BRAKING NEWS

এই হত্যা গণতন্ত্রের লজ্জা

attackগণতন্ত্রের সুবাতাস এখনও রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ে আন্দোলিত হইতেছে এমন বলিবার সুযোগ নাই৷ কারণ, ভোট নিয়া পারিবারিক অশান্তির আগুনই শুধু জ্বলিয়া উঠে না রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়া যায়৷ স্বামী স্ত্রীকে খুন করিবার ঘটনা আমাদের গণতন্ত্রের অবস্থা যে কতখানি বিপজ্জনক হইয়া উঠিতেছে, তাহাই শংকা আনিয়া দেয়৷ প্রকাশিত সংবাদে জানা গিয়াছে, গন্ডাছড়া থানার অন্তর্গত জগবন্ধু পাড়া এডিসি ভিলেজের মুক্তারাম পাড়াতে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে৷ গত এডিসি ভিলেজ কাউন্সিল নির্বাচনে ডম্বুরনগর ব্লকের মুক্তারাম পাড়া এডিসি ভিলেজে আইএনপিটি দলের প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়ান শশী রানী ত্রিপুরা৷ শশী রানী ভোটে দাঁড়াইতে ইচ্ছুক ছিলেন না৷ কিন্তু স্বামী ধীরেন্দ্র ত্রিপুরা জোর করিয়াই স্ত্রীকে ভোটে দাঁড় করান৷ সিপিএমের প্রার্থীর কাছে শশী রানী পরাস্ত হওয়ায় স্বামী ক্ষুব্ধ হন এবং স্ত্রীর উপর ক্রমাগত নির্যাতন চালাইতে থাকেন৷ জগবন্ধু এডিসি ভিলেজের সাতটি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট জয়ী হয় দুইটি আসনে৷ বাকি পাঁচটি আসনে জয়ী হয় আইএনপিটি৷ অথচ মুক্তরাম পাড়ায় শশী রানী পরাস্ত হওয়াতে ক্ষীপ্ত হন স্বামী ধীরেন্দ্র ত্রিপুরা৷ তাহার নৃশংস অত্যাচারে, মারের চোটে নিরপরাধ শশী রানীর মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়ার ঘটনা, আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার এক বড় কলংক হিসাবে চিহ্ণিত হইতে পারে৷ নির্বাচনে জয় পরাজয় মানিয়া নিয়া গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আস্থাশীল হওয়ার পাঠ দেশের বহু ভোটারদেরই যে নাই তাহাই চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল শশীরানীর এই নৃশংস খুনের ঘটনা৷
শশী রানীর এই নৃশংস খুনের ঘটনার সঙ্গে নির্বাচনে পরাস্ত হওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট হওয়াতে খুব বেশী দাগ কাটিয়াছে রাজনৈতিক মহলে৷ বিশেষ করিয়া যাহারা গণতন্ত্রের সম্প্রসারণে অনেক বেশী সক্রিয়, তাঁহারা মানসিক যন্ত্রণাবিদ্ধ হইবেন৷ রাজ্যের গ্রাম ত্রিপুরায় এতবড় অমানবিক কান্ড চলিতেছে রাজনৈতিক নেতারা সেখানে কি ভূমিকা নিয়াছেন? আইএনপিটির এক মহিলা প্রার্থীকে ভোটে পরাস্ত হইবার দায়ে তাঁহার স্বামী তাহাকে নৃশংসভাবে খুন করিয়া ফেলিবে? যদি এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে ভোটে পরাস্ত হইবার বিষয় জড়িত থাকে তাহা হইলে আইএনপিটি দলও এই দায় হইতে সহজে ঝাড়া হাত পা হইতে পারে না৷ আজও বহু পরিবার আছে যেখানে সদস্যরা একেকজন একেক পার্টির সঙ্গে আছেন৷ এক পরিবারের বহু দলের সমাহারও দেখা যায়৷ সেখানে উপজাতি মহল্লায়, গণতন্ত্রের প্রসার হইলেও সেই সঙ্গে ভোটে পরাজয়ের দুঃখ বেদনা এমন মর্মান্তিক পথে নিয়া যাওয়ার ঘটনা খুব স্বাভাবিক ভাবেই নতুন করিয়া ভাবিবার তাগিদ আনিয়াছে৷ শশী রানীর এই খুনের ঘটনা পাহাড়ী জনপদে, ভোট ফলের ভয়ানক পরিণতির বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল৷ ইহাকে খাটো করিয়া দেখিবার সুযোগ নাই৷
পাহাড়ি জনপদে শিক্ষার প্রসার যত বাড়িবে যুক্তিবাদী মানসিকতা যতবেশী দেখা দিবে ততই এই নৃশংস ঘটনা রোধ করিতে পারে৷ স্ত্রী শশী রানী ভোটে হারিয়া যাওয়াকে স্বামী ধীরেন্দ্র মানিয়া নিতে পারে নাই৷ কারণ স্ত্রীকে ভোটে দাঁড় করাইয়াছে ধীরেন্দ্রই৷ ভোটে পরাস্ত হওয়ায় সমস্ত রাগ স্ত্রীর উপরই পড়িয়াছে৷ স্ত্রীও তাহা বাহিরে প্রকাশ করিত না৷ ফলে, অত্যাচারের মাত্রাও বাড়িয়া যায়৷ কেন একজন মহিলা ভোটে দাঁড়াইয়া পরাস্ত হওয়ার কারণে স্বামীর রোষাণলে পড়িয়া প্রাণ দিতে হইবে? আজ দলমত নির্বিশেষে রুখিয়া দাঁড়াইতে হইবে৷ খুনী স্বামীকে শাস্তি দিতেই হইবে৷ আর কোনও গৃহবধূ বা মহিলাকে যাহাতে এইভাবে প্রাণ দিতে না হয় সে বিষয়ে রাজ্য জুড়িয়া প্রচার আন্দোলন চালু রাখিতে হইবে৷ শিক্ষার প্রসারে, গণতন্ত্রের প্রসারে গ্রাম পাহাড়ে অগ্রণী ভূমিকা নিতে না পারিলে বহু উপজাতি মানুষকে নৃশংসতার বলি হইতে হইবে৷ ইহা আমাদের সভ্যতার, প্রগতির লজ্জা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *