BRAKING NEWS

আগ্রাসনের কবলে বই

booksআধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগে শিক্ষার নানা পথ উন্মুক্ত হইয়াছে৷ পুস্তকের পাশাপাশি ডটকমের যুগে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারিত হইয়াছে৷ এই সুযোগকে কাজে লাগাইয়া বহু মানুষ নানাভাবে শিক্ষিত হইতে শুরু করিয়াছেন৷ ইহা নিঃসন্দেহে যে কোন দেশ বা জাতির পক্ষে কল্যাণকর৷ বিজ্ঞানের আশীর্বাদকে কাজে লাগালে মানবসভ্যতাকে  আরো অগ্রসর করিবার পথ প্রশস্ত করিবে৷ কিন্তু বিজ্ঞানের অভিশাপকে আকড়ে ধরিবার চেষ্টা করিলে বিপজ্জনক প্রবণতা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকেও নিঃসন্দেহে গ্রাস করিবে৷ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ইন্টারনেটের সুবাদে অনেকেই ছাপা অক্ষরের বই পড়ার প্রবণতা ছেড়ে ইন্টারনেটে বিষয়ভিত্তিক পড়াশুনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন৷ তাহাতে কারোর কোন আপত্তি থাকার কথা নয়৷ মূল কথা হইল যেভাবে ছাপা অক্ষরের বইয়ের প্রতি অবজ্ঞা শুরু হইয়াছে তাহাতে ভবিষ্যতে ছাপা অক্ষরের বইয়ের কদর আরো কমিয়ে যাইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে৷ এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হইলে শিক্ষার গুণগত মান কতটা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হইবে সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করিবার সময়ও উপস্থিত হইয়াছে৷ প্রাচীন ভারতের অধ্যায়নের স্থান ছিল বনের আশ্রম৷ শ্রুতিই ছিল পঠনপাঠনের প্রধান মাধ্যম৷ পরবর্তী যুগে পড়ুয়াদের ঠাঁই হয় গুরুগৃহ৷ তাহাদের হাতে থাকিত খাগের কলম৷ এরপর হইতে সামাজিক পরিকাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন গঠিতে শুরু করে৷ দীর্ঘকাল ধরিয়ায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার অবলম্বন হইয়া উঠে বই খাতা কলম৷ এমনকি আধুনিক যুগে এই দেশের শিক্ষায়তনের অভ্যন্তরে নির্দিষ্ট ক্লাস পর্যন্ত মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ হইয়াছে৷ অবশ্য পাঠের সাহায্যকারী হিসেবে যুক্ত হইয়াছে ল্যাপটপ৷ এসবের মধ্য দিয়া ছাত্ররা শিক্ষার স্বাদ প্রকৃতপক্ষে কতখানি লাভ করিতে পারিবে সে প্রশ্ণ কিন্তু থাকিয়া যাইতেছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা করিলে দেখা যাইবে  ভারতবর্ষ শিক্ষাক্ষেত্রে নানাদিক দিয়াই খ্যাতি অর্জন করিয়াছে৷ ভারতবর্ষের বহু ছাত্র গবেষণায় উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সুবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হইয়াছেন৷ তাহাতে দেশ ও দেশমাতার গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি  প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে৷ আমাদের রাজ্য ত্রিপুরার শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাস কারোর অজানা নয়৷  জনশিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়া এই রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা সুদূর প্রসারিত হইয়াছে৷ এই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দশরথ দেব, সুধন্য দেববর্মা সহ অন্যান্যদের হাত ধরিয়া রাজ্যের উপজাতিদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের যে সূত্রপাত ঘটিয়াছিল তাহা আজ সর্বত্র প্রশংসার দাবি রাখে৷ এই রাজ্যের আনাচে কানাচে গড়িয়া উঠা শিক্ষালয়গুলো তারই প্রমাণ বহন করিয়া চলিয়াছে৷ শুধু তাই নয়, রাজ্যের শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়াছে৷ এই রাজ্যে বইমেলার প্রেক্ষাপটের দিকে ফিরিয়া তাকাইলে দেখা যায় এবছর বইমেলা ৩৪ বছর অতিক্রম করিয়াছে৷ আগরতলা বইমেলা রীতিমত ঐতিহ্য বহন করিয়া চলিয়াছে৷ আগরতলা বইমেলার বিস্তৃতি প্রমাণ করিয়াছে এই রাজ্যে বইয়ের কদর সত্যিকার অর্থেই কমেনি৷ প্রতিবছর নতুন নতুন বই প্রকাশিত হইতেছে৷ লেখকের সংখ্যাও  বাড়িতেছে৷ ডটকমের প্রতিযোগিতার যুগে বইকে টিকাইয়া রাখিবার জন্য বইমেলা নিঃসন্দেহে শিক্ষা আন্দোলনের এক বড় ধরনের প্ল্যাটফর্মও বটে৷ আগরতলা বইমেলা দীর্ঘ  ৩৪ বছর ধরিয়া এরই সাক্ষ্য বহন করিয়া আসিতেছে৷ এই ধরনের বইমেলার মধ্য দিয়া বইয়ের সাথে পরিচিতি ঘটাইবার জন্য যে উদ্যোগ চলিয়াছে তাহাকে ধরিয়া রাখিতে হইবে৷ অন্যথায় ডটকমের যুগে ছাপার অক্ষরের বই যেমন হারাইয়া যাইবে ঠিক তেমনি বইয়ের কদর ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আরো ম্লান হইয়া যাইবে৷ স্বাভাবিক কারণেই প্রতিযোগিতার যুগে বইকে আকর্ষিত করিয়া তুলিবার জন্য একদিকে যেমন লেখক শিল্পীদের আরো মননশীল মনোভাব নিয়া আগাইয়া আসিতে হইবে ঠিক তেমনই এই শিল্পকে বাঁচাইয়া রাখিবার জন্য সরকারকেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করিতে হইবে৷ সমাজের সার্বিক স্বার্থেই এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় হইয়া উঠিয়াছে৷ শিক্ষাব্যবস্থায় ল্যাপটপ, ইন্টারনেট ইত্যাদির সংযোগ নিঃসন্দেহে সময় উপযোগী৷ কিন্তু আদি অনন্তকাল হইতে চলিয়া আসা ছাপার অক্ষরের বই যাতে অবলুপ্ত হইয়া না যায় সে দিকটার দিকেও সুনজর রাখিতে হইবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *