গুয়াহাটি, ৭ জানুয়ারি, (হি.স.) : রাজ্যের ভোটারদের বিভ্রান্ত করে মহাজোট বা মহসমজোতা নিয়ে অহরহ পরস্পরবিরোধী স্থিতি বদল করছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ| বিজেপিকে রুখতে এই কদিন আগেও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের মধ্যস্থতায় দলের সর্বভারতীয় উপ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর পরামর্শে আধুনিক রাজনীতির কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী| দিল্লি ও পাটনায় বেশ কয়েকবার তাঁদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও হয়েছিল| তাঁরই ডাকে অসমে এসে বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান পর্যালোচনা করে দিল্লি ফিরে গিয়ে রাহুল ও নীতিশকে এখানে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা তলানিতে এবং এ-থেকে দলকে তোলে আনা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় বলে এক গোপন রিপোর্ট দাখিল করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর| তিনদিন আগে এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে সমঝোতা বা মিত্রতা সম্পর্কে তাঁদের কথা চলছে বলে ঘোষণা করার পর আজ স্ববিরোধী স্থিতি স্পষ্ট করে বলছেন বদরুদ্দিন আজমলের দলের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও জোট গড়ার পরিকল্পনা নেই| এদের সঙ্গে কোনওধরনের জোটেও যাবে না কংগ্রেস| বলছেন, এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে জোট গড়লে কংগ্রেস নাকি উজান এবং বরাক উপত্যকা (দক্ষিণ অসম)-য় ধসে পড়বে|
এদিকে, মঙ্গলবার পাটনায় নীতিশ কুমারের বাড়িতে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বিজোপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়ার লক্ষ্যে এআইইউডিএফ-প্রধান বদরুদ্দিন আজমল ও দলের সাধারণ সম্পাদক আমিনূল ইসলামের এক বৈঠক হয়েছে| এর পর থেকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর স্থিতি বদল করে প্রায় প্রতিদিন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পেশ করছেন| ওই বৈঠকের পর লক্ষণীয়ভাবে তাঁর বক্তব্য বদল করে মুখ্যমন্ত্রীর জোট-বিরোধী মন্তব্য| তিনি বলেন, আমার সোজা কথা, ভুলেও এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে মিত্রতায় যাবে না কংগ্রেস| আমি সোজা মানুষ, এত প্যাঁচ বুঝি না| যা বলছি তা-ই, বদরুদ্দিনের সঙ্গে কোনও জোট নয়| এআইইউডিএফ-প্রধানের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে তাঁর প্রশ্ন, বদরুদ্দিনের এতই যদি জনপ্রিয়তা, তা-হলে মিত্রতার জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন কেন? এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রশান্ত কিশোরের কথায় আমাদের চলতে হবে নাকি? তিনি বাইরের লোক| তিনি যা বলার বলতে থাকুন| এতে কংগ্রেসের কিছু যায় আসে না| এককথায় এআইসিসি আমাদের ইগনোর করে না, এটাই বড় কথা|
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের আচমকা এই ভোল বদলে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে| অনেকেই মনে করছেন, মঙ্গলবার পাটনায় নীতিশ কুমার ও প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বিজোপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়ার লক্ষ্যে এআইইউডিএফ-এর বৈঠকে নিশ্চিতভাবে এ-ধরনের কোনও স্থিতি নিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে| একে একধরনের গোপন সমঝোতা বলেও কেউ কেউ মনে করছেন| মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থানকে নির্বাচনী সমীকরণ রচনার এক ব্লু-প্রিন্ট বলেও রাজনৈতিক মহলের ধারণা| না-হলে আচমকা এভাবে জোট বা সমঝোতার বিষয়কে নাকচ করার কী অর্থ হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে|