পাহাড় বামেদেরই

পৃথক রাজ্যের দাবী কার্য্যত প্রত্যাখ্যাত করিয়াছে এডিসি ভিলেজের ভোটাররা৷ গণতন্ত্রে সংখ্যাধিক্যের মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়া হইয়া থাকে৷ সেই অর্থে পৃথক রাজ্যের দাবীকে এডিসি ভিলেজের ভোটাররা নাকচই করিয়া দিয়াছেন৷ তবে, ৫৮৭টি ভিলেজের মধ্যে ২৫টি ভিলেজে জয়ী হইয়া দ্বিতীয় আসনের মর্যাদায় ভূষিত হইতে পারিয়াছে আই পি এফ left front copyটি৷ কিন্তু, পৃথক রাজ্যের দাবী যে পাহাড়ের সিংহভাগ মানুষ সমর্থন করে নাই তাহা প্রতিষ্ঠিত করিয়া দিল এই নির্বাচন৷ ২০টি ভিলেজে জয়ের মুকুট পরিয়া তৃতীয় স্থানে দাঁড়াইয়া গিয়াছে অপর উপজাতি ভিত্তিক দল আইএনপিটি৷ এডিসি ভোটে দুই উপজাতি ভিত্তিক দলের এই শোচনীয় হাল হইতে তাহারা যদি শিক্ষা নিতে না পারেন আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বেহাল হইবারই সম্ভাবনা থাকিয়া যাইতেছে৷ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রদেশ নেতৃত্বে নতুন অভিষেক, বিস্তর অর্থ ব্যয় ইত্যাদি সত্বেও এই দলের কপালে জুটিয়াছে মাত্র ৪টি ভিলেজ৷ কংগ্রেস কার্য্যত বিজেপির চাইতে উপরের স্থানে দাঁড়াইয়া গিয়াছে৷ পাইয়াছে ৯টি ভিলেজ৷ এবারের ভিলেজ কমিটি নির্বাচনে ৫৮৭টি ভিলেজের মধ্যে ৫২০ টি ভিলেজ দখলে রাখিয়া বামফ্রন্ট বুঝাইয়া দিয়াছে আগামীদিনে  রাজ্যের অন্য কোনও দলের তেমন দাঁত ফুটাইবার সুযোগ নাই৷ বিজেপি ত্রিপুরা প্রদেশের নতুন সভাপতির রাজকীয় চাল চলন যে, সাধারণ মানুষকে কাছে টানিতে পারে না তাহাই প্রমাণ করিয়া দিতেছে৷ সিপিএম কংগ্রেসের জোট নিয়া যে জটিলতা ও রাজনৈতিক নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হইয়াছে সেখানে ত্রিপুরায় বিজেপির রাজনৈতিক উত্থানের সুযোগ ছিল৷ কিন্তু নতুন নেতৃত্ব, দলের হাইকমান্ডের অবাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী সমস্ত আশার গুঁড়ে বালিই ঢালিয়া দিল৷
এডিসির ভিলেজ কমিটির নির্বাচনে ব্যাপাক সাফল্য বামেদের প্রতি উপজাতিদের সমর্থনের ঢল প্রমাণ করিয়া দিল অন্য কোনও দলই সেখানে টক্কর দিবার মতো পরিস্থিতিতে নাই৷ একথা অনেক বেশী সত্যি যে, মাটির সঙ্গে যোগ না রাখিলে, সংগঠন শক্তিশালী করিতে না পারিলে ঠান্ডা ঘরে বসিয়া সুখের রাজনীতির ছড়ি যাঁহারা চালাইতেছেন তাহাদেরও এই নির্বাচন মোক্ষম জবাব দিয়াছে৷ এই নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ ছিল এক, পৃথক রাজ্যের দাবীর প্রতি কত শতাংশ উপজাতিদের সমর্থন আছে৷ দুই, পাহাড়ে কোন্ দলের কতখানি পায়ের তলার মাটি রহিয়াছে৷ দেশের বর্তমান চালচিত্রে অন্যান্য রাজ্যে বামেরা কিছুটা বেকায়দায় থাকিলেও ত্রিপুরায় যে তাহারা প্রবল বিক্রমেই বিড়াজিত তাহাই এই ভোট ফল প্রমাণ করিয়া দিল৷ প্রমাণ করিয়া দিল ত্রিপুরা বামেদের অপ্রতিরোধ্য ঘাঁটি৷ সারা দেশের সামনে ত্রিপুরা যে নজীর রাখিয়াছে, যেভাবে বাম রাজনীতিতে রক্ত সঞ্চালন করিয়াছে তাহার তুলনা নাই৷ এই প্রশ্ণ আজ উঠিয়া আসিয়াছে যে, কোন্ যাদুমন্ত্র বলে ত্রিপুরায় সিপিএম দিনের পর দিন প্রবল প্রতাপে অগ্রসর হইতেছে৷ না, এখানে কোনও যাদুমন্ত্র নাই৷ ত্রিপুরায় ভোটে অন্যান্য রাজ্যের মত টাকার খেলা নাই৷ এখানে মানুষের মন জয় করিয়া, রাজনৈতিক সমস্ত বিষয়কে বিশ্লেষণের মাধ্যমে চুলচেড়া বিচারে যাহারা উঠিয়া আসিবে তাহাকেই প্রার্থী করা হইবে৷ অন্তত সিপিএম সেই পথেরই অনুসারী৷ রাজ্যের অন্য সব দল তো অনেকখানিই সুখের পায়রার মতো৷ বা বলা যায় পরিযায়ী পাখীর মতো৷ শীত আসিলেই যেমন সুদুর সাইবেরিয়া হইতে পাখী আসিয়া হাজির হয়  ত্রিপুরায় তেমন এই ত্রিপুরার পাখীরাও অন্য রাজ্যে ছুটিয়া যায়৷ এই যে সময়ের বিবর্তন তাহার সঙ্গে হাত মিলাইয়া চলিতে না পাড়িলে অনিবার্য্য বিপদ গ্রাস করিবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *