উন্নয়নই শেষ কথা

Golden Tripura Wideকেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার প্রকাশ করিয়াই এতকাল বামফ্রন্ট সরকার রাজ্য চালাইয়াছে৷ কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের আমলে উঠিতে বসিতে বামমন্ত্রীরা ক্ষোভ জানাইতেন৷ এই কেন্দ্র বিরোধী জেহাদ অনেকখানিই যেন স্তিমিত হইয়া আসিয়াছে৷ কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারও বিভিন্ন প্রকল্পে ঢালাও বরাদ্ধ দিয়াছে৷ ছিল বরাদ্ধের ছড়াছড়ি৷ অর্থ ব্যয় করিতেই রাজ্যের ছিল হিমসিম অবস্থা৷ এত এত বরাদ্ধ সত্বেও কেন্দ্র বিরোধী জেহাদের অন্ত ছিল না৷ কারণ, তখন রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস৷ প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি৷ ফলে, কংগ্রেসের উপর সব দোষ চাপাইয়া রাজনীতির বাজিমাতের ফন্দিই এতকাল নিয়াছেন বাম নেতারা৷ এখন রাজনীতির খাতিরে কংগ্রেস যদি সিপিএমের মিত্র শক্তি হয় তাহা হইলে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসাবে দাঁড়াইতে পারে বিজেপি৷ পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই(এম) দলের প্লেনামে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্ণে আলোচনার যে বার্তা জনমনে দাগ কাটিয়াছে তাহার প্রতিক্রিয়া সুদুর প্রসারী৷ পক্ষান্তরে, পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসও যেভাবে সিপিএমের সঙ্গে জোট বাধিতে আগ্রহ ও প্রয়োজনীয়তার কথা সোচ্চারে বলিয়াছে সেই অবস্থায় ত্রিপুরায় আগামী দিনে সিপিএমের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে বিজেপির উঠিয়া আসিবার কিছুটা সম্ভাবনা থাকিয়া যায়৷ কিন্তু, সাংগঠনিক ক্ষেত্রে যেভাবে দল আগাইতেছে তাহাতে ভুল পথেরই সংকেত দিতেছে৷ কংগ্রেসের শিকড় ত্রিপুরার বহু গভীরেই বিস্তৃত ছিল৷ সারা রাজ্যে একসময় এই দলের যে আধিপত্য ছিল তাহা ধুইয়া মুছিয়া সাফ হইয়া গিয়াছে ভাবিলে বোধহয় ভুল করা হইবে৷ সেই জায়গায় পৌঁছাইতে হইলে গেরুয়া দলকে অনেক বেশী লড়াই করিতে হইবে৷ বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বিজেপির ভোট বাড়িয়াছে কংগ্রেসের প্রতি অনীহার কারণেই৷ কিন্তু তবু, বিজেপি প্রকৃতই শক্তিশালী বিরোধী দলের স্তরে আসিতে অনেক বেশী লড়াই করিতে হইবে৷ কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকার সুবাদে হয়তো এই দল রাজ্যে কিছুটা মাটি পাইতে পারে৷ কিন্তু কেন্দ্রের ক্ষমতা হাতছাড়া হইলে পরিস্থিতি তো অন্য কথা বলিতে পারে৷
এই রকম পরিস্থিতির মুখে রাজনীতির সুলক্ষণ এইখানেই যে, রাজ্যের উন্নয়নের প্রশ্ণে কেন্দ্র রাজ্য ক্রমেই কাছাকাছি আসিয়াছে৷ এতকাল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের যে অভিযোগ প্রতিনিয়ত উঠিত তাহারই ব্যতিক্রমী ঘটনাই মনে করাইয়া দিতেছে৷ বুধবার সোনামুড়ার শ্রীমন্তপুর ইন্টিগ্রেটেড ডেভলাপমেন্ট কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য রাষ্ট্রমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার উভয়েই উন্নয়নের প্রশ্ণে একই অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন৷ এক্ষেত্রে রাজনীতির সংকীর্ণতা কোনও মতেই কাম্য হইতে পারে না৷ এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সগৌরব ঘোষণা বা স্বীকৃতি রাজ্যবাসীকেও অনুপ্রাণিত করিয়াছে সন্দেহ নাই৷ উন্নয়নের প্রশ্ণে কেন্দ্রের ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের এই সন্তোষ্টি নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য ঘটনা৷ রাজনীতির সংকীর্ণতা উন্নয়নের বারটা বাজাইয়া দেয়৷ একে অপরকে দোষারূপ করিয়া রাজনীতির ফায়দা নেওয়ার ঘটনা অতীতেও ঘটিয়াছে৷ ইহাও অস্বীকার করা যাইবে না যে, রাজ্যকে রাজনৈতিক ভাবে বেকায়দায় ফেলিতে বঞ্চনার পথ ধরিতেও দেখা গিয়াছে কেন্দ্রকে৷ অন্যদিকে রাজ্যও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা বঞ্চনার অভিযোগ তুলিয়া রাজনীতির ফায়দা নিবার ঘটনা ঘটিয়াছে৷ এই রাজনৈতিক সংকীর্ণতা, নোংরামীর ঘটনার কারণে রাজ্যে রাজ্যে কাঙ্খিত উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হইয়াছে৷
আজ পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয়, রাজনৈতিক সংকীর্ণতার উর্ধে উঠিয়া কেন্দ্র রাজ্য অগ্রসর হয় তাহা হইলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা হইতে পারে৷ ত্রিপুরা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সিংহদুয়ার হইবার যে স্বপ্ণ দেখা শুরু হইযাছে, তিলে তিলে যে আশা সঞ্চিত হইয়াছে তাহার রূপায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সার্বিক সহযোগিতাই অনেক বেশী জরুরী৷ এক্ষেত্রে, রাজনৈতিক মতাদর্শকে বড় করিয়া না দেখিয়া উন্নয়নের প্রশ্ণে ঐক্যমতই সাফল্য আনিয়া দিতে পারে৷ শুধু ত্রিপুরা নহে যেকোনও রাজ্যের ক্ষেত্রেই কেন্দ্রকে সহনশীল ও উদার ভূমিকা নিতে হইবে৷ সংকীর্ণতার উর্ধে উঠিয়া আগাইতে পারিলেই নতুন ভারত জাগিয়া উঠিবে৷ সেই ভারতকে জগৎসভায় শ্রেষ্ট আসন জয় করিতে হইলে প্রতিটি রাজ্যে উন্নয়নের স্রোতধারা বহাইয়া দিতে হইবে৷ উন্নয়নকে প্রতিবন্ধক করিয়া রাজনীতির খেলা দেশবাসী মানিয়া নিবে না৷ উন্নয়নের প্রশ্ণে কেন্দ্র ও রাজ্যকে হাত ধরাধরি করিয়া আগাইতে হইবে৷ এক্ষেত্রে কোনও সংকীর্ণতাকেই প্রশ্রয় দেওয়া হইবে আত্মহননের সামিল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *