চিকিৎসায় অশুভ আঁতাত

Healthমেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকিলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চলিয়াছে, যাহা সাধারণ মানুষ বাহবা না দিয়া পারিবে না৷ সারা দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলিতেছে, সততার সংকট গ্রাস করিতেছে, সেখানে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই) যদি উদ্যোগী হয় তাহা হইলে হয়তো রোগীদের উপর যে নির্মম জুলুম চলিতেছে তাহার কিছুটা নিরসন হইতে পারে৷ দেশের চিকিৎসকরা এখন হইতে পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের কোনও উপহার নিতে পারিবেন না৷ এম সি আই সূত্র উদ্বৃত করিয়া প্রকাশিত সংবাদে জানা গিয়াছে, এখন হইতে কোনও চিকিৎসক পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের উপহার গ্রহণ করিলেই এম সি আই’র সেন্সর পাইতে পারেন৷ আর এক লক্ষ বা তাহার বেশী মূল্যের উপহার বা সুবিধা নিলে এক বছরের জন্য চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হইয়া যাইতে পারে৷ এই বিষয়ে একটি মেডিক্যাল গাইড লাইন তৈরী করিতেছে এমসিআই৷
দেশে গরীব অংশের মানুষের জীবনে গভীরতর চিকিৎসা সংকট নামিয়া আসিয়াছে৷ ওষুধের দাম হু হু করিয়া বাড়িয়াই চলিতেছে৷ ওষুধের উৎপাদন খরচের বাহিরে কয়েকগুন টাকা ঢালিতে হয় ওষুধ কোম্পানীগুলিকে৷ এক, ডাক্তারের উঁচু হারে উপহার, খুচরা দোকানীদের মোটা কমিশন ও মার্কেটিং এর অন্যান্য ব্যয়ের কারণে ওষুধের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া৷ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে৷ চিকিৎসকদের টাকা ও উপহার দিয়া কিনিয়া নেয় ওষুধ কোম্পানীগুলি৷ এই ত্রিপুরা রাজ্যেও এমন অনেক চিকিৎসক আছেন যাহারা ওষুধ কোম্পানীর টাকায় বিস্তর অর্থ বিত্তের মালিক বনিয়াছেন৷ একথা আজ সকলের কাছেই স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে যে, ওষুধ কোম্পানী এবং একাংশ চিকিৎসকের অশুভ আঁতাতের কারণে ওষুধের দাম বাড়িয়াই চলিতেছে৷ বেশ কিছুদিন আগে এমসিআই মহারাষ্ট্রের ৩২৬ জন চিকিৎসককে বিদেশী ওষুধ প্রস্তুতকারকদের নিকট হইতে বিপুল পরিমান উপঢৌকন নেওয়ায় তলব করিয়াছিল এমসিআই৷ এইসব চিকিৎসকরা দামী গয়না, ফ্ল্যাট বাড়ী নিয়াছিল৷ এই পরিস্থিতিতেই এম সি আই চিকিৎসকদের এই দুর্নীতি ও অশুভ কাজ রোধে পায়ে বেড়ি পরানোর উদ্যোগ নিয়াছে৷
ভারতের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিদেশী ওষুধের চাহিদা রহিয়াছে৷ কারণ এইসব ওষুধ রোগ নিরাময়ে সাফল্য আনে৷ আর এই সুযোগকে ব্যবহার করিয়া বিদেশী ওষুধ কোম্পানীগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মানুষর গলা কাটে৷ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও আসিয়াছে নতুন দিগন্ত৷ কিন্তু লোভী চিকিৎসক ও ওষুধ প্রস্তুতকারকদের কালো হাত রোগ নিরাময়ের সুযোগকে নিজেদের পঁুর্জি বাড়াইবার কাজে ব্যবহার করিতেছে৷ আজ আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি ও অন্যান্য ওষুধও ক্রমেই জনপ্রিয় হইতেছে৷ চিকিৎসা ক্ষেত্রে বহুমুখী সফল উদ্যোগই পারে অশুভ আঁতাত রোধ করিতে৷ সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই যে অশুভ কান্ড চলিতেছে সেগুলি রোধে কি কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারিবেন? কারণ, বহুজাতিক কোম্পানীগুলির সঙ্গে এইসব সরকারগুলির টিকি বাধা থাকে৷ আজ চিকিৎসা ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে ঠিকই, কিন্তু যদি এগুলি সাধারণের কাছে পৌঁছানো না যয়, যথেষ্ট প্রচারে নেওয়া না যায় তাহা হইলে সাফল্য আসিবে কি করিয়া? সাধারণ গরীব অংশের মানুষের কাছে চিকিৎসার সুযোগ পৌঁছাইতে বিভিন্ন উদ্যোগ তখনই সাফল্য পাইতে পারে যদি তাহা আন্তরিক হয়৷ লোক দেখানো উদ্যোগে সরকারী অর্থই ব্যয় হয়৷ সাধারণের প্রয়োজনে আসে না৷ কয়েকদিন আগে আগরতলায় আরোগ্যমেলার নামে কেন্দ্রীয় সরকারের টাকার খেলা হইয়াছে৷ মানুষের জন্য সামান্যতম সাফল্যও আসে নাই৷ এইভাবে সব ভাল ভাল উদ্যোগ মাঠে মার খাইতেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *