নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ জানুয়ারি৷৷ উন্নয়নের প্রশ্ণে কেন্দ্র-রাজ্য ক্রমেই কাছাকাছি আসছে এমনই ছবি দেখা গেল৷ চারিদিকে সীমানা পরিবেষ্টিত ত্রিপুরার সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী পরিলক্ষিত হয়েছে৷ বুধবার, সোনামুড়ার শ্রীমন্তপুরে ইন্টিগ্রেটেড ডেভলপমেন্ট কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার উভয়ই উন্নয়নের প্রশ্ণে এমনটাই অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷ কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাজ্যের বিভিন্ন দাবি দাওয়ার বিষয়ে তিনি দিল্লিতে গিয়ে তদ্বির করবেন এবং মন্ত্রকের তরফে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ একই ভাবে নদীপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলা, আগরতলা -আখাউড়া রেল স্থাপন এবং গোমতীর নাব্যতা বাড়িয়ে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক আদানপ্রদানের বিষয়ে কেন্দ্র যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তাতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নয়নের প্রশ্ণে কেন্দ্র-রাজ্য ক্রমশই কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল৷
এদিন, রাজ্যের দাবি মোতাবেক উত্তর পূর্ব শিল্প উন্নয়ন নীতি যে সম্ভাবনাময় এবং এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে সে কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, তিনি এই নীতির নিয়মিতকরণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবেন৷ মূলত, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে শিল্পায়নের বিষয়ে রাজ্যের মূল দাবি উত্তরপূর্ব শিল্প উন্নয়ন নীতি যা গত নভেম্বর মাসে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে তা পুনরায় চালু করতে হবে৷ রাজ্যের মতে, তাতে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটবে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই বিষয়ে ইতিবাচক আশ্বাসে রাজ্য সরকার সন্তোষ প্রকাশ করেছে৷
এদিন, উদ্বোধকের ভাষণে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷ তারই ফলস্বরূপ ইন্টিগ্রেটেড ডেভলপমেন্ট কমপ্লেক্সের শুভ সূচনা৷ পাশাপাশি সীমান্ত হাটগুলির বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন৷ এদিন তিনি বলেন, রাজ্যে আরো দুটি সীমান্ত হাট খোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছেন৷ রাজ্যের এই দাবি তিনি দিল্লির দরবারে পেশ করার পাশাপাশি মন্ত্রকের হস্তক্ষেপেরও সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী একদিকে যখন এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ত্রিপুরায় আরো দুটি বর্ডার হাট খোলার অনুমোদন দিয়েছে৷ তাতে রাজ্যের দাবি প্রসঙ্গে কেন্দ্রের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীই প্রমাণিত হচ্ছে বলে মনে করছে তথ্যভিজ্ঞ মহল৷ ফেনী নদীর উপর সেতুর প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ব্রিজটি হয়ে গেলে চট্টগ্রাম আমাদের খুব কাছে চলে আসবে৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে হিসাবে ত্রিপুরা আত্মপ্রকাশ করবে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করা অনেক সহজ হয়ে ওঠবে৷ এই ব্রিজটি নির্মাণে যাতে আর বিলম্ব না হয় সেজন্য বিদেশমন্ত্রক, বাণিজ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন৷ যোগাযোগের ক্ষেত্রে চারদিক থেকে সীমানা পরিবেষ্টিত ত্রিপুরা যে সমস্যা ভোগ করছে তা দূরীকরণে সব ধরনের প্রচেষ্টা নেয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন৷ কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ভারত অগ্রসর হতে গেলে সব রাজ্যকেই এগিয়ে যেতে হবে৷ একটি রাজ্যও পিছিয়ে থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে না৷ তাই সব রাজ্যের অগ্রগতি সমানভাবে করতে হবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চারদিকে যেভাবে সীমানা পরিবেষ্টিত হয়ে রয়েছি তা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছি৷ নদীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে৷ এবিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে৷ কাজ শুরু হলে আগরতলা আখাউড়া রেল লাইন দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে স্থাপন হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ পাশাপাশি সাব্রুম দিয়ে রাস্তা খুলে গেলে ত্রিপুরার জন্য বিষয়টি দারুণ সুখকর হবে৷ শুধু ত্রিপুরা নয় সমগ্র পূর্বোত্তরের চেহারাও পাল্টে যাবে৷ তিনি বলেন, গোমতী নদী দিয়ে মেঘনার সঙ্গে জলপথ ব্যবহার করে পণ্য সামগ্রী আনার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল৷ কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছে৷ বাংলাদেশেরও তাতে আপত্তি নেই৷ শুধু সমস্যা হল গোমতী নদীর নাব্যতা নিয়ে৷ কেন্দ্রীয় সরকার গোমতী নদীর নাব্যতা বাড়ানোর কাজটি করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে৷ তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হউক৷ এই সম্পর্ক যত নিবিড় হবে ততই দুই রাষ্ট্রের পক্ষে মঙ্গলদায়ক৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে ইতিবাচক ও সদর্থক ভূমিকা নেবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন৷
2016-01-07

