
নয়াদিল্লি, ২৭ এপ্রিল৷৷ উত্তরপূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের ব্যয় বরাদ্দের উপরআলোচনায় অংশ গ্রহণকরে আজ লোকসভায় ত্রিপুরার সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রতি আর্থিক বঞ্চনা অব্যাহত৷ তারসাথে বিরাজ করছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব৷ মূলত, এই দুটি কারণেই দারুণ সম্ভাবনাময় একটি অঞ্চল আজ নানাবিধ সমস্যায় ধঁুকছে৷ তার দায় অতীত এবং বর্তমান উভয় সরকারের উপরই বর্তায়৷
শ্রী চৌধুরী বলেন, আর্থিক বঞ্চনার পরম্পরা চলতি বাজেটেও প্রকট৷ উপা এবং এনডিএ উভয় সরকারই বলছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি মন্ত্রক নূ্যনতম দশ শতাংশ অর্থ উত্তরপূর্বাঞ্চলে খরচ করা হবে বা হচ্ছে৷ চলতি বাজেটে পরিকল্পনা খাতে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দের হিসেবে পঞ্চান্ন হাজারটাকা বরাদ্দ হওয়ার কথা৷ কিন্তু ছাপান্নটি মন্ত্রক মিলে বরাদ্দ করেছে মাত্র তেত্রিশ হাজার সাতানববই কোটি টাকা৷ বাইশ হাজার কোটি টাকা কম৷ তার মধ্যে উত্তরপূর্বাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রকের বরাদ্দ মাত্র দুই হাজার চারশ ষাট কোটি টাকা৷ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সাথে বাস্তবের বিস্তর পার্থক্য৷
শ্রীচৌধুরী বলেন, এটা অত্যন্ত পরিতাপের যে দেশ পরিচালকদের ব্যর্থতার কারণে উত্তরপূর্বাঞ্চল সম্পর্কে দেশের বাকি অংশের মানুষের মনে অত্যন্ত ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে৷ অনেকে মনে করেন উত্তরপূর্বাঞ্চল এখানে শুধুমাত্র উগ্রবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের দাপাদাপি, স্বাধীন উত্তরপূর্বাঞ্চল, স্বাধীন নাগাল্যান্ড ও স্বাধীন মণিপুরের স্লোগান, উলফা, এনএসসিএন, এনএলএফটি এবং টাইগার্স ফোর্সের আস্ফালন৷ কিন্তু উত্তরপূর্বাঞ্চলের জনগণ বহু ভাষা ও সংসৃকতিতে বিভক্ত হলেও তাঁরা কতটুকু স্মরণসিধে এবং দেশপ্রেমিক এ চিত্র তুলে ধরা হয় না৷ নেতাজী সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বে এই অঞ্চলেই মণিপুরের মাটিতে প্রথম স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল৷ সেই লড়াইয়ে নাগা, কুকী এবং মণিপুরীরা ও অংশগ্রহণ করেছিলেন৷ সে ভিত্তি এখনও অটুটু৷
শ্রীচৌধুরী বলেন, উত্তরপূর্বাঞ্চলের অফুরন্ত সম্ভাবনা সমূহকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ উত্তরপূর্বাঞ্চল পৃথিবীর ১২টি সমৃদ্ধ জৈব বৈচিত্র অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম৷ অরণ্য, নদী, জলাধার, পাহাড়, ফল, ফুল, পশু, পাখি এবং অসংখ্য উদ্ভিদে ভরপুর এই অঞ্চল৷ দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ কৃষি অঞ্চল, যেখানে বর্ষা ঋতু ছাড়াও বছরের প্রায় অধিক সময়ে বৃষ্টি হয়৷ বৃষ্টিপাতের মাত্রাও বেশী৷ এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, কয়লা, লাইম এবং ইউরোনিয়াম ভান্ডার আবিষ্কার হয়েছে৷ আরো অনেক কিছু অনাবিষৃকত রয়েছে৷ ত্রিপুরা বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাবার উৎপাদক রাজ্য৷ অন্য রাজ্যেও তার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে৷
বিশেষজ্ঞদের অনুমান একমাত্র অরুণাচল প্রদেশেই লক্ষাধিক মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে৷ পর্যটন বিকাশের জন্য আদর্শ অঞ্চল৷ পরিবেশ, ধর্মীয় ক্ষেত্রে এবং পুরাতাত্ত্বিক এলাকা ভিত্তিক পর্যটন বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই অঞ্চন্েলর বৈচিত্র্যময় ভাষা ও সংসৃকতির সম্ভার তার জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র৷
কৃষি উৎপাদনের সিংহভাগই জৈবিক বা অর্গানিক হাব গড়ে তোলার আদর্শ ক্ষেত্র৷ তার সাথে রয়েছে ভেষজ শিল্প গড়ে তোলার প্রচুর সম্ভাবনা৷ আয়তনে দেশের আটভাগ হলেও জনসংখ্যার মাত্র চার ভাগ মানুষের বাস৷ এটাও উন্নয়নের সুবিধার অন্যদিক৷ উত্তরপূর্বাঞ্চল সাক্ষরতার দিক থেকে বরাবরই দেশের অন্য অংশ থেকে এগিয়ে৷ ত্রিপুরা ও মিজোরাম বর্তমানে সাক্ষরতার মানচিত্রে প্রথম ও তৃতীয় স্থানে৷
জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেন উন্নয়নের এক সম্ভাবনা থাকার পরও কেন তাহলে উত্তরপূর্বাঞ্চল পিছিয়ে রয়েছে? তার কারণ সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাব৷ দেশভাগের কারণে একদিকে সীমান্তবেষ্টিত বিচ্ছিন্ন এবং অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা৷ বেশিরভাগ রাজ্য ছোট ছোট হওয়ার কারণে এবং সম্পদ আহরণের জন্য পরিকাঠামো তৈরি না হওয়ার কারণে নিজস্ব রাজস্ব সংগ্রহে দুর্বলতা৷ এই দুর্বলতা থেকে উত্তরপূর্বাঞ্চলকে বের করে নিয়ে আসার জন্য উত্তরপূর্বাঞ্চল মন্ত্রক বা অন্যান্য মন্ত্রকের পরিকল্পনা বা বরাদ্দে গতানুগতিক তার বাইরে নতুন কিছুর চিহ্ণ নেই৷
সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়ে শ্রী চৌধুরী বলেন, এনইসিকে সত্যিই পরিকল্পনা গ্রহণে সক্ষম এমন সংস্থায় উন্নীতকরণ নতুবা এটাকে ভেঙ্গে দিন৷ বাকি দেশের সাথে এবং আন্তরাজ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে একটা বহুমুখী প্রকল্প ঘোষণা করুন৷ স্থল, জল এবং আকাশ সবপথেই যোগাযোগের ব্যবস্থা উন্নতকরণ৷ তার সাথে প্রতিবেশী দেশগুলির সাথেও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলুন৷ উত্তরপূর্বাঞ্চলের সমপরিমাণ বাঁশ সম্পদকে ভিত্তি করে চিন এক হাজার মিলিয়ন ডলার আয় করছে৷ বিস্তর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে৷ কিন্তু এটা নিয়ে আমাদের এখনও কোন চিন্তাভাবনা নেই৷ তিনি ব্যাম্বো বোর্ড গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন৷
শ্রীচৌধুরী আরো বলেন, বর্তমান সরকার যদি সত্যিই এই অঞ্চলের উন্নয়নে আন্তরিক হন৮০-র দশকে গঠিত শুক্লা কমিশনের রিপোর্ট এবং প্রথম উপা সরকারের সময়ে তৈরি করে ভিশন ২০২০-র পাতাগুলি একটু উল্টে দেখুন৷ তিনি ন্যারামেক ও নিডফাই-র দৈন্যদশার কথা তুলে ধরেন৷ পরে ভারপ্রাপ্তমন্ত্রী ড জীতেন্দ্র সিং জবাবি ভাষণ দিতে উঠলে শ্রীচৌধুরী এনএলসিপিআর সম্পর্কে মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী কি তা চেপে ধরলে শ্রী সিং অর্থমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে বসে পড়েন৷ এই ব্যয় বরাদ্দের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপি, জেডি(ইউ) এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন দলের সাংসদেরা বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে শুধুমাত্র বিড়ম্বনা না করে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানান৷