গুয়াহাটি, ১৫ ফেব্রুয়ারি, (হি.স.) : কংগ্রেসের দেবজি থাওসেনকে উত্তর কাছাড় স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য (সিইএম) হিসেবে নির্বাচিত করার পর প্রায় চার মাসের মাসের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান হবে বলে মনে করা হয়েছিল| কিন্তু রাজভবন থেকে পাঠানো এক চিঠিতে নস্যা করে দেওয়া হয়েছে দেবজিতের পরিষদকে| রাজ্যের পাহাড়ি জেলা ডিমা হাসাওয়ের উত্তর কাছাড় স্বশাসিত পরিষদের অধ্যক্ষ নামরৌথাং মার দেবজি থাওসেনকে নতুন সিইএম হিসেবে নির্বাচিত করলেও রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য এই নির্বাচনকে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়ে আগামীকাল ১৬ ফেব্রুয়ারিতে বিধি মেনে নতুন সিইএম নির্বাচন করতে সময় বেঁধে দিয়েছেন|
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন উত্তর কাছাড় স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য নিরঞ্জন হোজাইয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন কংগ্রেসের সদস্যরা| কিন্তু আস্থা ভোটের আগেই দিনই নাটকীয়ভাবে পদত্যাগ করে বসেন নিরঞ্জন| এই পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষ নামরৌথাং মারের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল পরিষদের বিশেষ অধিবেশন| ওই অধিবেশনে নিরঞ্জন হোজাইয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা| অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হলে ১২ ফেব্রুয়ারিতে নতুন সিইএম পদের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই পদের জন্য ভোটের দিন ঘোষণা করেছিলেন অধ্যক্ষ নামরৌথাং মার| সেই অনুযায়ী কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে দেবজি থাওসেন তাঁর মনোনয়ন জমা দেন এবং পরের দিন ১৩ তারিখ তাঁকে নতুন সিইএম হিসেবে নির্বাচিত করে দেন অধ্যক্ষ| পরিষদে গৃহীত এই সিদ্ধান্তে অনুমোদন চেয়ে রাজ্যাপালের কাছে একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছিলেন অধ্যক্ষ মার| কিন্তু ওই নির্বাচনকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে ভারতীয় সংবিধানের ষষ্ঠ তপশিলির ২০, ২১ () (২)-এর অধীনে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ফের অধিবেশন অনুষ্ঠিত করতে এক চিঠিতে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল আচার্য|
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন| এতে তখনকার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন পরিষদ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয় এবং নিরঞ্জন হোজাইয়ের নেতৃত্বে পরিষদ দখল করে বিজেপি| কিন্তু প্রায় দেড় মাস যেতে না-যেতেই সিইএম নিরঞ্জন হোজাইয়ের বিরুদ্ধে একনায়কত্ববাদের অভিযোগ তুলেন খোদ বিজেপি সদস্যরা| ইত্যবসরে তিন মাস কেটে গেছে| আচমকা নিরঞ্জন হোজাইয়ের এককালের সতীর্থ মিহির গারলোসা-সহ দশজন সদস্য বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন| ফলে নিরঞ্জন হোজাই নেতৃত্বাধীন বিজেপি পরিচালিত পরিষদ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে পড়ে| তখনই পরিষদের প্রাক্তন কংগ্রেসি সিইএম দেবজি থাওসেন-সহ ১৭ জন সদস্য নিরঞ্জন হোজাইয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা ব্যক্ত করে শীঘ্র পরিষদে অধিবেশনের আবেদন জানিয়ে রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠান| এই আবেদনের ভিত্তিতে ১১ ফেব্রুয়ারি পরিষদের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত করতে নির্দেশ দেন| কিন্তু অধিবেশনে আস্থা ভোটের মুখামুখি না-হয়ে পদত্যাগ করে বসেন নিরঞ্জন হোজাই|
এদিকে সিইএম নির্বাচনের দিন ১৬ তারিখকে ঠিক করে দিলেও রাজনৈতিক জাঁতাকলে পড়ে ঝুলন্ত এই পরিষদ আসন্ন রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে আগে কার্যক্ষম হবে কি না তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে| কেননা, জানা গেছে নির্দিষ্ট দিন মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এদিন থেকে বেশ কিছুদিনের জন্য ছুটিতে অসমের বাইরে চলে যাচ্ছেন রাজ্যপাল| এই পরিস্থিতিতে পরিষদের অধিবেশনে সিইএম নির্বাচিত হলেও রাজ্যপালের অনুমোদন ছাড়া কার্যকরী কমিটি গঠন করা যাবে না| ফলে খুব শীঘ্রই বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তর কাছাড় স্বশাসিত পরিষদের রাজনৈতিক সংকট দূর হবে বলে মনে করছে না ওয়াকিবহাল মহল|