বিজ্ঞান যুক্তিবাদের যত প্রসার বাড়িয়া চলিয়াছে সেখানেও জোর গতি পাইতেছে অবাস্তব সব বুজরুকি৷ এখনও, এই ত্রিপুরায় শুধু নহে বিভিন্ন রাজ্যে বুজরুকি কান্ড ঘটিয়া চলিয়াছে জোর গতিতে৷ ডাইনী হত্যা, সাপের কামড়ে মৃত রোগীকে ওঝার খপ্পরে দেওয়া, কালী মনসা পাওয়া ইত্যাদি কান্ড প্রতিনিয়ত ঘটিয়া চলিতেছে৷ ধর্মের প্রতি, দেবদেবীর প্রতি ভক্তিতে অবিচল মানুষ তাহা বিশ্বাস করিতেছেন৷ আর তাহাদের ফাঁদে পড়িয়া সর্বস্ব খুইয়াছেন এমন ঘটনার তো অভাব নাই৷ খোদ রাজধানী শহর আগরতলায় এক শ্রেণীর তান্ত্রিক টিভির পর্দায় মানুষকে, মানুষের দূর্বল মনকে ভুলাইয়া পাথর, কবজ, মাদুলির মোটা টাকার ব্যবসায় চালাইয়া যাইতেছেন৷ এর বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ প্রতিরোধ নাই৷ কারণ, ধর্মভীরু মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করিলে তাহা ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া হইতে পারে৷ এজন্য প্রয়োজন জন সচেতনতা৷ সত্যি কথা বলিতে কি, যুক্তিবাদী সরকার এক্ষেত্রে তেমন কোনও অগ্রণী ভূমিকা নিতে আগ্রহী তাহা লক্ষ্য করা যাইতেছে না৷ প্রকাশিত সংবাদে জানা গিয়াছে, গন্ডাছড়ার নারায়নপুরে পুলিশের সাহায্য নিয়া এক তান্ত্রিকের বুজরুকি ধরিতে গিয়া মার খাইয়াছেন কয়েকজন যুক্তিবাদীর দল৷ গ্রাম পাহাড়ের অসহায় মানুষ ওই মেয়ের পোশাক পরিহিত শান্তিকালী চৈত্র দেববর্মার নিকট হইতে জলপাড়া, তাবিজ কবজ সংগ্রহ করিয়া রোগ মুক্তির চেষ্টা করিতেছেন৷ শান্তিকালী চৈত্র দেববর্মার মূল বাড়ী নাকি চম্পকনগর৷ আখড়া বানাইয়াছেন গন্ডাছড়ার গ্রামে৷ যুক্তিবাদীরা ‘শান্তিকালীর’ বুজরুকি ধরিতে গিয়া ধর্মবিশ্বাসী মানুষের হাতে বেদম মার খাইয়া ব্যর্থ মনোরথে প্রত্যাবর্তন করিয়াছেন৷ পুলিশও সেক্ষেত্রে নিরুপায় দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ন, তাহারাও তো ধর্মভীরু৷ তাহা না হইলে ‘শান্তিকালী’র বুজরুকি রোধে অগ্রণী হইতে পারে না?
মানুষের অগাধ বিশ্বাসকে এক লহমায়, চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যাইবে না৷ এর জন্য গ্রাম পাহাড় সর্বত্র প্রতিনিয়ত প্রচার ইত্যাদি চালু রাখা দরকার৷ এজন্য নাটক, যাত্রা ও নানা অনুষ্ঠান চালু করা যাইতে পাারে৷ যেগুলি অন্ধ কুসংস্কার, বুজরুকি ইত্যাদির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করিতে পারে৷ কোনও এলাকায় যেখানে সরলমতি মানুষের মনে গভীর বিশ্বাস সঞ্চারিত, সেখানে জনবেষ্টিত ‘তান্ত্রিকের’ বিরুদ্ধে অনাস্থা ও অবিশ্বাস সৃষ্টির চেষ্টা সফল হইবে না৷ খুব সন্তর্পনে, ঠান্ডা মাথায় ওইসব ধর্মপ্রাণ মানুষকে বুঝাইতে হইবে৷ মানুষ ঠকানোর কর্মটি নানা তথ্য ও ব্যাখ্যায় তুলিয়া ধরিতে হইবে৷ তাহা না করিয়া অতর্কিত হানা ধর্মপ্রাণ ও বিশ্বাসী মানুষকে বিদ্রোহী করিয়া তুলিতে পারে৷
গ্রাম পাহাড়ে সরলমতি মানুষকে এইসব ‘তান্ত্রিক’রা খুব সহজেই কাবু করিতে পারে৷ আজও দেশের বহু মানুষ এইসব জাল জচ্চুরীর হাতে সর্বস্বান্ত হইতেছেন৷ এইসব ঘটনায় বেশীরভাগই প্রকাশ্যে জানাজানি হয়না৷ এইসব ‘তান্ত্রিক’রা এত বেশী ভয়ংকর যে, খুন করা এবং নানা সর্বনাশা কান্ডেও তৎপর থাকে৷ ফলে, তাহাদের বিরুদ্ধে নির্যাতিতারা সহজে মুখ খুলেন না৷ এই রকম ভয়ংকর সব ‘তান্ত্রিক’ রহিয়াছেন যাহাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নিতে হাটু কাঁপে৷ এই শহর আগরতলাতেই টিভির পর্দায় যাহারা তন্ত্রমন্ত্রের প্রচার চালাইতেছেন তাহাদের হাতে কি সাধারণ মানুষ প্রতারিত হইতেছেন না? যেসব জ্যোতিষী জ্যোতিষ ব্যবসার নামে মানুষকে অবিরত ঠকাইতেছেন তাহাদের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদীরা কোথায়? খোদ শহরেই তো মানুষ ঠকানোর কারবার সগৌরবে চলিতেছে৷ যুক্তিবাদীরা তো সেখানে একবারেই নীরব৷ আগে শহরের বুকে যে প্রতারণার ঘটনা চলিতেছে সেগুলি বন্ধ করিতে পারিলেই তাহা গ্রামীণ এলাকায়ও প্রতিক্রিয়া ছড়াইবে৷ তখন ‘শান্তিকালীরা’ বাপ বাপ বলিয়া পালাইবে৷
2016-02-01