BRAKING NEWS

কলকাতায় নির্মিয়মাণ উড়ালপুল ভেঙ্গে মৃত ২২, আহত বহু

kolkatamapকলকাতা, ৩১ মার্চ৷৷ ব্যস্ত কলকাতার রাজপথে হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ল নির্মীয়মাণ উড়ালপুল৷ বৃহস্পতিবার কলকাতায় পোস্তায় নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ে নিহত হয়েছেন ২২ জন৷ আহত বহু৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে৷ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবারের সকালে কলকাতার রাজপথ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে৷ এর সাথে এই ঘটনার জন্য কে দায়ী তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে যায়৷
২০০৯ সালে এই উড়ালপুলটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়৷ কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) যৌথ সহযোগিতায় আইভিআরসিএলকে বরাত দেওয়া হয় উড়ালপুলটি নির্মাণের৷ চুক্তি অনুযায়ী ১৮ মাসের মধ্যে উড়ালপুল নির্মাণ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৭ বছরে সমাপ্ত হয়নি এর কাজ৷ স্বাভাবিকভাবে এই উড়ালপুল ভেঙে পড়ার জন্য শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে কাঠ গড়ায়  দাঁড় করানোর পাশাপাশি দায় বর্তানো হয়েছে পূর্ববর্তী বামফ্রন্ট সরকারকেও৷ কারণ, বাম আমলেই উড়ালপুলটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল৷ তবে, এই উড়ালপুলের তদারকির দায়িত্বে কেএমডিএ চরম গাফিলতি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এদিন, উড়ালপুলটি ভেঙে পড়ায় এর নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই কয়েকজনের মৃত্যু হয়৷ বহু মানুষ আটকে পড়ে যায় এর নিচে৷ এমনকি, যাত্রীবাহী বাসও আটকে পড়ে যায়৷ মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়৷ পথচারী যারা অল্পেতে প্রাণে বেঁচেছেন তাদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে৷ ঘিঞ্জি এলাকায়  উড়ালপুল নির্মাণের অনুমতি দেওয়া নিয়েও প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ এদিকে, নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে৷
এই ঘটনায় পোস্তায় থানায় নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের  হয়েছে৷ কলকাতায় সংস্থাটির সমস্ত দপ্তর সিল করে দিয়েছে রাজ্য পুলিশ৷ এদিন, উদ্ধারকাজে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন সহ এনডিআরএফ এবং সেনা জওয়ানদের  সহায়তা নেওয়া হয়েছে৷
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ গণেশ টকিজের কাছে চিৎপুর রোড ও মহাত্মা গান্ধী রোডের সংযোগস্থলে হঠাতই ট্রামলাইনের উপর নির্মিয়মান সেতুটি ভেঙে পড়ে৷ যার জন্য একটি লোহার স্তম্ভও রাস্তার উপরে পড়ে যায়৷ বিবেকানন্দ উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়ে একটি মিনিবাসের উপরে৷ উড়ালপুলের ভেঙে পড়া অংশের তলায় আটকে পড়ে বেশ কিছু গাড়ি, লরি৷ বিশাল ধবাংস্তুপের তলায় চাপা পড়ে যান বহু মানুষ৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ চালায় দমকল, সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী৷
গ্যাস কাটার দিয়ে কংক্রিটের চাঁই কেটে আটকে পড়া  মানুষজনকে উদ্ধার করা হয়৷ বেশ কয়েকজন আহতকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে৷ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি উদ্ধার কাজে হাত লাগান স্থানীয় মানুষও৷ ধবংসস্তুপের তলায় চাপা পড়ে বহু মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সাড়ে ১২টা নাগাদ বোমা ফাটার মতো আওয়াজ শুনতে পাই৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি চোখের সামনে আস্ত একটা উড়ালপুল ভেঙে পড়েছে৷ স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার রাতে ঢালাই করা হয়েছিল বিবেকানন্দ উড়ালপুল৷ উড়ালপুলের নীচে অটো স্ট্যান্ড ও ট্যাক্সি স্যান্ড পার্কিং করা ছিল বহু গাড়ি৷ এছাড়াও বেশ কয়েকটি ঠেলা গাড়ি চাপা পড়েছে৷ সেতু ভেঙে পড়ে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন লেগে যায়৷ আগুন ধরে যায় পাশ্ববর্তী বাড়িগুলিতেও৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগুন নেভানোর কাজ করে দমকল৷ ১৪০ টনের ক্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও সেটির তার ছিঁড়ে যাওয়ায় তা ধবংসস্তূপ সরানোর কাজে লাগানো যায়নি৷ এই ঘটনায় গোটা মধ্য কলকাতার যান চলাচল সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে৷ ঘটনার জেরে বিবেকানন্দ রোড, রবীন্দ্র সরণি এবং হাতি বাগান ও রোস্তা এলাকায় ব্যপক যানজট তৈরি হয়৷ ওই এলাকার সমস্ত যানবাহনকে অন্য রাস্তায় ঘুরিয়ে দেওয়া হয়৷
বিবেকানন্দ উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনায় পৌর এবং নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে কাঠ গড়ায় তুললেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী৷ এমনকি, এই দুর্ঘটনার জন্য ফিরহাদ হাকিমকে গ্রেপ্তারের দাবিও তিনি জানালেন৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, বাংলার নগরোন্নয়নমন্ত্রীক্ গ্রেপ্তার করা হোক৷ কারণ তার তত্ত্বাবধানেই  এই ব্রিজ তৈরি হচ্ছিল৷ কেন এই ব্রিজে এমন উদাসীনতা দেখানো হয়েছে, তা আমরা জানতে চাই৷
একই সঙ্গে অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেন, উড়ালপুলটি গঠনের সময় একেবারেই সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি৷ শুধু বালি দিয়েই ঠিকেদাররা এই ব্রিজ গঠন করছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি৷   পাশাপাশি তিনি একথাও বলেন যে এই ব্রিজটি অগে থেকেই দুর্বল ছিল সেটা এলাকার বাসিন্দারা জানতেন৷ এমনকি তারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগও করেছিলেন৷ কিন্তু  তাদের ক থায় কেউ কর্নপাত করেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি৷
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রশ্ণ তুলেন, বাংলায় যে এত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তার জবাব কে দেবে? তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন, এখন ভাষণ দেওয়ার সময় নয়৷ আপনি আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করুন৷ আপনার পুলিশ কেন দুঘন্টা পরে এল তার জবাব আমরা চাই৷
ভোটের মুখে পোস্তায় নির্মিয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় রাজনীতির রঙ লেগে গেল৷ দুর্ঘটনার পরেই বিরোধীদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার৷ এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক অ্যাখ্যা দিয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করলেন বিরোধীরা৷ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, যে খবর শুনছি, তা মারাত্মক৷ এখন সকলে মিলে উদ্ধার -কাজে নাম উচিত৷ তবে এই পতন বোঝাল, সরকারের পতন আসন্ন৷ দিলীপ ঘোষ কার্যত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিকে আঙুল তুলে বলেন, রাজ্য সরকারের কোনও ব্যাপারেই কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই৷ একা একজন সরকার চালালে এমনটাই হয়৷ তদন্ত করে দোষীদের সাজার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন তিনি৷ দুর্ঘটনার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, এই সরকারের আমলে কত কেলেষ্কারি হয়েছে, এটা তার অন্যতম প্রমাণ৷ নেতাদের পয়সার ভাগ দিতে গিয়ে নির্মাণকারী সংস্থারা কোয়ালিটি রক্ষা করতে পারছে না৷ উল্লেখ্য, ২০০৯ থেকে উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হয়৷ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতেও ঢালাই করা হয়েছিল বিবেকানন্দ উড়ালপুল৷
কলকাতার পোস্তায় নির্মীয়মাণ উড়ালপুল দুর্ঘটনায় পূর্বতন বাম সরকারের ঘাড়েই দোষ চাপালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বাম আমলে খুব অল্প টাকার বরাতে শুরু হয়েছিল এই উড়ালপুলটি৷ হায়দরাবাদের একটি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়৷ যা নিয়ে আমরা অভিযোগও করেছিলাম৷ কিন্তু, তার কোনো সুরাহা হয়নি৷ তিনি আরো বলেন, কোনো কাজ শুরু হলে আমরা তা বন্ধ করতে পারি না৷ তাহলে আদালতের প্রশ্ণের মুখে  পড়তে হবে আমাদের৷
একই সঙ্গে আজ দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোকজ্ঞাপনও করেন মুখ্যমন্ত্রী৷  মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েতিনি বলেন এই দুর্ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক৷  আমরা মৃতদের পরিবারের পাশে আছি৷  পাশাপাশি এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্দে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিন নির্বাচনের প্রচারে পশ্চিম মেদিনীপুরে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ দুর্ঘটনার খবর পেয়েই নির্বাচনী সভা বাতিল করে ঘটনাস্থলে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ উদ্ধার কাজে তদারকি করেন তিনি৷ সে সহেগ প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এই ঘটনায় মৃতদেহ পরিবার প্রতি ৫ লাখ টাকা ও আহতদের পরিবার পিছু ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে৷ এ ছাড়াও, অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে৷ মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘোষণা করেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *