BRAKING NEWS

বিপদের নিশানায় থাকা ত্রিপুরা আবারও কাঁপল

earthquakeনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, তেলিয়ামুড়া, চুড়াইবাড়ি, বিলোনীয়া, খোয়াই, ১৩ এপ্রিল৷৷ ফের কেঁপে উঠল ত্রিপুরা সহ পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলি৷ সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং দেশের অন্যান্য অংশ৷ বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে এবং ৭টা ৩৩ মিনিটে ভূমিকম্পের আতঙ্ক আবারও মানুষের চোখে মুখে ফুটে উঠল৷ ভারত-মায়ানমার সীমান্তে এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল বলে ন্যাশনাল সেন্টার অব সিসমোলজি (এনসিএস) জানিয়েছে৷ এই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী মায়নামারের রাজধানী থেকে ৩৯৬ কিলোমিটার উত্তরে৷ রিখটার স্কেলে এদিনের ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬৮৷ ভূপৃষ্ট থেকে ১৩৪ কিলোমিটার গভীরে এই ভূকম্পন হয়৷ তার প্রভাব পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলিতে মারাত্মক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে৷
ইন্দো-মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় এই ভূমিকম্পের উৎস হওয়ায় পূর্ব ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের বেশ কয়েকটি স্থানে তার তীব্র প্রভাব পড়েছে৷ বেশ কিছু বাড়ি ঘরে ফাঁটল দেখা দিয়েছে ঐসব রাজ্যে৷ কারোর মৃত্যুর কোন খবর না থাকলেও বেশ কিছু লোক আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷ এদিকে, বিভিন্ন স্থানে পাকা বাড়ি, নির্মীয়মান বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে৷ বাংলা বছরের শেষের দিনে কর্মব্যস্ত মানুষের মধ্যে সন্ধ্যারাতের এই ভূমিকম্প রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে৷
সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ত্রিপুরা জেলায়ও প্রবল কম্পন অনূভূত হয়৷ গোটা জেলাবাসী আতঙ্কগ্রস্থ৷ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাড়ীতে অল্পবিস্তর ফাটল দিয়েছে ভূকম্পনের ফলে৷ তার সাথে রাজ্যের প্রবেশদ্বার চুরাইবাড়ি রেলষ্টেশনের বিশাল একটি ওয়াল ভেঙ্গে পড়ে ভূমিকম্পে৷ তবে উত্তর জেলায় হতাহতের কোন খবর নেই৷ এদিকে, ধলাই জেলার মানিকভান্ডারে গনেশ ঘোষ (৪০) নামে এক ব্যাক্তি রাস্তা দিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় ভূমিকম্পের প্রভাবে তিনি নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং রাস্তার পাশে একটি খাদে পড়ে যান৷ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তার অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় আগরতলা জি বি হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে৷ অন্যদিকে লেম্বুছড়ার কালাপানিয়া গ্রামের একটি ওভার হ্যাড ট্যাঙ্কের পাকা সিঁড়ি কাঁত হয়ে গিয়েছে৷ যেকোন ভেঙ্গে পড়তে পারে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
এদিন, সন্ধ্যা রাতে আগরতলার রাজপথে যখন জনজোয়ার৷ বর্ষশেষের চৈত্র সেলের জমজমাট বিকিকিনি৷ শহরের প্রতিটি রাস্তা, মোড়ে যখন ক্রেতা বিক্রেতার দাপাদাপি৷ ঠিক তখনই কেঁপে উঠল মাটি৷ সাথে সাথে বড় বড় ইমারত৷ বহুতল ভবন থেকে তখন প্রাণ নিয়ে পালাবার তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে৷ শহরের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে৷ এছাড়াও বেশ কয়েক জনের বিল্ডিং বাড়ি বেআইনীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে পুর নিগমের বিল্ডিং রুলস উলঙ্ঘন করে৷ এদিন সন্ধ্যায় যখন ভূমিকম্পের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল তখন আতঙ্কগ্রস্ত মানুষজন বিগ বাজার, মেট্রো বাজার, বাজার কলকাতার মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত পালিয়ে আসতে শুরু করেন৷ সবারই জানা রয়েছে বিপজ্জনক অবস্থাতে এইসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি নির্মাণ করা হয়েছে৷ দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন রক্তাক্তও হয়েছেন বলে খবর মিলেছে৷ তবে নিহতের কোন খবর মিলেনি৷
রাজধানী আগরতলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু বহুতল বিপজ্জনক অবস্থাতে রয়েছে৷ সেগুলি বিল্ডিং রুলস মেনে নির্মাণ করা হয়নি বলে অভিযোগ৷ তাছাড়া ঐসব বহুতল নির্মাণের অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে৷ আগরতলা পুর নিগম এবং রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে ঐসব বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন কঠোর নজরদারী রাখা হয়নি৷ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বহুতল আবাসন ও বসতবাড়ী নির্মাণের ক্ষেত্রেও বিল্ডিং রুলস মানা হয়নি৷ টেবিলের নীচ দিয়ে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে অনুমোদন হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ যেখানে ত্রিপুরা ভূমিকম্প ঝঁুকির ৫ নম্বর জোনে তথা বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে সেখানে বিল্ডিং রুলসকে কলাপাতা হিসেবে ধরে নিয়ে বেআইনী ভাবে বহুতল নির্মাণের তৎপরতা জোরদার ভাবে চলছে৷ তাতে প্রশাসনের কোন হেলদোল নেই৷ এছাড়া বেশ কিছু সরকারী অফিসবাড়িও রয়েছে যেগুলি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে৷ যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে৷ তারপরও প্রশাসন এই বিষয়ে আইনের কঠোর প্রয়োগ করছে না৷
ত্রিপুরা ভূমিকম্প প্রবল অঞ্চলে অবস্থান করছে৷ তা বহু আগে থেকেই সতর্কবানীর মধ্য দিয়ে জানানোও হয়েছে৷ সেই কারণেই এইসব অঞ্চলের মানুষজনকে সবসময় সতর্ক থাকতে প্রশাসনের তরফ থেকে আগাম বার্তা দেওয়া হয়েছে এরই অঙ্গ হিসাবে বিশেষ করে ত্রিপুরায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা বিষয়ক কর্মশালা বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই করা হয়ে থাকে৷ এইসব কর্মশালার মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করার প্রচেষ্টা জারি রয়েছে৷ শুধু প্রশাসনিক স্তরেই নয়, শহর ও গ্রামীণ এলাকার স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জরুরীকালীন পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য পরিচালনা করার প্রয়াস জারি রয়েছে৷ নিঃসন্দেহে এই ধরণের উদ্যোগ ত্রিপুরার মতো ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলে খুবই সময়োপযোগী৷ বুধবার ত্রিপুরার মাটিও যখন কেঁপে উঠেছিল তখন এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের মনকেও নাড়া দিয়েছে, আরও বেশী জাগ্রত করেছে৷ এদিনের ভূমিকম্প ছিল খুবই ভয়াবহ৷ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভূমিকম্পের আঘাতে মাটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে৷ দালানবাড়িগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলিতে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে৷ বিশেষ করে উদ্ধারকারী দলগুলির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির মজুত ভান্ডার আরও গতিশীল করার আবশ্যিকতা দেখা দিয়েছে৷ শুধু প্রশিক্ষণ দিয়ে দায়িত্ব খালাস করলেই চলবে না৷ প্রতিটি এলাকায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করাও প্রশাসনের গুরুদায়িত্ব৷ অন্যথায় ত্রিপুরায় বড় ধরণের আঘাত আসলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে প্রশাসনকে হিমসিম খেতে হবে৷
রিখটার স্কেল রাজ্যের অন্যান্য স্থানের মতো তেলিয়ামুড়া মহকুমা ভূমিকম্পের কম্পন লক্ষ্য করে আতঙ্কে মানুষজনেরা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে৷ প্রথমে কম্পনের স্কেল সামান্য থাকলেও পরে কম্পনের তীব্রতা ছিল বেশি৷ আজ ছিল চৈত্রের শেষ দিন৷ বাজারে লোকের সমাগম ছিল অনেক বেশি৷ অন্যদিকে তেলিয়ামুড়া বিভিন্ন এলাকায় চৈত্র সংক্রান্তির মেলাও বসে৷ ভুূমিকম্পের কম্পন লক্ষ্য করে লোকেরা নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছিল বলে সংবাদ৷ যদিও ক্ষয়ক্ষতির তেমন খবর নেই৷ তবে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুবার কেঁপে উঠল রাজ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যজুড়ে৷ বিলোনিয়ায় চৈত্রের মেলায় ভূমিকম্পের আতঙ্কে সমস্ত ক্রেতারা পালিয়ে যান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *