আগরতলা, ৯ জুলাই: দেশের দশটি ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া মিলেছে রাজ্যে, সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই দাবি করলেন সিআইটিইউ রাজ্য সম্পাদক শঙ্কর প্রসাদ দত্ত।
উল্লেখ্য, ৯ই জুলাই দেশব্যাপী দশটি ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এদিন রাজ্যে এই ধর্মঘটের সার্থকতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সিআইটিইউ রাজ্যসম্পাদক শংকর প্রসাদ দত্ত দাবি করেন, শহর থেকে শুরু করে গ্রাম্য জনপদে সব জায়গাতেই এই ধর্মঘটে জনগণ সর্বাত্মকভাবে সাড়া দিয়েছেন।
পরিবহনক্ষেত্র থেকে শুরু করে শিক্ষা, সব অংশেই এদিন রাজ্যে ধর্মঘটের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। তাঁর দাবি, ৮০ শতাংশ যানচালক এই ধর্মঘটে সাড়া দিয়েছেন। এদিন কৈলাসহর, রাধানগর, উদয়পুর সহ বিভিন্ন গাড়ির স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি বের হয়নি। কয়েকটি জায়গায় শাসক দলের রক্তচক্ষুর ফলে গাড়ি বের করা হলেও অর্ধেক রাস্তা থেকে যাত্রী সংকটের ফলে গাড়ির ফেরত এসেছে। বিভিন্ন স্ট্যান্ডে গাড়ি বের করা না হলে সাতদিনের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে যানচালকদের। তাই বাধ্য হয়ে যান চালকেরা গাড়ি রাস্তায় বের করলেও যাত্রী ছিল না বললেই চলে।
তিনি আরো জানেন, নাগেরজলা স্ট্যান্ডে প্রতিদিন সকাল দশটা পর্যন্ত প্রায় ৫৫টি ই- রিকশাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এদিন ধর্মঘটের ফলে সকাল দশটা পর্যন্ত মাত্র ১২ টি ই রিক্সাকে ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব হয়েছে। উদয়পুর থেকে প্রতিদিন সকালে ৮ মিনিট অন্তর অন্তর বাস ছাড়া হয়, সেই জায়গায় এদিন ঘণ্টায় একটি বাস ছেড়েছে তবে সেটিও ছিল প্রায় যাত্রী শুন্য।
এদিকে শিক্ষাক্ষেত্রেও ধর্মঘটের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন সিআইটিইউ নেতৃত্ব। তিনি জানান, এমবিবি ইউনিভার্সিটি গতকালই এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আজ বন্ধের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এদিকে শহরের স্কুলবাসগুলিতেও ছাত্রছাত্রীরা ছিল না। রাজ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যাংকিং কর্মচারীরা এই ধর্মঘটে সাড়া দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন শংকর প্রসাদ দত্ত। তাঁর কথায়, কয়েকটি ব্যাংক খোলা থাকলেও সেগুলিতে কর্মচারীর সংখ্যা ছিল একদমই কম। ইন্সুরেন্স ক্ষেত্রে ৭২ শতাংশ সাড়া মিলেছে ধর্মঘটে। বিএসএনএলের ৮২ শতাংশ কর্মচারী ধর্মঘটে সারা দিয়েছেন।
যদিও বিভিন্ন জায়গায় শাসক দল মাঠে নেমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করার চেষ্টা করেছে বলে দাবি নেতৃত্বদের। তবে শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে গ্রামে শহরে সাধারণ মানুষ এই ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে বলে দাবি তাদের।
এদিকে এদিনের সাধারণ ধর্মঘট সম্পর্কে সংযুক্ত কিষান মোর্চার রাজ্যসম্পাদক পবিত্র কর বলেন, শহরের পাশাপাশি গ্রাম্য জনপদে ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। বিভিন্ন গ্রামীন এলাকা থেকে সকাল সকাল শহর এলাকায় যে শাকসবজি গুলি আসে প্রতিদিন, এগুলি আজ এসে পৌঁছায়নি। কৃষকরা সর্বাত্মকভাবে এই ধর্মঘটে সাড়া দিয়েছেন।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে শাসকদলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রাক্তন মন্ত্রী মানিক দে। তিনি বলেন, গত এক মাস ধরে এই ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে শাসক দল সাধারণ জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করার চেষ্টা করছেন। শাসক দলের তরফে বিভিন্ন জায়গায় ধর্মঘটের বিরুদ্ধে পিকেটিং করা হয়েছে। বিভিন্ন মোটর স্ট্যান্ডগুলোতে চালকদের বাধ্য করা হয়েছে রাস্তায় গাড়ি বের করতে। বাড়িঘর থেকে ডেকে এনে দোকানপাট খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। না হলে দোকানপাট আর খুলতে দেওয়া হবে না, এমনও হুমকি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সাধারণ মানুষ যেভাবে এই ধর্মঘটে সারা দিয়েছেন তা অবিশ্বাস্য বলে জানালেন তিনি।
সব মিলিয়ে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সিআইটিইউ নেতৃত্বদের দাবি, দেশের সাথে সাথে রাজ্যেও এই সাধারণ ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। সাধারণ জনগণ এই ধর্মঘটে সর্বাত্মকভাবে সাড়া দিয়েছেন। তাই রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতৃত্বগন।

