রাজনীতিতে শেষ কথা বলিয়া কিছু নাই ইহাই আবার প্রমাণ করিয়া দিল খোয়াই’র তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া উদ্ভুত পরিস্থিতি৷ সারা রাজ্যে তৃণমূল যখন ধরাশায়ী৷ বাতি জ্বালাইবার লোকও খঁুজিয়া পাওয়া কষ্ট তখন খোয়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেস জাগিয়াছে কিভাবে? এই জেলার নেতারা কি পার্টির রণকৌশল সম্পর্কে অবহিত নহেন? পশ্চিমবঙ্গ নিয়া তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে ব্যতিব্যস্ত, নির্বাচনের ঢাকে যেখানে কাঠি পড়িয়া গিয়াছে, সেখানে ত্রিপুরা নিয়া মাথা ঘামাইবার সময় কোথায়? আর সম্ভবত এই জন্যই, ত্রিপুরায় পার্টিকে ঘুম পাড়াইয়া রাখা হইয়াছে৷ সময় ও সুযোগ মতো জাগাইয়া তোলা হইবে৷ এই অবস্থায়, খোয়াইয়ে তৃণমূল জাগিয়া থাকিলে এবং মার খাইলে দলের হাইকমান্ড বা রাজ্য নেতৃত্ব সেখানে সরব বা প্রতিবাদী হইবে কেন? রাজ্য জুড়িয়া তৃণমূলের সংগঠন বিস্তারে ঝাপাইয়া পড়িলে যে পরিণতি হইবে তাহা সামাল দেওয়া সহজ হইবে না বুঝিয়াই সম্ভবত রাজ্যে দলকে ঘুম পাড়াইয়া রাখা হইয়াছে৷ ইহাও একটি কৌশল৷ কারণ, সংগঠন বিস্তার করিতে গেলে হামলা ও আক্রমণের ঘটনা ঘটিবে৷ তাহা রুখিবার ক্ষমতা যদি না থাকে তাহা হইলে কর্মীদের বেঘোরে প্রাণ দিতে হইবে৷ পশ্চিমবঙ্গের বদলা এই রাজ্যেও উসুল করিতে পারে৷ দল পরিচালনায় নেতৃত্বকে অনেক কিছু ভাবিয়া চিন্তিয়া কাজ করিতে হইবে৷ তাহা না হইলে বিপর্য্যয় অনিবার্য্য৷ হয়তো সেই লক্ষ্যেই দলকে ত্রিপুরায় ঘুম পাড়াইয়া রাখিয়াছেন তৃণমূল নেত্রী৷ অবশ্য কোনও কোনও মহলের মতে, রাজ্যে দলে গোষ্ঠী কোন্দলে নেত্রী তিতিবিরক্ত হইয়া আপাত ত্রিপুরায় রণে ভঙ্গ দিয়াছেন৷ গোষ্ঠী কোন্দলের হাত হইতে তো কোনও দল মুক্ত নহে৷ এই কোন্দল মোকাবিলা করিয়াই দল করিতে হয়, তাহা কে না জানে? পশ্চিমবঙ্গে প্রতিনিয়তই তো তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলে রক্তাক্ত ঘটনা ঘটিয়া চলিতেছে৷ ত্রিপুরায় অবশ্য সেই পরিস্থিতি নাই৷ কিন্তু সিপিএমের মার হইতে দলকে রক্ষা করা যে কঠিন কাজ তাহা খোয়াই’র ঘটনা আরও স্পষ্ট করিয়া দিল৷ ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাজ্যে হাটি হাটি পা অবস্থাতে থাকা সত্বেও কোনও কোনও জায়গায় কর্মীরা আক্রান্ত হইবার অভিযোগ আসিতেছে৷ এইসব ঘটনা প্রমাণ করিয়া দিতেছে যে, রাজনীতি এমনই যে, শক্তিশালী দল দূর্বল দলগুলিকে মাথা তুলিতে দিবে না৷ অঙ্কুরেই খতম করিয়া দিবার লক্ষ্যে নৃশংস ভূমিকায় কোনও কোনও রাজনৈতিক দল মাতিয়া উঠে তাহাও তো অস্বীকার করা যাইবে না৷
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে হঠাইতে যে কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ট নেতারা সিপিএমের সঙ্গে নির্বাচনী আতাঁতের পক্ষে সওয়াল করিতেছেন, সেখানে ত্রিপুরায় কংগ্রেসের ভিন্নরূপ৷ ত্রিপুরায় আক্রান্ত তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াইয়া কংগ্রেসের সুদীপ রায় বর্মন সিপিএমকে তুলোধুনো করিয়াছেন৷ বলিয়াছেন ‘সিপিএমকে উৎখাত করিতে সব বিরোধী দলকে নিয়া এক জোট হইতে হইবে৷ সেই প্রক্রিয়াই চলিতেছে৷’ খোয়াই’র এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল যে, রাজ্যে বিরোধী রাজনীতিতেও নতুন পট পরিবর্তন খুব সহসাই হইতে পারে৷ পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাদের সংখ্যা গরিষ্ট অংশ যেভাবে সিপিএমের সঙ্গে জোটের জন্য সওয়াল করিয়াছে তাহাতেই ত্রিপুরায় প্রাচীন এই দলের চরমতম সর্বনাশ হইয়া গিয়াছে৷ সিপিএম- কংগ্রেস জোট হউক বা না হউক কংগ্রেসের ক্ষতি যা হইবার হইয়া গিয়াছে৷ এই ক্ষতি আর সহজে পূরণ হইবার নহে৷ সুদীপ বর্মনরা সেই আঁচ পাইয়া গিয়াছেন৷ কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা ইতিমধ্যেই বিজেপি দলে যোগ দিয়াছেন৷ কিন্তু সেখানেও তাহারা খুব বেশী সুবিধা করিতে পারিবেন বলিয়া তো মনে হয় না৷ কারণ, সেখানেও কাজের মূল্যায়ন হয় না৷ দিল্লীর নেতারা যাহার উপর কৃপা বর্ষণ করেন তাঁহার ভাগ্যে প্রদেশের মসনবদারী জুটিয়া যায়৷ বিভিন্ন স্থানে বিজেপি কর্মীরাও আক্রান্ত হইতেছেন৷ তাঁহারা অবশ্য বিরোধী দলনেতাকে ডাকিয়া নিতেছেন না৷ ডাকিলে বিজেপি’র আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াইবেন কিনা সেই প্রশ্ণ থাকিয়া যায়৷ কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের যতখানি তাহারা চাহিয়া অনেক বেশী দূরত্ব বিজেপি’র৷ তেমনি ত্রিপুরায় কংগ্রেস সিপিএম জোট যেন চরম অবিশ্বাস্য ব্যাপার৷ বরং ত্রিপুরায় তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট অনেক বেশী গ্রহণযোগ্যতা পাইতে পারে৷ এই রাজনৈতিক সমীকরণ যেখানে সেখানে খোয়াইতে আক্রান্ত তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াইয়া পশ্চিমবঙ্গে খুব কৌশলী বার্তা দিতে চাহিলেন সুদীপ বর্মন৷ একথা ঠিক যে, বর্তমানে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ আসিয়া দাঁড়াইবার সম্ভাবনা বাড়িতেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের পরেই ত্রিপুরার রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণের লক্ষ্যেই এখন যে পদচারণা শুরু হইয়াছে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷ খোয়াইয়ে অসহায় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কর্মীরা বুঝিয়াছেন রাজনীতি কতবেশী নির্মম হইতে পারে৷ খোয়াই’র শিক্ষা সারা রাজ্যেই নতুন বার্তা দিবে৷ পশ্চিমবঙ্গে নতুন প্রশ্ণের মুখে ঠেলিয়া দিতে পারে কংগ্রেস সিপিএম এই জোট প্রসঙ্গ৷
2016-02-13
