নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ জানুয়ারি৷৷ সম্পূর্ণ সরকারি আমলা নির্ভর তথ্যের উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রামকৃপাল যাদব রাজ্য সরকারকে বাহবা দিলেন৷ এ রাজ্য এখন পর্যন্ত যা করতে পেরেছে তা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি৷ রাজ্য সরকার একশ শতাংশ পানীয় জল পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে এই তথ্য তুলে ধরার সাথে সাথেই সাংবাদিকদের চাপের মুখে ভোল বদল করে তিনি জানান আইন শৃঙ্খলা অবনতির কারণে রাজ্যে সর্বত্র পানীয় জল পৌঁছায়নি৷ শুক্রবার আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য সরকারের আমলা নির্ভর তথ্যের উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামকৃপাল যাদবের রাজ্য সরকারের পিঠ চাপড়ানোকে ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তথ্যভিজ্ঞ মহল৷
[vsw id=”QKmzWYXU7ZM” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]এদিকে, পানীয় জল এবং স্বাস্থ্য বিধান ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সহায়তা সঠিকভাবে মিলছে না এই অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে দেন তিনি৷ কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তিনি জানান, পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধানক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সহয়তার পরিমাণ ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪২ শতাংশ করা হয়েছে৷ তার মানে দশ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ তিনি আরো জানান, দশ শতাংশ হারে কেন্দ্রীয় সহায়তা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সবকটি রাজ্যগুলিকে আরো ৪০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হবে৷ যা সারা ভারতে পঞ্চায়েতগুলির কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে৷ প্রয়োজনে পঞ্চায়েত থেকে অর্থ নিয়ে পানীয় জল এবং স্বাস্থ্য বিধান ক্ষেত্রের কাজে লাগানো যেতে পারে৷ তিনি স্পষ্ট জানান, কেন্দ্রীয় সহায়তার আওতায় তহবিল সংস্থানের পরিমাণ কমানোর কোন প্রশ্ণই আসে না৷
এদিন তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধানক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কাজকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ মূলত, রাজ্য সরকারের আমলার নির্ভর তথ্যের উপর ভিত্তি করেই তিনি বাহবা দিয়েছেন৷ সম্প্রতি, রাজ্য সরকারের পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের মন্ত্রী রতন ভৌমিকের দেওয়া তথ্য অনুসারে রাজ্যে ৩৭৩৩টি পাড়ায় পুরোদমে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি৷ ৮৭২৩টি পাড়ার মধ্যে কেবল মাত্র ৪৯৯০টি পাড়ায় সারা বছর পানীয় জল পাওয়া যায়৷ অথচ এদিন, সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দৃঢ়তার সাথে জানান, রাজ্যে একশ শতাংশ পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ এনিয়ে তথ্যের গড়মিল রয়েছে বিষয়ে নানা প্রশ্ণ করা হলে তিনি চাপের মুখে জানান রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা অবনতির কারণেই সর্বত্র পানীয় জল পৌঁছানো যাচ্ছে না৷ রাজ্য সফরে এসে কেবলমাত্র রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে নানা প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাজ্য সফরে আসেন কেন্দ্রীয় পানীয় জল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রামকৃপাল যাদব৷ তিনি ঐদিন ত্রিপুরা এবং মণিপুরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করেন৷ শুক্রবার মন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী যে স্বচ্ছ ভারতের সূচনা করেছিলেন সে মিশনের আওতায় ২০১৯ ’র মধ্যে দেশকে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের অভ্যাস থেকে মুক্ত অবস্থায় দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী৷ ত্রিপুরা এবং মণিপুরের আধিকারিকদের সাথে বৈঠকে উভয় রাজ্য স্বচ্ছ ভারত মিশনের আওতায় ২০১৭’র মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের অভ্যাস দূর করবে বলে সম্মতি প্রকাশ করেছে বলে এদিন তিনি জানিয়েছেন৷
তিনি আরো বলেন, বিগত কয়েক বছরে ত্রিপুরা দ্রুত হারে উন্নয়নের ধারা প্রত্যক্ষ করেছে৷ তিনি বলেন, সাক্ষরতার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয় এবং এখানে এ ধরনের উচ্চ হারের সাক্ষরতা রয়েছে বলেই উন্নয়নও ঘটতে বাধ্য৷ এছাড়াও তিনি উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্য সরকারগুলিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দরিদ্র দূরীকরণের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে পরামর্শ দেন৷ তিনি আরোবলেন, উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে যেহেতু কৃষি ও বনজ সম্পদের প্রাচুর্য আছে তাই এখানে জৈবচাষেরও প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে৷
পানীয় জলের যথাযথ ব্যবহার, সংরক্ষণ, গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী জনগনেরর শৌচালয় ব্যবহার এবং স্বচ্ছতার নিরীখে ত্রিপুরার জনগনের সচেতনতা প্রশংসনীয়৷ স্বচ্ছ ভারত মিশনে ত্রিপুরা দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে৷ আজ উদয়পুরের টেপানিয়া ব্লকের কড়ইমুড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এবং কিল্লা ব্লকের পানীয় জলের দুটি প্রকল্প পরিদর্শনকালে এই অভিমত ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয় পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধান রাষ্ট্রমন্ত্রী রামকৃপাল যাদব৷ তিনি স্থানীয় মানুষের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন৷ সেই সঙ্গে পানীয় জল, স্বাস্থ্য সম্মত শৌচালয় ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করেন৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পরিদর্শনকালে অন্যান্যদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব সত্যব্রত সাহু, রাজ্য সরকারের প্রধান সচিব লোকরঞ্জন, গোমতী জেলার জেলাশাসক সোনাল গোয়েল, পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি দপ্তরের মুখ্য প্রকৌশলী বি কে দেববর্মা সহ বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷ প্রথমে তিনি কড়ইমুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পটি পদির্শন করেন৷ এরপর তিনি কিল্লা ব্লকের সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যানটি পরিদর্শন করেন৷ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ণে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যথাযথ সহায়তায় আশ্বাস দেন৷
2016-01-30