নানা রঙে রাজনীতি

CONG BJP TRINAMUL AAPরাজার নীতি হইতেই যে রাজনীতি আসিয়াছে সে বিষয়ে বোধহয় সন্দেহ নাই৷ এই ‘রাজনীতি’ খুব সহজ কাজ ভাবিলে ভুল করা হইবে৷ অনেক কসরৎ করিয়া এই লাইনে টিকিয়া থাকিতে হয়৷ আর রাজনীতির প্রয়োজনেই দেশে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি প্রয়োজন৷ শিক্ষিত লোকরা, জ্ঞানী গুনীরা প্রাজ্ঞরা যদি এই রাজনীতির অঙ্গনে যুক্ত হইতেন তাহা হইলে হয়তো রাজনীতির কদর এবং ইহার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বাড়িত৷ কিন্তু দূর্ভাগ্যের এইখানেই যে, রাজনীতি এখন নোংরামীর শেষ পর্য্যায়ে গিয়া পৌঁছাইতেছে৷ এই পার্বতী রাজ্য ত্রিপুরায় ভারতীয় জনতা পার্টি এখনও হাটি হাটি পা পা করিতেছে৷ কংগ্রেসের বিকল্প হইয়া উঠিবার জন্য চেষ্টার অন্ত নাই৷ তবু, সুখের সংসারে ধিকি ধিকি আগুন জ্বলিতেছে৷ সেই আগুন সহসা নিভিয়া যাইবে কিনা বলা মুশকিল৷ দলের তরফে অভিযোগ করা হইয়াছে প্রদেশ কার্য্যালয়ের সামনে গাড়ী ভাঙ্গচুর এমন কি ব্যানার পোড়ানো হইয়াছে৷ বিজেপি সদর দপ্তরে কাহারা এই আক্রমণের সঙ্গে জড়িত, পুলিশ তাহাদের সনাক্ত করিতে পারিয়াছে কিনা, দুসৃকতিকারীদের গ্রেপ্তার করা হইয়াছে কিনা এইসব প্রশ্ণ উঠিবে৷ ত্রিপুরার এই রাজধানী শহর আগরতলায় এত এত রাজনৈতিক দলের সদর দপ্তর বহাল তবিয়তেই আছে৷ সেখানে বিজেপি সদর দপ্তরের সামনে রাখা গাড়ী, ব্যানার আক্রান্ত হইয়া গেল৷ রাজ্যে কেন্দ্রীয় রেল রাজ্যমন্ত্রী মনোজ সিনহাও বিজেপির অফিসের সামনে এই রাজধানী শহর আগরতলায় এত এত রাজনৈতিক দলের সদর দপ্তর বহাল তবিয়তে আছে৷ সেখানে বিজেপি সদর দপ্তরের সামনে রাখা গাড়ী, ব্যানার আক্রান্ত হইয়া গেল৷ রাজ্যে কেন্দ্রীয় রেল রাজ্যমন্ত্রী মনোজ সিনহাও বিজেপির অফিসের সামনে এই হামলার নিন্দা করিয়াছেন৷ যে দল কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসীন সেই দলের ত্রিপুরার সদর দপ্তর আক্রান্ত হইয়া যাইবার ঘটনা তো মারাত্মক৷ বিপ্লব কুমার দেব সভাপতি পদে অভিষিক্ত হইতে না হইতেই দিল্লীতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া রাজ্যের ‘ভয়াবহ’ আইন শৃঙ্খলার চিত্র তুলিয়া ধরেন৷ তিনি নাকি নিজের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিযুক্ত করিতে দাবী জানাইয়াছেন৷
বিরোধী দলের বিশেষ করিয়া বিজেপির প্রদেশ সভাপতির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও রকম ফাঁকফোকর যাহাতে না থাকে তাহা নিশ্চয়ই করা হইবে৷ ত্রিপুরা অন্যান্য রাজ্যের চাহিয়া অনেক বেশী ব্যতিক্রমী৷ এরাজ্যের মানুষ অনেক বেশী রাজনীতি সচেতন৷ প্রধান বিরোধী দলে থাকা কংগ্রেসকে বর্জন করিতে গিয়া বিজেপির প্রতি অনুরক্ত হইয়া পড়িবে এমন সম্ভাবনা কতখানি, সে সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নিশ্চয়ই চলিতে পারে৷ মাটির মানুষ, মানুষের সঙ্গে মিশিয়া, তাহাদের সুখ দুঃখের অংশীদার হইতে না পারিলে জননেতা হওয়া যায় না৷ আর এই কাজ কত কঠিন তাহা নব্য রাজনীতিওয়ালারা কতখানি বুঝিতেছেন বলা মুশকিল৷ রাজ্যের সর্বত্র সিপিএমের শিকড় গভীর মাটিতে প্রোথিত৷ সেই শিকড় উপড়াইয়া ফেলা যে কঠিন কাজ তাহা রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরা ঠাহর করিতেছেন না এমন ভাবিবার কারণ নাই৷ অনেক পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদরা এরাজ্যের ক্ষমতার খেলায় যুক্ত ছিলেন৷ সেই শচীন্দ্রলাল সিংহ, সুখময় সেনগুপ্ত, নৃপেন চক্রবর্তী, দশরথ দেব, বীরেন দত্তের মতো ব্যক্তিত্ব তো এখন তেমন খঁুজিয়া পাওয়া মুশকিল৷ রাজনীতির কপটতা, প্রতারণা তখন একেবারেই ছিল না এমন বলা যাইবে না৷ তবে, সেই সব নেতাদের ব্যাক্তিত্ব তো এখন আর তেমন নাই৷ সবচাইতে দুভার্গ্যের এই খানেই যে, রাজনীতিতে বলিষ্ট নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ব্যাক্তি তো দেখা যায় না৷ সবই যেন চাপাইয়া দেওয়ার রাজনীতি৷ কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি কিংবা বিজেপির রাজ্য সভাপতি মনোনীত করেন দলের হাইকমান্ড৷ যেখানে জননেতা হইবার সুযোগ কোথায়? মানুষকে আকর্ষণ করার প্রবণতা যদি হারাইয়া যায় কিংবা না থাকে সেখানে দলের প্রতি জনঢল আসিবে কোথা হইতে৷ আর জনতার প্লাবন দেখা না দিলে সেই দলের অস্তিত্ব খঁুজিয়া বাহির করাই কঠিন হইবে৷
ত্রিপুরায় ভারতীয় জনতা পার্টি কোনও সময়ই জনঢল দেখাইতে পারে নাই৷ কংগ্রেসের চরম বিপর্য্যয়ের সুযোগে এই গেরুয়া পার্টি কিছুটা নড়িয়া চড়িয়া বসিয়াছে৷ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আছে বলিয়া মানুষ কিছু ভরসা খঁুজিতে চাহিয়াছে৷ কিন্তু সিপিআই(এম) দল যেভাবে মুখের উপর জবাব দিয়াছে, বিজেপি গাড়ী ভাঙচুর হামলার প্রচারকে উড়াইয়া দিয়াছে সেখানে গেরুয়া পার্টি কুৎসার জবাব দিতে পারিয়াছে? এত বড় একটা হামলার ঘটনার পর দলের পক্ষে প্রতিবাদ মিছিল হইয়াছে বলিয়া্য তো দেখা গেল না৷ পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের কাছে দলের পক্ষে ডেপুটেশন দেওয়া হইয়াছে এমন খবরও পাওয়া গেল না৷ আসলে, বিজেপি দলে প্রদেশ সভাপতি দৌঁড়ে ছিলেন অনেকেই৷ কংগ্রেসী কালচার পুরোদমে চলিয়াছে৷ এই অবস্থায় নতুন সভাপতি ঘরই গোছাইতে পারিতেছেন না৷ বিজেপি এরাজ্যে কংগ্রেসের বিকল্প হইয়া উঠিতে হইলে গোটা রাজ্যেই শক্তিশালী সংগঠন প্রয়োজন৷ যে দলের রাজধানী আগরতলাতেই বেহাল অবস্থা সেই দল আগাইবে কি করিয়া? গত পুর নিগম নির্বাচনে বিজেপি তো বহু ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টই দিতে পারে নাই৷ মানুষ যতখানি ভোট দিয়াছে শুধু প্রতিবাদ জানাইতেই৷ এই সহজ বিষয়টাই তো রাজনীতির নেতারা বুঝিয়াও বুঝিতে চাহিতেছেন না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *