মুকুল রায়ের সাথে বৈঠক করেন৷
দলত্যাগ বিরোধী আইন থেকে বাঁচতে সাত জন বিধায়ক চাই তৃণমূলে যোগদানের ক্ষেত্রে৷ তবেই, তাদের বিধায়ক পদ বহাল থাকবে৷ কিন্তু ছয়জন একজোট হলেও আরেকজনের সন্ধানে এদিন মুকুল রায়কে নিয়ে সুদীপ বর্মণরা সোজা চলে যান বাধারঘাট কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক দিলীপ সরকারের বসতবাড়িতে৷ সেখানে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় দিলীপ সরকার ও মুকুল রায়ের মধ্যে৷ ঐ বৈঠকে সুদীপ বর্মণরাও ছিলেন৷ মূলত, দিলীপ সরকারকে দলে টেনে নিয়ে এক সাথে কংগ্রেসের সাত বিধায়ক মিলে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সুদীপ বর্মণের৷ কিন্তু সহজেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছেন না দিলীপবাবু৷ ফলে, বর্মণ শিবিরের এখন মূল চিন্তা দিলীপ সরকারকে নিয়েই৷
দিলীপ সরকারের বাড়িতে মুকুল রায়কে আসতে দেখে শ্রী সরকারের অনুগামীরা অতি উৎসাহী হয়ে উঠেন৷ বামফ্রন্টকে এরাজ্য থেকে উৎখাত করতে হবে, সে আওয়াজও উঠে৷ দিলীপ সরকারের সাথে বৈঠক শেষে ফিরে যাওয়ার সময় উপস্থিত দিলীপ অনুগামীদের তিনি আশ্বস্ত করেছেন এরাজ্যকে বামফ্রন্টের অপশাসন থেকে মুক্ত করা হবে৷ উপস্থিত কয়েকজন যুব কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে সম্ভব হয়েছে, এরাজ্যেও সম্ভব হবে৷ সূত্রের খবর, মুকুল রায় বেরিয়ে যাওয়ার পর দিলীপ সরকারের ঘনিষ্ঠরা তাঁকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন৷ সূত্র অনুসারে আরো জানা গেছে, তাঁর অনুগামীদের কেউ কেউ কংগ্রেসেই থেকে যাওয়ার বিষয়ে সওয়াল করলে অন্য অনুগামীরা রেগে আগুন হয়ে যান৷ যতদূর জানা গেছে, এনিয়ে দুই গোষ্ঠির মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছে৷ উভয় সংকটে দিলীপবাবু এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তৃণমূল কংগ্রেসে যাবেন নাকি কংগ্রেসেই থেকে যাবেন৷ অবশ্য মুকুল রায় জানিয়েছেন, দিলীপ সরকারের সাথে বৈঠক সদর্থক হয়েছে৷ শ্রী রায়, ইঙ্গিত দিয়েছেন দিলীপ সরকারের তরফে শীঘ্রই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নিয়ে সবুজ সংকেত মিলবে৷
এদিন মুকুল রায়, উপজাতি নেতাদের সাথেও বৈঠক করেছেন৷ সূত্রের খবর, আইএনপিটি নেতা বিজয় রাংখলের সাথে দীর্ঘ সময় বৈঠক হয় মুকুল রায়ের৷ দুপুরে রাজ্য অতিথিশালায় ফের মুকুল রায়ের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন সুদীপ রায় বর্মণ, প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তী, দুলাল দাস, আইনজীবী অরুণচন্দ্র ভৌমিক৷ সূত্রের খবর, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্ব এবং সুদীপ রায় বর্মণকে পাশে বসিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন মুকুল রায়৷
শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্টভাবে কিছু না জানালেও মুকুল রায় ইঙ্গিত দিয়েছেন আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে বড় ধরনের ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে ঘটতে চলেছে৷ এদিন তিনি জানান, তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি ত্রিপুরার প্রতি যথেষ্ট সচেতন৷ পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করে এখন তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য ত্রিপুরা সে কথাও জানান শ্রীরায়৷ এমনকি খুব শীঘ্রই তৃণমূল নেত্রী এরাজ্যে আসবেন বলেও জানান তিনি৷ মূলত, ত্রিপুরায় কংগ্রেসের বিদ্রোহী শিবিরের পুঙ্খানুপুঙ্খ খবরাখবর নিতেই যে তাঁর এই সফর সে কথা সরাসরি মুকুল রায় স্বীকার না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিস্থিতি সম্বন্ধে দলনেত্রীকে অবগত করার সমস্ত তথ্য আদায় করে নিয়েছেন তিনি৷ সুদীপ রায় বর্মণকে দলে স্বাগত জানিয়ে মুকুল রায় বলেন, প্রকৃত বাম বিরোধী সমস্ত কংগ্রেসীদের অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত তৃণমূল কংগ্রেস৷ কংগ্রেসের নীতিহীনতার বিরুদ্ধে যারাই সরব হয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে মুকুল রায় বলেন, অপেক্ষা করুন আগামী কিছুদিনের মধ্যে ত্রিপুরায় বিধানসভার ভেতরে এবং বাইরে সমানভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবে তৃণমূল কংগ্রেস৷
অবশ্য, একক শক্তি গড়ে তুলতেই আগ্রহী তৃণমূল কংগ্রেস৷ সে বিষয়টি উল্লেখ করে মুকুল রায় জানিয়েছেন, প্রথমে রাজ্যের আনাচে কানাচে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তি বৃদ্ধি এবং সংগঠন বিস্তার করতে হবে৷ প্রয়োজনে উপজাতি আঞ্চলিক দলের নেতাদের সাথেও যোগাযোগ করা হবে৷ তাতে, এরাজ্যে পাহাড় দখল করতে আইএনপিটির সাথে গাঁট বাঁধতে পারে তৃণমূল তার ইঙ্গিত আজ মুকুল রায়ের বক্তব্যে মিলেছে৷ তবে, আশ্চর্যজনকভাবে এদিন প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সুরজিৎ দত্তকে দেখা যায়নি৷ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রতন চক্রবর্তী, অরুণচন্দ্র ভৌমিক, দুলাল দাসদের উপস্থিত থাকতে দেখা গেলেও দলের প্রদেশ সভাপতিকে কোথাও দেখা যায়নি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *