দেশে শান্তি সম্প্রীতি সুস্থিতি সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে কার্যকরি ভূমিকা নিতে হবে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ ফেব্রুয়ারি৷৷ দেশে শান্তি, সম্প্রীতি ও সুস্থিতি বজায় রাখার পাশাপাশি বিশ্ব শান্তির জন্য লায়ন্স ক্লাবকে আগামী দিনেও কার্যকরি ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে৷ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আজ দি ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অফ লায়ন্স ক্লাবসের ৩৭ তম বার্ষিক জেলা সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সংগঠনের সদস্যদের প্রতি এই আহ্বান রাখেন৷

DSC_0069রাজ্যে এই প্রথম লায়ন্স ক্লাবের জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ উত্তর-পূর্বঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রতিধিরা এই জেলা নেপাল ও পূর্বোত্তর ভারতের সাংবিধানিক এলাকার নেতৃত্ব নাজমূল হক সম্মলনে যোগ দিয়েছে৷ সম্মেলন মঞ্চে আসামের দু’জন ছাত্রী, মণিপুরের দু’জন ছাত্রী ও ত্রিপুরার এক জন দুঃস্থ ছাত্রীকে লায়ন্স ক্লাবের পক্ষ থেকে কুড়ি হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা করা হয়৷ এছাড়া আন্তর্জাতিক স্তরে বিশ্ব শান্তির জন্য আয়োজিত পোষ্টার প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার প্রাপ্ত মণিপুরের ছাত্রী য়ুমনাম টন্ডোনবি ডেনির হাতে আজ পাঁচ হাজার টাকার চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ উল্লেখ্য, ডেনি এই পুরষ্কার বাবদ মোট পাঁচশ ইউ এস ডলার পাবে৷ পঁয়ষট্টিটি দেশের ৪ লক্ষের উপর প্রতিযোগি পোষ্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়৷

প্রধান অতিতির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আগরতলায় এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য উদ্যোক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, লায়ন্স ক্লাব একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন৷ সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ মিলিত হয়ে এই সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক দায়িত্ব পালন করছেন৷ এটা অত্যন্ত ইতিবাচক৷ কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সব মানুষের সমস্যা সমাধান করা যাবেনা যদি না রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করে৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ সঠিক দিশায় চলছেনা৷ দেশের স্বাধীনতার ৬৯ বছর পরেও ৭০ শতাংশ  মানুষ দৈনিক ২০ টাকা ব্যয় করতে পারেননা৷ ৩৮ কোটি মানুষ নিরক্ষর, ২০ কোটি যুবকের কর্মসংস্থান নেই, পাঁচ বছরের নীচে ৫০ শতাংশ শিশু অপুষ্টির কারণে ওজন কম, ৫০ শতাংশের বেশি মা ও বোন রক্তাল্পতায় ভুগছেন৷ ফলে কিভাবে বলবো আমরা এগিয়ে গেছি৷ এই সময়ে দেশের ক্ষুদ্র একটা অংশের মানুষেরই উন্নয়ন হয়েছে৷ উপরতলার ও নীচুরতলার মধ্যে বৈষম্য আরও বেড়েছে৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারই এই সব সমস্যার সমাধান করতে পারে৷ এরজন্য ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে৷ বামপন্থীরা এর জন্য সংগ্রাম করছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আরও বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশের একটি রেপলিকাই নয়, এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদ৷ কিন্তু স্বাধীনোত্তর ভারতে এই অঞ্চলের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়েছে৷ এই অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অপ্রতুল, কৃষিতে অনুন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থা পিছিয়ে৷ পরিকাঠামো উন্নত করতে না পারলে স্বভাবতই দেশের উন্নত রাজ্যগুলির সমপর্যায়ে যেতে পারবে না এই অঞ্চল৷ এর সুবাদে একটি অংশ এই অঞ্চলকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সচেষ্টা৷ তাই ঐক্য ও সংহতির জন্য আমাদের জোর দিতে হবে৷ শান্তি, সম্প্রীতি ও সুস্থিতি সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে কার্যকরি ভূমিকা নিতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ণ রাখেন যদি খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় তবে কেন এ অঞ্চলের যুবকরা অস্ত্র হাতে তুলে নেবেন? তিনি বলেন, এখন দেশে স্বাধীন মত প্রকাশের উপর আক্রমণ চলছে৷ বলা হচ্ছে ভারত হল হিন্দুরাষ্ট্র৷ এ তো দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার বিশ্ববিদ্যালয় এবং জে এন ইউ’র সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ করেন৷ তিনি দেশের প্রবহমান এই সমস্ত ঘটনাবলীর বিরুদ্ধে সমাজের মননশীল অংশ হিসেবে লায়ন্স ক্লাবের সদস্যদেরও আওয়াজ তুলতে আহ্বান জানান৷

অনুষ্ঠানে লায়ন্স ক্লাবের প্রাক্তণ আন্তর্জাতিক অধিকর্তা বলেন, ২০১৭তে এই সংগঠনের শতবর্ষ উদযাপন হবে৷ তিনি সাম্প্রতিক কয়েক বছয়ে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন লায়ন্স ক্লাবের কর্মসূচি তুলে ধরেন পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ সমাজের দুঃস্থ মানুষের জন্য ক্লাবের অবদান ও আগামী কর্মসূচির বিষয়ে আলোকপাক করেন৷ এছাড়া বক্তব্য রাখেন লায়ন্স ক্লাবের ডিষ্ট্রিক্ট গভর্ণর ডাঃ এস কে ধর৷ স্বাগত ভাষণ দেন সম্মেলনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অমিতাভ দেবরায়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *