এক চতুর্থাংশ আসনে বিনা ভোটেই ভিলেজ কমিটি নির্বাচনে জিতিবার পথে বামফ্রন্ট৷ পাওয়া পরিসংখ্যানে দেখা গিয়াছে ভিলেজ কমিটির সব কয়টি আসনে একমাত্র শাসক বামফ্রন্ট প্রার্থী দিতে পারিয়াছে৷ মোট ভিলেজ কমিটির সংখ্যা ৫৮৭টি৷ নির্বাচনী ক্ষেত্র ২৬৩৪টি৷ আসন সংখ্যা ৪৫৯৭টি৷ যে দল রাজ্যভাগের দাবী তুলিয়া পাহাড় কাঁপাইয়াছে, রাজধানী শহরে গরম মিছিল করিয়া শক্তি পরীক্ষা দিয়াছে সেই আইপিএফটি দলের হাকডাকই যে সার তাহা আবার প্রমাণ হইয়া গিয়াছে৷ নব্য এই দল ৫০ শতাংশ আসনেও প্রার্থী দিতে পারে নাই৷ এই দল প্রার্থী দিয়াছে ৪১৫৪ শতাংশ৷ আরও শোচনীয় অবস্থা অপর উপজাতি ভিত্তিক দল আইএনপিটির৷ এই দল প্রার্থী দিয়াছে মাত্র ৯২৪জন৷ শতাংশের হিসাবে ২০১৷ সব চাইতে শোচনীয় অবস্থা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের৷ প্রার্থী দিয়াছে মাত্র ৬৬৪ জন৷ শতাংশের হিসাবে ১৪৪৪৷ অপর জাতীয় দল বিজেপি৷ যে দল ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য দখলের স্বপ্ণ দেখিতেছে৷ সেই দল সভাপতি বদল করিয়াও সাংগঠনিক ক্ষেত্রে যে পিছাইয়া পড়িয়াছে তাহাও প্রমাণ হইয়া গিয়াছে৷ ভিলেজ ভোটে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন এই দল প্রার্থী দিয়াছে মাত্র ১০৪০জন৷ ইহা মোট আসনের ২০৬ শতাংশ৷ বিভিন্ন কারনে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের পর দেখা যাইবে বিরোধী দলগুলির প্রার্থীর সংখ্যা আরও কমিয়া গিয়াছে৷
কথায় আছে ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’৷ হম্বিতম্বি করিয়া নিজেদের ফাঁকা অস্তিত্বই জানান দেওয়া যায়, বাস্তবে সাফল্যের পথ মিলে না৷ ত্রিপুরায় প্রাচীন জাতীয় দল কংগ্রেস তো পাহাড়ে মুছিয়াই গিয়াছে৷ আসলে, এই দলের হাইকমান্ডের নীতিই দলকে অস্তিত্বের সংকটে ঠেলিয়া দিয়াছে৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের হাইকমান্ডের বালখিল্য রাজনীতিই সর্বনাশের বীজ পঁুতিয়া দিয়াছে৷ রাজ্যে প্রাচীন এই দলে একজন গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ নেতৃত্বের হাতে তুলিয়া দিতে না পারার ব্যর্থতা আরও বেশী সর্বনাশের সূচনা করিয়াছে৷ ধান্দাবাজদের হাতে রাজনৈতিক দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে না৷ নেতারা নিজেদের ব্যক্তিগত শ্রীবৃদ্ধি ছাড়া দলের শ্রীবৃদ্ধির ন্যুনতম ভাবনাও নাই৷ জনমনে তাঁহাদের বিশ্বাসযোগ্যতা তো শূন্যের কোটায়৷ দলের কর্মী সমর্থকরা এখন সরিয়া দাঁড়াইয়াছেন৷ নেতারা নিরাপদ দূরত্বে থাকিয়া কর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলিয়া দেন৷ এই কংগ্রেসী কালচার এখন মানুষ প্রত্যাখ্যান করিতেছে৷ ভিলেজ কমিটির নির্বাচনের মুখে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের বার্তা ত্রিপুরায় এই দলকে একেবারে শ্মশানে নিয়া দাঁড় করাইয়াছে৷
কংগ্রেসের এই দুরবস্থা সত্বেও কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপিও যে তেমন সুবিধা করিতে পারিবে না তাহাও স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে৷ এই দলের অবস্থার কোনও পরিবর্তন নাই৷ বিজেপির প্রদেশ কমিটিকে দলের হাইকমান্ড বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহায়তা চালাইয়া যাইতেছে৷ সম্ভবত, সিপিএম দলের পরই রাজ্যে বিজেপির একটি বিশাল নিজস্ব অফিসবাড়ী আছে আগরতলায়৷ তিন হইতে চারটা গাড়ী আছে৷ কর্মীদের জন্য বাইক ইত্যাদি রহিয়াছে৷ লক্ষ লক্ষ টাকার তহবিল আছে প্রদেশ কমিটির৷ তবু, দল আগাইতে পারিতেছে না৷ যেখানে কংগ্রেস তলাইয়া গিয়াছে, সেই কর্মী সমর্থকদের সিপিএম টানিয়া নিতেছে৷ বিজেপি সেখানে ব্যর্থ৷ জনবল ও জন সমর্থনের ঢেউ না থাকিলে দল বড় হয় না৷ আর দলকে বড় হইতে হইলে গ্রহণযোগ্য, ত্রিপুরার মাটির সঙ্গে যোগ আছে এমন জনদরদী ব্যাক্তিকে নেতৃত্ব পদে বসাইতে পারিলে মানুষ বিশ্বাসের ভিত খঁুজিয়া পাইত৷ চাপাইয়া দেওয়ার রাজনীতি দলকে কতবড় সর্বনাশের দিকে নিয়া যায় তাহা তো বার বার প্রমাণিত হইয়াছে৷ যদি দলের নেতারা রাজ্যের মঙ্গলের চাইতে নিজেদের বাণিজ্যের ধান্দায় ছুটিতে থাকেন সেখানে দল মাটি খঁুজিয়া পায় না৷ এ রাজ্যে ৩৬৫ দিনই সিপিএম মানুষের সঙ্গে আছে৷ প্রতিনিয়ত দলের কিংবা দলের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচীতে ঠাসা থাকে৷ অন্য দলগুলি তো তাহার ধারে কাছেও নাই৷ বিজেপি কংগ্রেসের কয়জন রাজ্য নেতার মাটির সঙ্গে যোগ আছে? বিজেপিতো কংগ্রেসের হারু প্রার্থীদের ঠাঁই দিয়াছে৷ তাহাদের তো ন্যুনতম গ্রহণযোগ্যতা নাই৷ এইভাবে দল মানুষের মন টানিতে পারিবে না৷
রাজ্যভাগের দাবী তুলিয়া উপজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দল তো সিপিএমের মাটি আরও শক্ত করিয়া দিয়াছে৷ কারণ ত্রিপুরা ভাগ রাজ্যের কোনও অংশের মানুষই চাইতে পারে না৷ কিছু উগ্র উপজাতি যুবকদের প্ররোচিত করা যত সহজ উপজাতিদের প্রবীণ ও শিক্ষিত অংশের মানুষকে প্রভাবিত করা অত সহজ নয়৷ পাহাড়ে উগ্রতা, ভয়ভীতি দেখাইয়া সমগ্র উপজাতিদের মন পাওয়া যাইতে পারে না৷ এবারের ভিলেজ কমিটির নির্বাচনে এক চতুর্থাংশ আসনে বামেদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ঘটনা এবং বিরোধী দলগুলির প্রার্থী দেওয়ার শোচনীয় হাল আবারও প্রমাণ করিয়া দিয়াছে ‘যত গর্জে তত বর্ষে না৷’ হম্বিতম্বি করিয়া মাটি পাওয়া যায়না৷ প্রয়োজন সংগঠন বিস্তার, মানুষের কাছে, মাটির কাছাকাছি গিয়া কাজ করা৷ শহরে লোক দেখানো শক্তি পরীক্ষায় মানুষ প্রভাবিত হয় না, তাহা আবারও প্রমাণ হইয়া গেল৷