ভূমিকম্পের বিপদ

scaleউত্তর পূর্বাঞ্চল বিশেষ করিয়া ত্রিপুরা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসাবে খুব স্পর্শকাতর অবস্থায় রহিয়াছে বলিয়া সরকারী সুত্রে বলা হইয়াছে৷ সোমবার ভোরে গোটা উত্তরপূর্বাঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গের বহু এলাকা এবং বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পন দেখা দেয়৷ স্মরণকালের মধ্যে এতবড় ভূকম্পের ঘটনা এই অঞ্চলের মানুষ অবগত হন নাই৷ সম্ভবত, এই অঞ্চলে এই প্রথম বড় ধরনের ঝাকুনি দিয়া গেল ভূমিকম্প৷ মণিপুরে এই কম্পনের উৎপত্তি স্থল হিসাবে চিহ্ণিত হইয়াছে৷ ব্যাপক ক্ষতি হইয়াছে মণিপুর, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের কিয়দংশ বাংলাদেশে ভূমিকম্পনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটিয়াছে৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি যেকোনও সময় ভয়াল ভূমিকম্পে তছনছ হইয়া যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হওয়া সত্বেও কোনও রকম সতর্কতা লক্ষ্য করা যাইতেছে না৷ ভূমিকম্পের সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের যথেষ্ট পরিচিতি আছে৷ যুগ যুগ ধরিয়া এই কম্পনের ঘটনা দেখিয়া আসিতেছে মানুষ৷ সুতরাং তাহা অনেকের কাছেই গা সহা অবস্থায় গিয়া পৌঁছাইতেছে৷ এই জায়গায় সাধারণ মানুষ ভুল করিতেছেন৷ বাঘ আসিতেছে বাঘ আসিতেছে রাখাল বালকের সেই ঘটনা বা গল্প যাহাদের জানা আছে তাহারা ভূকম্পনের ঘটনাকে কোনও মতেই খাটো করিয়া দেখিতে পারেন না৷ এই কম্পনে দেশে ও দেশের বাহিরে ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তো আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিয়াছে৷ সাম্প্রতিক কালে ভয়ংকর ভূমিকম্পে নেপালে মারাত্মক ক্ষতির ঘটনা তো গোটা বিশ্বকেই কাঁদাইয়াছে৷
সোমবার ভোরে প্রবল ভূমিকম্পে মণিপুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হইয়াছে৷ বেশ কয়েকজন নিহত ও বহু আহত হইয়াছেন৷ ইহা ছাড়াও আসামে ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটিয়াছে৷ একথা ঠিক, ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল বিপদজনক জোনে অবস্থিত৷ ত্রিপুরা সহ এই অঞ্চলের অন্যরাজ্যগুলি ভূমিকম্পের বিপদ সম্পর্কে তেমন সতর্কতা বা জানার তেমন উদ্যোগও নাই৷ যেমন এই ত্রিপুরায় ভূমিকম্প রোধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হইয়াছে বলিলে তো বিস্ময় সৃষ্টি হইবে৷ মাঝে মাঝে প্রশিক্ষণের বা কর্মশালা করা হয় ভূমিকম্প প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যাইতে পারে৷ কিন্তু, বিস্ময়ের এখানেই যে, এব্যাপারে প্রকৃতই যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর একেবারেই জগন্নাথ৷ এই শহর আগরতলায় অনেক বেআইনী বাড়ী রহিয়াছে৷ যেগুলি পুর নিগমের অনুমতি না নিয়াই বহুতল নির্মাণ করিয়াছে৷ এইসব বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ন্যুনতম নিয়ম নীতি মানা হয় নাই৷ কিছু জরিমানা আদায় করিয়া এইসব বেআইনী বিল্ডিংয়ের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয় নাই৷ এইসব বিল্ডিংগুলি যেকোনও সময় ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ হইয়া উঠিতে পারে৷ জন নিরাপত্তার স্বার্থে এইসব বেআইনী বিল্ডিংগুলির বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থাই দরকার৷ মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ণে এক্ষেত্রে কোনও রকম আপোষ করা যাইতে পারে না৷ রাজনৈতিক ক্ষমতা বা টাকার গরমে একশ্রেণীর বিত্তশালীরা এই শহর আগরতলায় মৃত্যু ফাঁদ তৈরী করিয়া রাখিয়াছে৷ বহু বিল্ডিং জননিরাপত্তার স্বার্থে এখনই ভাঙ্গিয়া ফেলা উচিত৷ কিন্তু এই ব্যাপারে আমাদের কর্তাদের বত্তৃণতাবাজীর কাছে সবই হরাইয়া যাইতেছে৷ কারণ, এই শহর আগরতলায় মাথা উচঁু করিয়া দাঁড়াইয়া আছে সব মৃত্যু ফাঁদ৷ এইসব বেআইনী বহুতল, মৃত্যু ফাঁদগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হইলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্তাদের আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাইতে পারে৷ তাই, সংশ্লিষ্ট সরকারী বা পুর নিগমের কর্তাদের এখনই জরুরী ও কার্য্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত৷ বেআইনী ইমারতের কারণে বহু মানুষের প্রাণহানি হইবার সম্ভাবনা প্রবল৷ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসাবে ত্রিপুরার মানুষকে আগাম সতকর্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হইবে৷ বিপদ কাহাকেও বলিয়া বা আগাম জানান দিয়া আসে না৷ আর ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও পাওয়া যায়না৷ অতর্কিতে এই ভয়ঙ্কর তান্ডব দেখা দেয়৷ কিভাবে মাটির নীচে কাঁপিয়া উঠে সে সম্পর্কে নিরন্তর গবেষণা সত্বেও ভূমিকম্পের হাত হইতে নিসৃকতি পাওয়া মুশকিল৷ সাম্প্রতিক কালে, নেপালে বিভৎস ঘটনা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল গোটা বিশ্বই আসলে গভীর বিপদের মুখে দাঁড়াইয়া আছে৷ এই বিপদ হইতে এই দেশ, রাজ্য ও সভ্যতাকে বাঁচাইতে হইলে, এই বিশ্বকে রক্ষা করিতে হইলে ভূমিকম্প নিরোধক সমস্ত রকম সতর্কতা নিতেই হইবে৷ তাহা না হইলে রুদ্র তান্ডবে সব তছনছ হইয়া যাইতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *