নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ মার্চ৷৷ বর্ষা মরশুমে রাজ্যে জ্বালানি সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করবে তা বিধানসভায় খাদ্য ও জনসংভরণমন্ত্রী মানিক দে’র দেওয়া তথ্যে স্পষ্ট৷ অবশ্য এনিয়ে চিন্তিত রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে সমস্যা সমাধানে তদ্বির শুরু করেছে, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি৷ বুধবার বিধানসভায় বিধায়ক বাসুদেব মজুমদার, বিধায়ক পদ্মকুমার দেববর্মা পেট্রোল ও ডিজেলের সংকট সম্পর্কে আনা একটি দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী জানান, বর্ষা মরসুমের কথা মাথায় রেখে রাজ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে পেট্রোপণ্য রাজ্যে আমদানি করার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে৷ তাতে, সময় ও যাতায়াত খরচ উভয়ই কম পড়বে৷ এদিকে, বিধায়ক রীতা কর মজুমদার, গৌরী দাস এবং পরিমল দেবনাথের রাজ্যে রান্নার গ্যাস সংকট সম্পর্কে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট আনা নোটিশের জবাবেও বাংলাদেশকে ব্যবহার করে বিকল্প পথে এলপিজি বাল্ক আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
খাদ্যমন্ত্রী জানান পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া থেকে বাংলাদেশ হয়ে আগরতলার দূরত্ব প্রায় ৬০০ কিলোমিটার৷ অন্যদিকে, হলদিয়া থেকেক গুয়াহাটি হয়ে আগরতলার দূরত্ব সড়কপথে প্রায় ২৩৭৬ কিলোমিটার৷ বাংলাদেশের সড়ক পথ ব্যবহার করে হলদিয়া থেকে পেট্রোল ডিজেল এবং এলপিজির বাল্ক আনা সম্ভব হলে রাজ্যের জনগণ তার সুফল ভোগ করতে পারবেন বলে রাজ্য সরকার আশাবাদী৷
এদিন, তিনি বলেন পেট্রোপণ্যের ক্রমবর্ধমন চাহিদার সঙ্গে জোগানের অপ্রতুলতার বিষয়টি রাজ্য সরকারের তরফে সর্বদাই কেন্দ্রীয় সরকারের অধিগৃহীত সংস্থা ভারতীয় তেল নিগম(আইওসি) ও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় তেল মন্ত্রণালয়ের গোচরে আনা হচ্ছে যাতে চাহিদা অনুযায়ী রাজ্যে প্রয়োজনীয় জোগান বজায় থাকে৷ তদরূপ, চাহিদার তুলনায় রান্নার গ্যাস সরবরাহ কম হওয়ায় সামগ্রিক বিষয়টি প্রতিনিয়ত আইওসি এবং কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রককে জানানো হচ্ছে যাতে সরবরাহের ঘাটতি মেটানো যায়৷ এদিন মন্ত্রী জানান, ৪৪নং জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা এবং তার শীঘ্রই সুরাহা করা বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহনমন্ত্রক ও আসাম সরকারের মুখ্যসচিবের দৃষ্টিগোচরে আনেন এবং অতি জরুরি ভিত্তিতে ত্রিপুরার সঙ্গে সড়ক পথে একমাত্র যোগাযোগ রক্ষাকারী ৪৪ নং জাতীয় সড়কটি সংস্কারের জন্য অনুরোধ জানান৷ রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীও কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহনমন্ত্রীকে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আশু সুরাহা করার জন্য অনুরোধ জানান৷ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রককে রাজ্য মুখ্যসচিব জ্বালানির জোগান স্বাভাবিক রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন৷
এদিন, খাদ্যমন্ত্রী শ্রীদে আরো বলেন, আইওসি কর্তৃপক্ষ ধর্মনগর আইওসি ডিপোতে সীমিত মজুত ক্ষমতার কারণে এক বিজি রেকের অর্ধেক ধর্মনগর ডিপোতে এবং বাকি অর্ধেক রেক রামনগরে (শিলচর) পৌঁছানোর জন্য সংশ্লিষ্ট এনএফ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন৷ বর্তমানে ধর্মনগরস্থিত আইওসির ডিপোর সঙ্গে সংযুক্ত রেল ট্রেকটিকে ব্রডগেজে রূপান্তরের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রেল কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন আছে৷ যাতে করে পূর্বের ন্যায় রেলপথেও রাজ্যে পেট্রোপণ্যের জোগান স্বাভাবিক রাখা হয়৷ গত ১৬ মার্চ খাদ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে আইওসি এবং এনএফ রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এব্যাপারে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ বৈঠকে রাজ্যে পেট্রো পণ্যের জোগান স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ট্যাঙ্ক ট্রাক নিয়োগ করে চাহিদা অনুযায়ী পেট্রোপণ্য রাজ্যে আমদানি করার জন্যও আইওসি কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷
এদিন, তিনি জানান, রাজ্যের সমস্ত এলপিজি গ্যাস বিতরণ কেন্দ্রগুলিতে প্রায় ৩লক্ষ ৭৩ হাজার ভোক্তা আছেন৷ কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি ভোক্তা পিছু প্রতিমাসে ১টি সিলিন্ডার হিসেবে মাসিক প্রায় ৩লক্ষ ৭৩ হাজার সিলিন্ডারের প্রয়োজন৷ কিন্তু বর্তমানে আইওসি গড়ে মাসিক প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার সিলিন্ডার সরবরাহ করছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যের এলপিজি সিলিন্ডার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য দৈনিক গড়ে ৩৫ ট্রাক সিলিন্ডারের প্রয়োজন৷ ফলে, দৈনিক চাহিদা স্বাভাবিক রাখার জন্য সরবরাহের তুলনায় অতিরিক্ত আরো অন্তত দৈনিক ১৫ট্রাক লোড সিলিন্ডার শিলচর থেকে সরবরাহ করার জন্য ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের আধিকারিকদের অনুরোধ করা হয়েছিল৷ কিন্তু আইওসি কর্তৃপক্ষ রাজ্যের আবেদনে সাড়া দেয়নি৷ ফলে, ঐ বৈঠকে রাজ্যে পেট্রোপণ্য এবং রান্নার গ্যাসের জোগান স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ট্রাক নিয়োগ করে চাহিদা মেটানোর জন্য আইওসি কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে৷ বৈঠকে এনএফ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ধর্মনগর তেল ডিপোর সঙ্গে যুক্ত মিটারগেজ রেল লাইনটি জরুরি ভিত্তিতে ব্রডগেজ লাইনে রূপান্তরের প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ তবে, বিকল্প পথে পেট্রো পণ্য এবং এলপিজি বাল্ক আমদানির প্রস্তাবে সাড়া মিললে রাজ্যের চাহিদা স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী৷
2016-03-24