BRAKING NEWS

দ্বাদশে বিজ্ঞান বিভাগের মার্কশীটও ভূলে ভরা, পর্ষদের স্বচ্ছতা প্রশ্ণের মুখে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ মে৷৷ দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের মার্কশীট হাতে পেয়ে পর্ষদের কেলেংকারী নিয়ে আরও বড়

সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে দ্বাদশে বিজ্ঞান বিভাগে ফলাফল কেলেঙ্কারির দায় স্বীকার করে নেন ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক মিহির দেব৷ নিজস্ব ছবি৷
সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে দ্বাদশে বিজ্ঞান বিভাগে ফলাফল কেলেঙ্কারির দায় স্বীকার করে নেন ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক মিহির দেব৷ নিজস্ব ছবি৷

প্রশ্ণ উঠতেছে৷ বহু সুকলে পরীক্ষার্থীরা ভুলে ভরা মার্কশীট পেয়েছে৷ শুধু তাই নয় পর্ষদের উপর আস্থা হারিয়ে মার্কশীট হাতে পেয়ে বিশালগড় উচ্চ মাধ্যমিক সুকলের ছাত্রছাত্রীরা এবং অভিভাবকরা সোমবার আগরতলা-সাব্রুম জাতীয় সড়ক প্রায় দুই ঘন্টার বেশী অবরোধ করেন৷ এদিনই বিকালে পর্ষদ সভাপতি ফলাফলে ত্রুটির দায় স্বীকার করে জানিয়েছেন, মার্কশীটে যে নম্বর রয়েছে তাই চূড়ান্ত৷ পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, কোন কোন সুকলে মার্কশীটে ভুল নম্বর ছাপা রয়েছে৷ তাতে দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের ফলাফল নিয়ে যে মারাত্মক ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েছে শনিবারের পর সোমবার ফের পর্ষদের স্বচ্ছতা নিয়ে বড় প্রশ্ণ দেখা দিয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এর তদন্ত করে দেখা হবে৷ পর্ষদ সভাপতি অবশ্য তদন্তের জন্য আজই কলকাতার উদ্দেশ্যে এক অফিসারকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন৷ তবে অতীত দিনের রেকর্ড ঘাটলে দেখা যাবে পর্ষদের ফলাফল নিয়ে নানা কেলেংকারীতে তদন্তই সার, আজ অবদি কাউকেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে উদাহরণ মিলেনি৷
সোমবার বেলা দুইটার মধ্যে রাজ্যের সমস্ত সুকলে মার্কশীট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী৷ পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক মিহির দেব এদিন বিকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবী করেন, মার্কশীটে যা ফলাফল রয়েছে, তাই চূড়ান্ত৷ কিন্তু, পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন কোন কোন সুকলে মার্কশীটে ভুল নম্বর ছাপা রয়েছে৷ সেগুলি সংশোধন করা হবে৷ তাতেই প্রশ্ণ উঠেছে শনিবার ওয়েবসাইটে ভুলে ভরা ফলাফল প্রকাশ করার পর বিকেলে তা প্রত্যাহার করে নেয় পর্ষদ৷ সেদিন জানানো হয়েছিল সোমবার মার্কশীটে যে ফলাফল থাকবে তাই চূড়ান্ত৷ সেক্ষেত্রে মার্কশীট হাতে পাওয়ার পর একাংশের পরীক্ষার্থীদের মার্কশীটে ভুল নম্বর থাকায় দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের ফলাফলে আরও কত কেলেংকারী লুকিয়ে রয়েছে সেই প্রশ্ণই উঠেছে৷ এদিন, রাজধানী আগরতলা শহরে শিশুবিহার সুকলের জনৈক পরীক্ষার্থীর মার্কশীটে দেখা যায় বায়ো সায়েন্সে নম্বর পেয়েছে ৫২৮৷ কোন কোন সুকলে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়নি এমন বিষয়েও নম্বর ছাপা রয়েছে মার্কশীটে৷ পর্ষদ সভাপতি খোদ জানিয়েছেন, অংক পরীক্ষা দেয়নি এমন পরীক্ষার্থীর মার্কশীটে ৫০০ নম্বর ছাপা রয়েছে৷
এদিকে, এদিন মার্কশীট হাতে পাওয়ার পর বিশালগড় উচ্চমাধ্যমিক সুকলের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন৷ তাদের বক্তব্য ওয়েবসাইটে সকলে গড়ে ১৭ করে নম্বর পেয়েছিল৷ কিন্তু আজ যখন মার্কশীট হাতে পায় তখন দেখা যায় গড়ে ২১ করে নম্বর রয়েছে৷ সুকলের ৮১ জন পরীক্ষার্থী প্রত্যেকেরই মার্কশীটে এমনটা ছাপা রয়েছে৷ তারা ক্ষোভে প্রকাশ করে বলেন, ১৭ করেই মার্কশীটে নম্বর থাকলে আগামী বছর নতুন করে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হত৷ কিন্তু, ২১ করে নম্বর হওয়ায় তাদের এবছর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়৷ তাদের বক্তব্য ওয়েব সাইটের পাশাপাশি মার্কশীটেও মারাত্মক গড়মিল রয়েছে৷ এরই প্রতিবাদে এদিন বেলা দেড়টা থেকে বিকাল পৌণে চারটা পর্যন্ত আগরতলা-সাব্রুম জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অবরোধস্থলে ছুটে যান বিশালগড়ের বিদ্যালয় পরিদর্শক আগন কুমার ত্রিপুরা৷ তিনি অবরোধকারীদের অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান৷ কিন্তু, তারা তাতে রাজি হননি৷ পরবর্তী সময়ে বিশালগড় থানার ওসি এবং ডিসিএম উত্তম দাস বৈষ্ণব অবরোধস্থলে যান৷ তিনি অবরোধকারীদের মার্কশীট জেরক্স করে দেওয়ার জন্য বলেন৷ এই মার্কশীট পর্ষদে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হবে এই প্রতিশ্রুতিতে অবরোধকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন৷ এদিকে, রাজ্যের অন্যান্য মহকুমা থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গিয়েছে বহু সুকলের পরীক্ষার্থীদের মার্কশীটে অনুরূপ ঘটনা লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ তাতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷
এদিকে, পর্ষদের জন্য সবচেয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের ৩৩১৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশই রিভিউর আবেদন জানাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ পর্ষদ সভাপতি এদিন জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে রিভিউর জন্য আবেদন জানানো যেতে পারে৷ তবে, আগামী ২৮ মে’র মধ্যে সংশ্লিষ্ট সুকলে নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে৷ কিন্তু, কবে নাগাদ রিভিউর ফলাফল ঘোষণা করা হবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন দিনক্ষণ এদিন জানাতে চাননি পর্ষদ সভাপতি৷ এদিকে, অধিকাংশ অভিভাবকরা চাইছেন রিভিউর খাতা যাতে তাদের সামনে দেখা হয়৷ পর্ষদের উপর আস্থা এতটাই হারিয়ে গিয়েছে যে অভিভাবকরা মনে করছেন রিভিউতেও কারচুপির পথ বেছে নেবে পর্ষদ৷ ফলে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা কোন রকম ঝুকি নিতে চাইছেন না৷ অবশ্য নিয়ম অনুযায়ী অভিভাবকদের এই দাবী পর্ষদ মেনে নেবেনা বলে জানা গিয়েছে৷ এদিকে, শিশুবিহার সুকলের অধিকাংশ পরীক্ষার্থীরাই রিভিউর জন্য আবেদন করবে বলে জানা গিয়েছে৷ মার্কশীট হাতে পেয়ে প্রাপ্ত নম্বরে কেউই সন্তুষ্ট নন৷ এছাড়াও রাজধানীর নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতন, উমাকান্ত একাডেমী, মহারাণী তুলসীবতি বালিকা বিদ্যালয় সহ অন্যান্য স্কলগুলির পরিক্ষার্থীদের অধিকাংশই রিভিউর জন্য আবেদন জানাবে৷ রাজ্যের মহকুমাগুলির সুকলগুলির পরীক্ষার্থীরাও একই প্রস্তুতি নিচ্ছে৷
তবে এই ফলাফল কেলেংকারী নিয়ে সূত্রের দাবী ওয়েবসাইটে যে ফলাফল প্রকাসিত হয়েছে সেটাই সঠিক৷ মার্কশীটে যে ফলাফল দেখনো হচ্ছে তা মূলত গুজামিল দিয়ে পরীক্ষার্থীদের নম্বর বাড়ানো হয়েছে৷ সূত্রের বক্তব্য প্রতিবছরই এমনটা করা হয়ে থাকে৷ আসল সিডি পর্ষদের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে জমা রাখা হয়৷ এর পর সেই ফলাফলের সাথে গ্রেস মার্কস যোগ করে পরীক্ষার্থীদের মার্কশীট ছাপানো হয়৷ যাতে রাজ্যে পাশের হার বেড়েছে এমনটা ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়৷ সূত্রের দাবী এবছর গ্রেস নম্বর ছাড়া আসল ফলাফলের সিডিটি ভুল বশতঃ পাঠানো হয়েছে কলকাতা থেকে৷ সময়ের অভবে সঠিক যাচাই না করেই সেই ফলাফলের সিডি ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া হয়৷ আর তাতেই ঘটে যায় মারাত্মক বিপত্তি৷ সূত্রের বক্তব্য, কেলেংকারী প্রতিবছর হচ্ছে, কেবল ভুল বশতঃ এবার সঠিক ফলাফলের সিডি কলকাতা পাঠানোয় বিষয়টি নজরে আসে৷ আর তাতেই পর্ষদ জনসমক্ষে কলংকিত হয়৷
এদিন মহাকরণে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ফলাফল কেলেংকারী নিয়ে তিনি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন৷ আগামীদিনে যাতে এই ধরনের গন্ডগোল না হয় সেদিকে দায়িত্ব নিয়ে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন৷ পর্ষদ সভাপতি এবং সচিবকে তিনি এত তাড়াহুড়ো করে ফলাফল প্রকাশ না করাই শ্রেয় ছিল বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন৷
তবে, এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন, দ্বাদশ এবং মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তার জন্য দূর্বল পরিকাঠামোই অনেকাংশে দায়ী৷ সিবিএসই দশ লক্ষাধিক পরীক্ষার্থীর ফলাফল নির্বিঘ্নে প্রকাশ করছে, অথচ রাজ্যে পর্ষদ ৪০-৫০ হাজার পরীক্ষার্থীর ফলাফল প্রকাশ করতে গিয়ে মুখ থুবরে পড়ছে, এই প্রশ্ণের জবাবে পর্ষদ সভাপতি জানান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত দূর্বলতা মারাত্মক৷ মার্কশীট তৈরীর করা থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট প্রিন্ট করা সমস্ত কিছুর জন্য বহিঃরাজ্যের উপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে পর্ষদকে৷ সেক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম দূর্বলতার নজির স্থাপন করল রাজ্য সরকার, পর্ষদ সভাপতির বক্তব্যে অনেকটাই স্পষ্ট৷ ফলাফল প্রকাশ ঘিরে যে সমস্যা তার সমাধান আদৌ হবে বলে মনে করছেন না পর্ষদ সভাপতি৷ তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, দূর্বল পরিকাঠামো পরিবর্তন সম্ভব হবে কিনা এবং ফলাফল প্রকাশ ঘিরে সমস্যার সমাধান কবে নাগাদ সম্ভব হবে তা দেখা যাচ্ছে না৷ ফলে, দ্বাদশের বিজ্ঞান বিভাগের ফলাফল গিরে যে কেলেংকারী হয়েছে তার পিছনে রাজ্য সরকারের দায় অনেকাংশে রয়েছে বলে অভিভাবক মহলের দাবি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *