বিপন্ন সড়ক নিরাপত্তা

attackপ্রতি বছর সরকারী উদ্যোগে সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করা হয়৷ এই সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহেই একের পর এক দূর্ঘটনায় অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়েন৷ প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটিতেছে৷ অথচ ইহাই সত্যি যে, এই দূর্ঘটনা রোধে তেমন কার্য্যকর কোনও পদক্ষেপ নিতে পারিতেছে না রাজ্য প্রশাসন৷ যে সরিষা দিয়া ভুত তাড়ানো হইবে সেই সরিষাতেই যদি ভুত থাকে তাহা হইলে ভুত তো ঘার মটকাইবেই৷ দূর্ঘটনা যে হারে বাড়িতেছে, পরিসংখ্যান নিলে হয়তো দেখা যাইবে সড়ক দূর্ঘটনায় শীর্ষ স্থান দখল করিতেছে ত্রিপুরা৷ রাজ্যের আয়তন, লোকসংখ্যা ইত্যাদির অনুপাতে দূর্ঘটনার হার যে অনেক বেশী সে বিষয়ে দ্বিমত থাকিবারই কথা নহে৷ ত্রিপুরায় যান বাহন চলাচলের উপর ট্রাফিক দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কতখানি রহিয়াছে সে বিষয়ে বিতর্ক আছে৷ দূর্ঘটনা বৃদ্ধির সবচাইতে বড় কারন প্রশিক্ষিত, দক্ষ চালকের অভাব৷ যান বাহন চালকের বেপরোয়া চালনার জন্যও দূর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসাবে ধরিয়া নেওয়া যায়৷
রাজ্যে সড়ক পরিবহণের ক্ষেত্রে মোটর কর্মীদের ভূমিকা সম্পর্কে জোর বিতর্ক আছে৷ এই লাইনে এখন আর দক্ষ কর্মী গড়িয়া উঠিতেছে না৷ রাজ্যে বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাস চলাচল করিলেও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ তেমন নাই৷ একশ্রেণীর চালক, মোটরকর্মী এই শিল্পকে বাঁচাইয়া রাখিবার, প্রসারিত করিবার তেমন ভাবনা চিন্তা করেন বলিয়া মনে হয় না৷ এক সময় রাজ্যে মোটরগাড়ীর চালক কর্মীদের জয়জয়কার কে না দেখিয়াছে৷ ষাটের দশকে একজন মোটর গাড়ীর চালকের দামই ছিল আলাদা৷ এই গাড়ীর ড্রাইভাররা নানা দিক দিয়াই ছিলেন সুখী৷ এই সুখ ভোগের জন্য সবচাইতে বেশী তৎপর ছিলেন ড্রাইভাররা৷ রাজ্যের সরকারী কর্মচারীদের সেদিনের দুরবস্থার কথা কে জানে৷ এই পরিস্থিতিতে তখন মোটর চালকরা দাপাইয়া বেড়াইয়াছে৷ আজ ত্রিপুরায় তাহাদের ভবিষ্যত বড়ই সংকটাপন্ন অবস্থায় গিয়া দাঁড়াইতেছে৷ ত্রিপুরায় ব্রডগেজ রেল চালু হইয়া গেলে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ বহুগুন বৃদ্ধি পাইবে৷ কিন্তু মোটর গাড়ী, পণ্য পরিবহণের গাড়ী চালকদের সামনে দূর্যোগ নামিয়া আসিবে৷ এই দূর্যোগের সম্ভাবনার কথা জানিয়াও মোটর চালকদের সম্বিত ফিরিতেছে না৷ আর কয়েকমাস পরেই যে, সেই দূর্যোগ নামিয়া আসিতেছে যান চালকদের সামনে, যে বিড়ম্বনা দেখা দিবে তাহা আঁচ করিয়া আতংকিত হইবার কথা৷
মোটর কর্মীদের অনেকেই পরিস্থিতির কথা ভাবিয়া অন্য পথে জীবিকার সন্ধান করিতেছেন৷ তাহা ছাড়াও মোটর কর্মীদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ চিন্তা ও চেতনার পথে হাটিতে পারে৷ সুতরাং তাহাদের প্রতি সাধারণ মানুষের তেমন সহানুভুতির ঘটনা চোখে পড়ে না৷ মোটরকর্মীরা বেশীর ভাগই রাজনীতির শিবিরে আশ্রিত৷ আর খঁুটির জোরে পুলিশকেও চোখ রাঙাইয়া কাবু করিতে পারে৷ তাহাদের সাম্প্রতিক কান্ডকীর্তি অনেকের চোখ কান খুলিয়া দিয়াছে৷ যতদিন মোটর কর্মীদের যথাযথ ভাবে যান বাহনের উপর, যান চালকদের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকিবে না, ততদিন বেপরোয়া যান মানুষের প্রাণ ছিনাইয়া নিতেই থাকিবে৷ ট্রাফিক পুলিশকে আরও বেশী প্রশিক্ষিত করিয়া যানবাহন চলাচলের উপর কঠোর নজরা দারী বাড়ানো দরকার৷ যেখানে ট্রাফিক পুলিশই মোটর কর্মীদের ভয়ে তটস্থ সেখানে দূর্ঘটনা রোধ করা তো অলীক স্বপ্ণের মতোই৷ ত্রিপুরায় যেভাবে দূর্গটনা বাড়িয়াই চলিতেছে সেখানে রাশ টানিতেই হইবে, মৃত্যু মিছিল বন্ধ করিতে হইবে৷ বিপন্ন সড়ক নিরাপত্তা৷ এই বিপন্ন অবস্থা হইতে ত্রিপুরাকে রক্ষা করিতে না পারিলে আমাদের সমস্ত গর্ব ধুলায় লুটাইবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *