BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় কংগ্রেসে বিদ্রোহ

CONGRESS SUDIPত্রিপুরায় কংগ্রেস দল যে সাইনবোর্ড সর্বস্ব হইয়া যাইবে তাহাই স্পষ্ট হইয়া গেল৷ কংগ্রেসের ডাকসাইটে তরুণ নেতা, যাহার সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ণ, সেই সুদীপ রায় বর্মন এমন সাধের বিরোধী দলনেতার পদ স্ব-ইচ্ছায় ছাড়িয়া দিলেন৷ কিন্তু বিধায়ক পদ হইতে ইস্তফা দেন নাই৷ তিনি কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে ভোটে জিতিয়াছেন সিপিএমের বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই করিয়া৷ সিপিএমের বিরোধীতা করিয়া ভোটে জিতিয়া এখন বাম দলের সঙ্গে দলের সখ্যতা যেখানে, সেখানে বিধায়ক পদ হইতে পদত্যাগ করিলে নৈতিকতার জয় ঘোষিত হইত৷ না, তিনি সেই পথে হাঁটিলেন না৷ বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে লেখা এক পদত্যাগপত্রে তিনি বিদ্রোহই করিলেন৷ এবং বিধাসনভার অধ্যক্ষের কাছেও পদত্যাগপত্র বৃহস্পতিবারই পেশ করিয়াছেন৷ পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের বিরোধীতা করিয়া এবং ইহার প্রতিবাদে তিনি কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতার পদ হইতে ইস্তফার কথা জানাইয়াছেন ওই পত্রে৷ এই বিদ্রোহের আঁচ আগেই মিলিয়াছে৷ পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের মিতালীর অর্থই হইল ত্রিপুরায় এই দলকে বলি দেওয়া৷ ত্রিপুরায় প্রাচীন এই দলের যে আর কোনও ভবিষ্যৎ নাই তাহাই যখন রাজনীতির হিসাবে স্পষ্ট, তখন সুদীপবাবুদের তো নিজেদের ভবিষ্যতের ভাবনা আসিবেই৷ ইহাই স্বাভাবিক৷ কারণ, কংগ্রেস দলের তো কোনো নীতি নাই৷ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস সিপিএম আঁতাত ত্রিপুরায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার বিষয়কে খাটো করিয়া দেখিয়াছে দলের হাইকম্যান্ড৷ বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের এই নির্বাচনী আঁতাত বাম প্রভাবিত রাজ্যগুলিতে দলে বিদ্রোহের সূচনা হইতে বাধ্য৷ সেই বিদ্রোহের মধ্য দিয়া নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের পথেই আগাইবে ত্রিপুরা৷ দলত্যাগ বিরোধী আইন বাঁচাইয়া কিভাবে দল ছাড়িয়া ভিন্ন দলে যোগ দেওয়া যায় তাহার প্রক্রিয়া যে সুদীপবাবুরা দীর্ঘদিন যাবৎই চালাইয়াছেন তাহা আর গোপন নাই৷ সুদীপবাবুরা কি দলত্যাগ বিরোধী আইন বাঁচাইতে পারিবেন? যেহেতু তিনি কংগ্রেস পরিষদীয় দলের পদ হইতে ইস্তফা দিয়াছেন সুতরাং তাঁহার সামনে দলত্যাগই পরিণতি৷ কারণ, কংগ্রেস সভানেত্রীর কাছে পত্র বোমা পাঠাইবার পর দলে থাকিবার সামান্য সম্ভাবনাও আর রহিল না৷
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি বরাবরই ত্রিপুরাকে প্রভাবিত করে৷ এইবারের এই বাম কংগ্রেস সখ্যতা সমস্ত রাজনৈতিক ইতিহাসকেই বিদ্রুপ করিয়াছে৷ কারণ, কংগ্রেস বিরোধীতার মধ্য দিয়া সিপিএমের উত্থান৷ অন্যদিকে, সিপিএম বা বাম বিরোধীতাই কংগ্রেসের প্রাণ শক্তি৷ অন্তত, ত্রিপুরার ক্ষেত্রে তো ইহাই একমাত্র বাস্তব৷ এই বাস্তবকে অস্বীকার করিয়া কংগ্রেসের তাবড় নেতারা মাটি খুঁজিয়া পাইবেন? না, এ রাজ্যে কংগ্রেস-সিপিএম বন্ধুত্ব অসম্ভব? আর এই বন্ধুত্বের অর্থই হইল কংগ্রেসের অনিবার্য্য মৃত্যু৷ সেই আত্মহত্যার পথ হইতে সুদীপবাবুদের সরিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্তকে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা হয়তো স্বাগত জানাইবেন৷ ত্রিপুরায় বিজেপিতে অনেক কংগ্রেস নেতাই আস্তানা নিয়াছেন৷ কিন্তু এই দলের সামনে অনুজ্জ্বল ভবিষ্যতই দেখা যাইাতেছে৷ স্থানীয়ভাবে মাটির সঙ্গে যোগ আছে এমন নেতৃত্ব তেমন মূল্য পাইতেছেন না৷ চাপাইয়া দেওয়ার নেতৃত্ব মাটির কাছাকাছি যাইতে পারে না৷ ফলে, সব কিছু থাকিয়াও এই দলের আসলে কিছুই নাই৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা মাঝে মাঝে আসিয়া হুঙ্কার দিলেই দল প্রাণ শক্তিতে উজ্জীবিত হইবে এমন ভাবিবার কারণ নাই৷ ফলে, বর্তমানে কংগ্রেসের নেতারা দলত্যাগ করিলে তৃণমূল কংগ্রেসের দরজাই খোলা আছে৷ এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস জাগিয়া উঠিবার সম্ভাবনাকে উড়াইয়া দেওয়া যায় না৷ কংগ্রেসের জায়গায় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠায় যদি সুদীপবাবুরা আদা জল খাইয়া নামিয়া পড়েন তাহা হইলে আশ্চর্য্যের হইবে না৷ বরং বলা যায়, এই পথেই হাঁটিতেছেন সুদীপবাবুরা৷ ত্রিপুরার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এমনই যে, এখানে সিপিএম কংগ্রেস ভাই ভাই রাজনীতির জায়গা নাই৷ এই পরিস্থিতি টের পাইয়া নিরাপদ জায়গার সন্ধানে সুদীপবাবুরা হাঁটিবেন ইহা অস্বাভাবিক নহে৷
এ রাজ্যে এক সময় তৃণমূল কংগ্রেস সারা রাজ্যেই ভিত গড়িয়া তুলিয়াছিল৷ সুধীর রঞ্জন মজুমদার, আশীষ সহাারা মমতার ডাকে সাড়া দিয়াছিলেন৷ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ায় আশিষ সাহাকে পুর পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়িতে হইয়াছিল৷ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আবার তাহারা কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন করিয়াছিলেন৷ সেই পরিস্থিতির চাহিয়া বর্তমান পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক৷ কংগ্রেস বামের সখ্যতার বিষয়টি ছিল গোপন প্রেমের মতো৷ এখন তাহা প্রকাশ্যে৷ সুতরাং সুদীপ, আশীষবাবুরা নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের স্বার্থেই বিদ্রোহের পথে পা বাড়াইলেন৷ ত্রিপুরার কংগ্রেস রাজনীতির ইতিহাসে এমন গুরুতর পরিস্থিতি ইতিপূর্বে তেমন বোধ হয় দেখা যায় নাই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *